![Swadhindesh -স্বাধীনদেশ](http://www.swadhindesh.com/wp-content/uploads/2022/11/main_logo.png)
| বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন পরিকল্পনার কারণে শিগগির তিস্তার ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশের পাওয়ার আশা নেই বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’।
টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে-একদিক থেকে খসড়া তিস্তা চুক্তি অনুযায়ী তিস্তা নদীর পানি সমহারে বণ্টনের ঘোরতর বিরোধী পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তার উপর তিস্তার কল্যাণে ভারত বর্তমানে যতটুকু পানি পাচ্ছে তার চাইতে আরো বেশি পানি নিজেদের দিকে টেনে নিতে চান পশ্চিমবঙ্গ মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিস্তার পানি নিজেদের কৃষি জমিতে সেচের কাজে ব্যবহার করার দোহাই দিয়ে তিস্তার ন্যূনতম অংশও বাংলাদেশের বরাদ্দে ফেলতে আগ্রহী নন মমতা।
উত্তরাঞ্চলের কৃষিজমিতে পানি সরবরাহ করার জন্য তিস্তার প্রবাহ ঘুরিয়ে দেওয়ার যে পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গ সরকার করছে, তাতে বাংলাদেশে তিস্তার পানির প্রবাহ কমে যাবে অন্তত ১০ শতাংশ।
গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ কমিটির একটি বৈঠকের জন্য বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলের প্রধান সাজ্জাদ হোসেন ‘তিস্তার পানি বণ্টনসংক্রান্ত চুক্তি এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় দেশটি বিবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে’ মন্তব্য করেছেন। তিনি টাইমস্ অব ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর ও এর আশপাশের অঞ্চলগুলোর মধ্য দিয়ে যে দিক দিয়ে তিস্তা বয়ে গেছে সেসব অঞ্চল থেকে শুরু করে যমুনা নদীর সঙ্গে তিস্তার মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সবগুলো এলাকার কৃষক এবং জেলেরা ভয়ানক দুর্বিষহ ও অসহায় জীবনযাপন করছেন। পানি সমস্যার কারণে সেখানকার জনপদ প্রায় স্থবির হয়ে আছে।
তিনি বলেন, তিস্তার মাধ্যমে আমাদের পানি পাওয়ার কথা পাঁচ হাজার কিউসেক, কিন্তু আমরা পাচ্ছি মাত্র পাঁচশ’ কিউসেক। এর কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ফসল নষ্ট হওয়ার মাধ্যমে যে শুধু কৃষকেরা পথে বসছেন তাই নয়, আমাদের জেলেরাও নিজেদের ন্যূনতম জীবিকা অর্জন করতেও ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কারণে তারা অঞ্চলটিতে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের দোষারোপ করছেন। বিক্ষুব্ধ কৃষকরা তাদের অঞ্চলের প্রশাসনকে পুরোপুরি অকেজো করে রেখেছেন।
কিন্তু এই বক্তব্যের বিরোধীতা করে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় বলেন, আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতা আছে। আমাদের নিজস্ব কৃষি চাহিদা মেটানোর জন্য তিস্তার পানি যথেষ্ট নয়। আমরা আমাদের উত্তরাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন আরো বাড়াতে চাই। এর জন্য লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে অঞ্চলটির অন্তত দেড় লাখ একর কৃষিজমি আমরা এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসবো। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেট পরিকল্পনার সময় আমরা শুধু এই খাতেই বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই তিস্তা থেকে আমাদের আরো অনেক বেশি পানির প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে নিজেদের প্রয়োজন মেটানো বাদ দিয়ে আমরা বাংলাদেশের জন্য বেশি পানি কিভাবে বরাদ্দ করবো? এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গ এখন যা পানি পাচ্ছে তার থেকেও কম পানি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমহারে পানি বণ্টনের চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোরতর বিরোধী আমরা। আমাদের কৃষকদের দুর্ভোগের মুখে ছেড়ে দিতে পারি না আমরা।
সাজ্জাদ হোসেন জানান, পানিবণ্টন চুক্তি ছাড়া তিস্তা থেকে সমহারে পানি পাওয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী নিচু অঞ্চলের নদী তীরবর্তী দেশগুলোরও পানি পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং দেশটির পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিম্ন তীরবর্তী দেশগুলোর সমহারে পানি পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদাহরণ টানলে অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে গঙ্গা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ প্রবাহমান সবগুলো নদী থেকে ভারতের মতোই সমান হারে পানি বাংলাদেশের প্রাপ্য।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়ে যায়। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ইতিমধ্যে যে খসড়া চুক্তিটি হয়েছিল বাংলাদেশ তা নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল। কিন্তু চুক্তির ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এখন যে পরিমাণ পানি নেয় তার কম পানি পাওয়ার আশংকায় চুক্তি স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায়।
গত মঙ্গলবারের বৈঠকে গঙ্গা নদীর ফারাক্কা বাঁধ এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের আগে ও পরে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত পানির কতটা বাংলাদেশের ভাগ্যে জুটেছে সে সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়।
ভারতীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান এবং ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক সৌমিত্র কুমার হালদার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, চলতি বছর গঙ্গায় পানির প্রবাহ ভালো ছিল বলে বাংলাদেশ যা পানি পেয়েছে তা নিয়ে তাদের কোনো সমস্যাই ছিল না।
কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে গঙ্গা চুক্তি সংশোধন করা প্রয়োজন মন্তব্য করে বাংলাদেশের পক্ষে সাজ্জাদ হোসেন জানান, বছরের মার্চ মাস থেকে মে পাস পর্যন্ত যে খরা মৌসুম চলে তখন বাংলাদেশের জন্য গঙ্গার পানির যোগান থাকে না বললেই চলে। তাই এই সময়টাতে পানিবণ্টন কীরকম হবে তা নিয়ে দুই দেশের আলোচনায় বসা প্রয়োজন।
হোসেন আরো জানান, ভারত ও নেপালের যৌথ প্রকল্প নেপালের সপ্তকোষী বাঁধের সঙ্গে যুক্ত হতে চায় বাংলাদেশ। কারণ আইন অনুসরণ করে ওই বাঁধের অধীনের গঙ্গার পানির স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত করে দেয়া হলে বাঁধটিতে যে পরিমাণ পানি মজুদ হয় তার কিছুটা খরা মৌসুমগুলোতে বাংলাদেশ পাবে, আর এতে লাভবান হবে তিন দেশই।
Posted ১৩:২০ | বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin