| মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
দ্বিতীয় দফা অবরোধ কর্মসূচির চতুর্থ দিনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে সারাদেশে ১০ জন নিহত, তিন শতাধিক লোক আহত ও দুই শতাধিক লোককে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ থেকে মোঃ ইব্রাহিম সাক্ষরিত একটি বৃবিতে প্রদান করা হয়েছে । স্বাধীনদেশ পাঠকদের জন্য হুবহুব তুলে ধরা হল :
বিবৃতি
দ্বিতীয় দফা অবরোধ কর্মসূচির চতুর্থ দিনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে সারাদেশে ১০ জন নিহত, তিন শতাধিক লোক আহত ও দুই শতাধিক লোককে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ৫ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালন অব্যাহত রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ৩ ডিসেম্বর-১৩ নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন
“গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার ও জনগণের ভোটের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিরোধী দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। দেশের মুক্তিকামী জনতা বিরোধী দলের এই কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করছে। সরকারের জুলুম-নির্যাতনের মুখে জনগণ দেশের প্রতিটি প্রান্তরে ঐক্যবদ্ধভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণ দেখে সরকার দিশেহারা হয়ে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা গুলি বর্ষণ করে হত্যা, গ্রেফতার, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। আজ সরকারী দলের সন্ত্রাসী ও পুলিশেল গুলিতে চট্টগ্রামে ২ জন, নোয়াখালীতে ১জন, চাঁদপুরে ২ জন, সাতক্ষীরায় ২ জন, সিরাজগঞ্জে ২ জন ও চাপাইনবাবগঞ্জে ১ জনসহ মোট ১০ জন নিহত হয়। আহত হয় তিন শতাধিক। গ্রেফতার করা হয়েছে দুই শতাধিক লোককে। সরকার সাতক্ষীরায় আজ যে সন্ত্রাসী তান্ডব চালিয়েছে তার নিন্দা জ্ঞাপনের ভাষা আমার জানা নাই। খুলনা ও যশোর থেকে শতশত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সাতক্ষীরায় গিয়ে ব্যাপক অভিযান চালায়। তারা গুলি করতে করতে জনপদে প্রবেশ করে। গুলিতে বিপুল সংখ্যক লোক আহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে শিবির কর্মী হোসেন আলী শাহাদাৎ বরণ করেন। রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এ বেপরোয়া গুলি বর্ষণে গোটা জাতি বিস্মিত। পুলিশের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা লক্ষ্য করছি, পুলিশ পেশাদারিত্বের সাথে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরাসরি জনগণের উপর গুলি চালাচ্ছে। আমরা গুলি বর্ষণ বন্ধ করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখছি যে, আপনার কার বুকে গুলি চালাচ্ছেন?
আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরা যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে তা বিরোধী দলের উপর চাপানোর ষড়যন্ত্র করছে। যুবলীগের সন্ত্রাসীরা সোমবার ফেনী জেলায় সেনাবাহিনীর গাড়ি বহরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনগণ যুবলীগ কর্মী জাহাঙ্গীর আলমকে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে। এই ঘটনায় প্রমাণিত হয় সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও গাড়ীতে হামলা করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
এক দলীয় প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে দেশের সর্বত্র গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আজ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছে। জনগণের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।
সরকার জনগণের দাবী উপেক্ষা করে, সংবিধানকে পদদলিত করে জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়। সরকারের অপরিণামদর্শী ভূমিকার কারণে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা ও সম্ভাবনাময় গার্মেন্টস খাতে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর হঠকারিতার কারণে গোটা দেশ আজ বিপর্যস্ত। জাতি সংঘ, দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ একগুয়েমী পরিহার করে সমঝোতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহবান জানানো সত্ত্বেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত করছে না। সরকার জেল-জুলুম ও গুলি করে মানুষ হত্যা করে আন্দোলন দমন করার হিং¯্র, অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পথ অবলম্বন করেছে।
বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। বিগত পাঁচ বছর যাবৎ দেশের মানুষ নির্যাতিত-নিপীড়িত হচ্ছে। নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর কেউ সরকারের জুলুম থেকে রেহাই পায়নি, এখনো পাচ্ছে না। জনগণ জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংবিধান স্বীকৃত পন্থায় আন্দোলনে নেমেছে। এ আন্দোলন অবশ্যই সফল হবে ইনশাআল্লাহ।
আমি সরকারের উদ্দেশ্যে বলছি, এখনও সময় আছে, সংঘাত, সংঘর্ষ, জুলুমের পথ পরিহার করে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল করে পদত্যাগ করে দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন। দেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান, দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করুন। গণতান্ত্রিক ধারা নিশ্চিত করুন। অন্যথায় জনগণের আন্দোলনের গণজোয়ারে আপনার স্বৈরাচারী সরকার ভেসে যাবে। গণহত্যা, গণনির্যাতন ও জুলুম-নিপীড়নের কারণে আপনাকে একদিন জনতার আদালতে দাঁড়াতে হবে।
আমি সরকারের উস্কানি সত্ত্বেও চরম ধৈর্যের সাথে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ১৮ দলীয় জোট কর্তৃক ঘোষিত দেশব্যাপী সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি আগামী ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত অব্যাহত রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।”
মোঃ ইব্রাহিম
কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
Posted ১৫:৫৯ | মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin