শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

দেশে আইন ও সুশাসনের পরিস্থিতি প্রকট হচ্ছে, সার্বিকভাবে জনগণ একটা নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে : জিএম কাদের

  |   বুধবার, ২৫ জুন ২০১৪ | প্রিন্ট

দেশে আইন ও সুশাসনের পরিস্থিতি প্রকট হচ্ছে, সার্বিকভাবে জনগণ একটা নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে : জিএম কাদের

kader

ঢাকা, ২৪ জুন ২০১৪ ( স্বাধীনদেশ )  : ক্ষমতাসীন দল ও জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কড়া সমালোচনা করে দুই দলকেই তুলোধুনো করলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদের। পার্টির চেয়ারম্যান ও কাদেরের বড়ভাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপস্থিতিতেই তিনি তার ক্ষোভের মহাবিস্ফোরণ ঘটান। এসময় সরকারের বৈধতা ও বিরোদী দলের সাংবিধানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। যেন ‘আগ্নেয়গিরি জ্বালামুখ’ খুলে গেছে। জিএম কাদেরের এমন অস্বস্তিকর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে শেষমেষ মঞ্চ থেকে উঠে যান পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

বুধবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে মৎসজীবী পার্টির প্রতিনিধি সম্মেলন চলাকালে বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে জিএম কাদেরের নাম ঘোষণা করা হয়ে। তার নাম ঘোষণার পর তিনি বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি ‘গোস্যা’ করে এরশাদের বামদিকে চুপ করে বসে থাকেন। তখন পার্টির মহাসচিবের জোর অনুরোধে কাদের তার বক্তব্য শুরু করেন। এ সময়ের মধ্যে কর্মীরা জিএম কাদের বক্তব্য দেয়ার দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন। পরে তিনি বক্তব্য দেন।

জিএম কাদের তার বক্তব্যের প্রথমেই সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে কিন্তু সরকারও স্বস্তিতে নেই। আসলে তারা কিভাবে ক্ষমতায় এসেছে এবং তাদের আইনগত কতটুকু ভিত্তি আছে তা তারাও জানে। তারা জনগণের ক্ষমতায় বলিয়ান নয় বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ অস্বস্তিতে আছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যেখানে কিছু নিয়ন্ত্রণে থাকে না সেখানকার পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলা যায় না। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে যেকোনো সময়ে হামলা সংঘাত সৃষ্টি হয় কিনা তা নিয়ে জনগণ একটা ভীতির মধ্যে সময় কাটাচ্ছে। সব সময় শঙ্কিত আছে।’

দেশে আইন ও সুশাসনের পরিস্থিতি প্রকট হচ্ছে মন্তব্য সাবেক মহাজোট সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন কে দিন অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে জনগণ একটা নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। সে কারণে জনগণও খুব স্বস্তিতে নেই।’ দেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থার কথা তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের এই পরিস্থিতিতে আমাদের অর্থনীতির ওপর একটা বড় আঘাত আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এবং আঘাত আসছে। কিন্তু যে যত কথাই বলুক না কেন আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি দেশে বিনিয়োগ স্তিমিত হয়ে গেছে। দেশের ব্যবসায়ীরা দেশে কোনো বিনিয়োগ করছেন না বরং দেশের টাকা তারা বিদেশে পাঠাচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হতে আমরা জানতে পারছি।’

তিনি বলেন, ‘যারা দেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তারাও আসছেন না। বিদেশী কোনো বিনিয়োগ আসছে না। এ পরিস্থিতিতে দেশ একটি সংঘাতময় অযোগ্য দেশে পরিণত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে আমরা সকলে শঙ্কিত।’  ১৯ দলকে সরকার কোণঠাসা করে রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ রকম সংঘাতময় বিপদসঙ্কুল দেশে যেখানে জনসংখ্যা বেশি যেখানকার মানুষের ভেতরে জনসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদের অভাব আছে সেখানে সমস্যা থাকবেই এবং সরকার বিরোধী মনোভাব থাকবেই। সরকার বিরোধী মনোভাবগুলোকে ধারণ করার জন্য কোনো রাজনৈতিক শক্তি থাকতেই হবে এবং মানুষই তা সৃষ্টি করবে।

কাদের বলেন, ‘আশঙ্কার বিষয় হলো, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কোনো অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতা দখল করবে নয়তো দেশে তখন জঙ্গিবাদ এবং চরমপন্থিদের উত্থান হতে পারে।’  বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে আপত্তি করে জিএম কাদের বলেন, ‘বিরোধী দল হতে হলে সত্যিকার অর্থে বিরোধী দল হতে হবে। বিরোধী দল হতে হলে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হবে। রেজিস্টার্ড বা গেজেটেড এমন হওয়া যাবে না। একই সঙ্গে সরকারি দল ও বিরোধী দলে থাকাটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে গেজেট প্রকাশের পর এ অবস্থা মেনে নিতে এরশাদ সাহেব সম্মত হয়েছেন। একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধীদলে থাকা অসাংবিধানিক। এটা অবাস্তব। কারণ, স্বামী-স্ত্রী নিয়ে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ পরিবার, কেউ যদি নিজেই দাবি করে সে নিজেই স্বামী নিজেই স্ত্রী তবে সেটি একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবার হলো না। কেউ যদি বলে আমি উরুগুয়ের স্ট্রাইকার এবং একই সঙ্গে ইতালির গোলকিপার এভাবে তো খেলা হতে পারে না। এক খেলোয়াড়ের দুই দলের হয়ে খেলার সুযোগ নেই।’

তবে কাউকে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বলেননি তিনি। মঞ্চের ডানদিকে বসে থাকা মহাসচিব এসময় উঠে দাঁড়ান। তিনি বলে ওঠেন, ‘এইটা কোনো বক্তব্য হলো? এর পর তিনি চলে যান। এসময় তাকে মঞ্চে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করেন পার্টির যুগ্ম মহাসচিব নুরুল ইসলাম নুরুসহ অনেকে। কিন্তু তিনি চলেই গেলেন। তিনি উঠে যাওয়ার সময় তাকে উদ্দেশ করে জিএম কাদের বলেন, ‘আমি জানি আমার এ কথাগুলো অনেকেরই ভালো লাগবে না। তাই কথা বলতে চাইনি।’ এরপরও তিনি তার বক্তব্য চালিয়ে যান। তার পরেই বক্তব্য দেন এরশাদ। তবে এরশাদ এরকম পরিস্থিতিতে আর বেশি সময় বক্তব্য দেননি। তিনি মাত্র একমিনিটের একটি বক্তব্য দিয়েই কোনোমতে শেষ করেন তার বক্তব্য।

সম্মেলনে বক্তব্য দেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শুনীল শুভ রায়, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা, যুগ্ম মহাসচিব ও যুব সংহতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া প্রমুখ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৫৪ | বুধবার, ২৫ জুন ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com