
| শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০ | প্রিন্ট
মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মাসুম :
একাদশ জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনে এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন।
আজ শনিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলনসহ নবনির্বাচিত ৩ এমপিকে শপথবাক্য পাঠ করান। গত ২১ মার্চ এ ৩টি আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বাগেরহাট-৪ ও গাইবান্ধা-৩ আসনের উপ-নির্বাচন হয় ব্যালোটের মাধ্যমে। অন্যদিকে, ঢাকা-১০ আসনে ভোট হয় ইভিএমে । স্বল্প পরিসরে শপথ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান।
বাগেরহাট-৪ আসনে নবর্বিচিত সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন বাগেরহাট জেলার ঐতিহ্যবাহী মোল্লা পরিবারের সন্তান। তিনি ১৯৫৩ সালে ২২ জানুয়ারি মোরেলগঞ্জ সদর বারইখালী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭২ সালে মোরেলগঞ্জ এসএম কলেজে ছাত্রাবস্থায় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতে খড়ি দেন। এর পর কলেজের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে। ১৯৭৯-১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি কাদের-মজনু কমিটির সদস্য হন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতির দায়িত্ব পাবার পরপরই তিনি সামরিক সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তৎকালীন সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হিসেবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৪ সালে এরশাদের সামরিক আদালতে মিথ্যা মামলায় এবং ১৯৮৮ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেন। তখন সামরিক আদালতে একটি হত্যার মিথ্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। পরে আন্দোলনের মুখে বাতিল হয় ওই দন্ডাদেশ।
পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন ফিরেন নিজ এলাকা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে। আইন পেশার পাশাপাশি চালিয়ে যান রাজনীতি। ৯০ দশকের শুরু থেকে সুদীর্ঘ ১৫ বছর তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২০০৩ সাল থেকে অদ্যবদি সভাপতি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্থানীয় রাজনীতির এ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বহুবার হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের শিকার হন এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন।
আশির দশকের ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে তৎকালীন ছাত্রনেতাদের মধ্যে যে কয়জন আজও রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় অবদান রাখছেন তাদের মধ্যে এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন অন্যতম।
উপজেলা পর্যায়ের এ নেতার চার দশকের রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রথম স্বীকৃতি ঘটে ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক জীবন বীমা কর্পোরেশনের ডাইরেক্টর হিসেবে নিযুক্তি। পরবর্তীতে সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি ঘটে ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে স্থান পাওয়া। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পাবার পর তিনি বাগেরহাট-৪ মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করাসহ অর্পিত কেন্দ্রীয় দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করে জননেত্রীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হন।
গত ২৪ নভেম্বর -২০১৯ মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে তৃণমূলের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি আবারও উপজেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান।
গত ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল পরবর্তী গঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে আবারও সদস্য হিসেবে স্থান পান এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন।
সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভার সিন্ধান্তক্রমে বাগেরহাট-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে সক্ষম হন এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন।
উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেনের মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য হয়।
করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই গত ২১ মার্চ বাগেরহাট-৪ (শোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)সহ জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৩ ও ঢাকা-১০ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বাগেরহাট-৪ আসনের জনগণ করোনা ভাইরাস আতঙ্ককে উপেক্ষা করে সতস্ফুর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রয়োগ করলে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন তৃণমূল থেকে উঠে আসা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা এ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন ।
গত ২১ মার্চ এ ৩টি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পরপরই এই তিনজন সদস্যের নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশিত হয়। তবে করোনাভাইরাস সংকটের কারণে তারা সময়মতো শপথ নিতে পারেননি। ফলে সংবিধানের দ্বিতীয় অপশন হিসেবে তারা শপথ নিলেন।
প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে প্রার্থীদের শপথ নিতে হয়। তবে ওই সময় শপথ নিতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। নতুন এ তিন এমপি শপথ নিয়ে আজই অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন।
Posted ২৩:১১ | শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Rafiq Masum