শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

৮ মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে অটো চালান বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট

৮ মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে অটো চালান বাবা
ছবি: আনন্দবাজার

 

তিনিই মা। তিনিই বাবা। একরত্তি সন্তানের জন্য সব দায়িত্বই পালন করে চলেছেন তিনি। এই কাহিনি অসহায় বাবার কমলেশ বর্মার।

 

ভারতের উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় একটি ঘুপচি ঘরে থাকেন ৩২ বছরের কমলেশ। তার পরিবার বলতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা এবং ৮ মাসের এক কন্যাসন্তান সরস্বতী। সন্তান জন্মের কয়েক মাস পরেই কমলেশের স্ত্রী অন্তিম মারা যান। তারপর থেকে মা, আট মাসের দুধের শিশু আর একমাত্র রোজগারের সঙ্গী অটোই তার জগৎ।

কমলেশরা চার ভাই। তার মধ্যে দু’জনের আগেই মৃত্যু হয়েছে। দুই ভাই আলাদা থাকেন। পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা আর সন্তানকে নিয়ে ঘুপচি ঘরে থাকেন কমলেশ। স্ত্রী অন্তিমের মৃত্যুর পর থেকে সন্তানের দেখাশোনার পুরো দায়িত্বই এখন তার। সন্তানের দেখাশোনা করা, শয্যাশায়ী মায়ের সেবা করা, অটো চালানো, সবই একা হাতে সামলান কমলেশ।

 

দৈনিক ভাস্করকে কমলেশ বলেন, ‘৩ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল আমার। সে সময় একটি কারখানায় কাজ করতাম। মাসে ৮-১০ হাজার রুপি উপার্জন হত। তাতে ভালোভাবে সংসার চলে যেত। আট মাস আগে আমাদের কোল আলো করে সরস্বতী আসে। স্ত্রী আর আমি খুব আনন্দে দিন কাটাচ্ছিলাম। কন্যাসন্তান হওয়ায় অনেকেই আমাদের দু’জনকে নানা কটু কথা শুনিয়েছিল। কিন্তু আমরা তাতে খুব একটা পাত্তা দিতাম না। মেয়েকে নিয়েই আমাদের সময় কেটে যেত।

 

কমলেশ জানান, তিনি স্থির করে নিয়েছিলেন যে কারখানার কাজ ছেড়ে আরও বেশি টাকা উপার্জনের পথ খুঁজবেন। স্ত্রীও তাতে সায় দিয়েছিলেন। সব কিছু ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল। কিন্তু তার মধ্যেই আচমকা স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপরই তার মৃত্যু হয়। কমলেশের কথায়, ‘স্ত্রী মারা যাওয়ায় খুব ভেঙে পড়েছিলাম। মেয়েটার জন্য খুব চিন্তা হত। কী ভাবে ওকে মানুষ করব। ওই একরত্তি দুধের শিশুটি জানতেও পারেনি তার মা আর নেই। অগত্যা কোনও পথ খুঁজে না পেয়ে মেয়ের দেখাশোনার দায়িত্ব নিজেই নিলাম। বৌদিদের বলেছিলাম সরস্বতীকে দেখাশোনার জন্য। কিন্তু ওরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।

 

কীভাবে মেয়েকে মানুষ করবেন তা ভেবেই দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন কমলেশ। তার কথায়, ‘বুঝতে পারছিলাম না কী করব, কোথা থেকে শুরু করব। সন্তানকে দেখাশোনা করতে গিয়ে চাকরিটাও চলে গিয়েছিল। ফলে আরও সমস্যায় পড়েছিলাম। কিন্তু মেয়েকে তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে! টাকাপয়সা যা ছিল সবই খরচ হয়ে গিয়েছিল। একটা সময় ধার করে মেয়ের জন্য দুধ কিনতে হয়েছে।

 

কমলেশের এই পরিস্থিতি দেখে তার শ্যালক সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। তিনি কমলেশকে একটি অটো কিনে দেন। এক বন্ধুর সাহায্যে অটো চালানো শেখেন কমলেশ। এখন সেই অটোই তার উপার্জনের একমাত্র উপায়। কমলেশের রোজ রুটিন হল, ভোরে ওঠা। রান্না করা। তার পর মায়ের সেবা করা। মাকে খাইয়ে, সব ব্যবস্থা করে, মেয়ের জন্য খাবারের আয়োজন করা। মেয়েকে খাইয়ে তাকে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে পড়েন যাত্রী খুঁজতে।

 

মেয়েকে কোলের সঙ্গে বেঁধে নেন কমলেশ। এভাবেই ৫০ কিলোমিটার অটো চালান। দিনে ৮০০-১০০০ রুপি আয় হয় কমলেশের। এভাবেই একাধারে তিনি ছোট্ট সরস্বতীর মা এবং বাবার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। কমলেশ বলেন, ‘যখন কোনও যাত্রী পাই না, তখন অটোতে বসেই মেয়ের সঙ্গে খেলি, সময় কাটাই।’

সূত্র: আনন্দবাজার

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:৪০ | শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com