শুক্রবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা রাজনৈতিক দল গঠন করায় সংশয় দেখা দিয়েছে : মির্জা ফখরুল ইসলাম

ডেস্ক রিপোর্ট   |   শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট

অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা রাজনৈতিক দল গঠন করায় সংশয় দেখা দিয়েছে : মির্জা ফখরুল ইসলাম

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে, সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা রাজনৈতিক দল গঠন করায় সংশয় দেখা দিয়েছে।

পাঠকদের সুবিধার্থে নিচে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হল ;

 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-এর
সংবাদ সম্মেলন
স্থানঃ বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়, গুলশান
তারিখঃ ২২ মার্চ ২০২৫; বেলা ১১.০০ ঘটিকা

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম।
দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ফ্যাসীবাদ বিরোধী রক্তঝরা আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ এর জুলাই-আগষ্টের অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসীবাদমুক্ত হয়। গণ-অভ্যূত্থানের আকাংখা অনুযায়ী, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার ভিত্তিক এবং বৈষম্যহীন একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য দেশের জনগণ অপেক্ষমান।

ফ্যাসিবাদ উত্তর রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে নানা প্রস্তাব আর মতামত উঠে এসছে সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের মাধ্যমে, যার মূল ভিত্তিটা রচনা করেছে বিএনপি ৩১ দফা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যূত্থানের অনেক আগে ২০২৩ সালের ১৩ই জুলাই। এক্ষনে গণতান্ত্রিক শক্তি সমূহের অন্তর্ভূক্তিমূলক বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব সমূহ গৃহীত এবং বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সংস্কার প্রস্তাব গুলোর সাংবিধানিক ও আইনী ভিত্তি প্রদানের জন্য একটি নির্বাচিত সংসদই কেবল উপযুক্ত ফোরাম। বিদ্যমান ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য এই দেশ এবং দেশের মানুষের মূল চালিকা শক্তি। এই ঐক্যকে অক্ষুন্ন রেখে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। এই ঐক্যের চর্চাকে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত করতে হবে। আমরা এমন কোন পদক্ষেপ নিতে পারি না যাতে করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য এবং গণঐক্য বিনষ্ট হয় অথবা ফাটল ধরে। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখতে হবে। কোন মহলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো, জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান এবং জবাবদিহিতা ও আইনের শাসনের নিশ্চয়তা বিধান করা। সর্বোপরি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত করা।
সংস্কার আগে- নির্বাচন পরে, কিংবা নির্বাচন আগে- সংস্কার পরে এ ধরনের অনাবাশ্যক বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সাথে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি ঈযধৎঃবৎ ড়ভ জবভড়ৎসং (সংস্কার সনদ) তৈরী হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে যা বাস্তবায়ন করবে।
এমতাবস্থায় এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূলত করণীয় হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রæত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করা। নির্বাচিত সরকার জনগণের কাংখিত ঐক্যমত্যের সংস্কার সমূহ সম্পন্ন করবে। কেননা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ এবং ন্যায় বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য সংস্কার সম্পাদন সম্ভব ।
অন্তর্বর্তী সরকারের কোন কোন উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ / পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ও প্রমান ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়।

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রেরীত স্প্রেডশীট এ যে অপশন / পছন্দগুলোর ঘরে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে যে, যে বিষয়গুলো প্রস্তবাকারে আসতে পারতো তা প্রস্তাব না রেখে খবধফরহম ছঁবংঃরড়হ এর আকারে হ্যাঁ, না, উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যেমন, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কি না? হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কিনা? একইভাবে ‘গণভোট’, ‘গণপরিষদ এবং আইন সভা’ হিসাবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কিনা ইত্যাদি হ্যাঁ – না বলুন।
সংবিধানের ‘প্রস্তাবনার’ (চৎবধসনষব)মত অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও তা স্প্রেডশীটে উল্লেখ করা হয় নি। স্প্রেডশীটে ৭০টির মত প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ সংখ্যা প্রায় ১২৩টির মত।

একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মত সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশীটে মাত্র ২৭টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংস্কারের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই আমরা মনে করছি- স্প্রেডশীটের সাথে মূল সুপারিশমালার উপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের স্প্রেডশীটের অবস্থা এবং কমিশন সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায় যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে যে, সকল বিষয়গুলো যেন একটি পূর্ব নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনার অংশ যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কিনা বলা মুশকিল।
সুপারিশমালা সমূহ পর্যালোচনায় প্রতিয়মান হয় যে, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে যা অনভিপ্রেত।

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
সুপারিশমালায় সাংবিধানিক কমিশনসহ (এনসিসি) নতুন নতুন বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সমস্ত কমিশনের এখতিয়ার, কর্মকান্ডের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে মনে করার যথেষ্ট কারন রয়েছে যে, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে যতটা সম্ভব টহফবৎসরহরহম করা এবং ক্ষমতাহীন করাই উদ্দেশ্য, যার ফলশ্রæতিতে একটি দুর্বল ও প্রায় অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, জনগণের মালিকানার প্রতিফলন হয় নির্বাচিত সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সমূহ পর্যালোচনা করলে প্রতিয়মান হয় যে, রাজনীতিবিদরা অপাংতেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করাই শ্রেয়।
জনগণের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি ও ধর্মবোধ এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েই বিভিন্ন সংস্কার ও সাংবিধানিক সংশোধনী প্রণীত হওয়া বাঞ্ছনিয়।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে সমুন্নত রেখে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসীবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যূত্থানের শহীদদের স্বপ্ন ও আকাংখা অনুযায়ী একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই বর্তমান সময়ের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বৃহত্তর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সকল সংস্কার প্রচেষ্টা পরিচালিত হবে – এটাই জাতীয় প্রত্যাশা।

আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
আল্লাহ হাফেজ; বাংলাদেশ জিন্দাবাদ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৫:৫১ | শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(917 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com