রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিম্নমানের কাজে ধ্বসে গেলো সীমানা প্রাচির’ নিহত-৩’ গ্যালারি ধ্বসের আশংকা!

  |   মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০১৪ | প্রিন্ট

Sylhet_Divisional_Stadium

বিশেষ প্রতিনিধিঃ অতিমাত্রায় সিলেট প্রীতিই কাল হলো সিলেটবাসীর। ভেন্যুর স্বার্থে তাড়াহুড়ো আর নিম্নমানের কাজগুলো না দেখার ভান করেছেন সিলেটের সচেতন মানুষজন। আর সেই সাথে সিলেটের সাংবাদিকরাও ছিলেন নিরব। তারাও এই নিম্নমানের কাজ নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ করেনি। ফলে নিম্নমানের কাজ দিয়ে নির্মিত এই স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন হয়েছে যথাসময়ে। স্বীকৃতিও মিলেছে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। কিন্তু মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতেই ধ্বসে গেছে স্টেডিয়ামের সীমানা প্রাচীর। প্রাণ গেছে ৩ চা শ্রমিকের। দৃষ্টিনন্দন গ্রীণ গ্যালারি কিংবা স্টেডিয়ামের মূল গ্যালারি ধ্বসে যাওয়ারও আশংকাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সোমবার দিবাগত রাতে বৃষ্টির মধ্যে রাত ৩টার দিকে স্টেডিয়ামের সীমানা প্রাাচীর ধসে পাদদেশে থাকা চা শ্রমিক আজান আলীর ঘরে পড়ে যায়। এতে দেয়াল চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যায়। আজান আলীর মেয়ে নাসিমা বেগম (১৮), ছেলে জাহেদ আহমদ (১৫) ও আজান আলীর ভাই মৃত কুতুব আলীর ছেলে রুহুল আমিন (১২)। জাহেদ ও রুহুল স্থানীয় একটি মাদরাসার ছাত্র।

আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলার আয়োজন করার দাবি করে আসছিল সিলেটবাসী দির্ঘদিন থেকে। বিগত সরকারের আমলে এই দাবির প্রেক্ষিতে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম এর জন্য জমি নির্বাচন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সে সময়ই স্টেডিয়ামের গ্যালারিসহ বেশ কিছু কাজ করা হয়েছিল। যদিও কাজগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছিল শুরু থেকেই। আর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে অতি অল্প সময়ের মধ্যে স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ শেষ করে আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়াম হিসেবে এর উদ্বোধনের ব্যবস্থা করে। আর এই কাজে সিলেটের ক্রীড়ামোদী মানুষের মন জয় করলেও স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ নিয়ে শুরু থেকে মানুষ অসন্তুষ্ট ছিলেন। তবে ভেন্যুর স্বার্থে কেউ মুখ খুলেন নি। সিলেটের সংবাদকর্মীরাও ছিলেন নিরব। আর এ সুযোগে অর্থমন্ত্রীর প্রিয় ভাজন হিসেবে শফিউল আলম নাদেল তাঁর ইচ্ছেমতো কাজ করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। তিনি ছিলেন এই প্রকল্পের দন্ডমুন্ডের কর্তা।

বর্তমান সরকার বিশ্বকাপের খেলা আয়োজনের জন্য ২০১২ সালের ডিসেম্বরে একনেকে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কাজের জন্য ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু কোন এক রাজনৈতিক লাভলোকসানের হিসেব মাথায় রেখে কার্যাদেশ দিতে বিলম্ব করা হয়। যে কাজটি ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হতে পারতো, তা করা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে।

অনেকে অভিযোগের সঙ্গে জানান, সেসময় বিভাগীয় স্টেডিয়ামের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন বিএনপিপন্থী ইমরান চৌধুরী। তাকে সরিয়ে দিতে বর্তমান শাসকদলের স্বার্থান্বেষী মহল ছিলেন তৎপর। অতঃপর সফলও হলেন। তাকে সরিয়ে এই পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতা ও অর্থমন্ত্রীর কাছের লোক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে। এর পরই ২০১৩ সালের এপ্রিলে উন্নয়ন কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ৭ জুন থেকে শুরু হয় কাজ। তবে ২০১৩ সালের ৮ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেট বিভাগীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও তৎকালীন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার।

শুরুর দিকে আইসিসির একটি প্রতিনিধি দল সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম পরিদর্শনকালে উন্নয়নকাজের ধীরগতি নিয়ে অসন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন। আর এই বিলম্বকে পুষিয়ে নিতে দিনে রাতে নির্মাণ কাজ করা হয়। আর তাড়াহুড়ার কারণে এই নির্মাণ কাজের মান ধরে রাখা যায়নি বলে অনেক স্থপতি ও প্রকৌশলীরা মনে করছেন। এই স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ পেয়েছিল ‘বসতি আর্কিটেক্ট’। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এই স্থপতিদের ডিজাইন ইচ্ছেমত পরিবর্তন করেছেন বলেও এই কোম্পানীর অনেক স্থাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেছেন। শুধু তাই নয়। দৃষ্টি নন্দন গ্রীণ গ্যালারীর ডিজাইনেও পরিবর্তন এনেছেন নাদেল নিজেই।

স্টেডিয়ামে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা বিশিষ্ট গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড নির্মিত হয়। আর ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় গ্যালারি, জায়ান্ট স্ক্রিন, ফ্লাড লাইট, মিডিয়া সেন্টার, স্কোর বোর্ড, সীমানা প্রাচীর, রাস্তা ও ইনডোর জিমনেসিয়াম।

নিজেদের পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ করে নাদেল সীমানা প্রাচীর, রাস্তাসহ অনেক কাজ করিয়েছেন। যা মূল স্থপতির ডিজাইনের বাইরে। দুর্নীতির কারণে পুরনো সীমানা প্রাচীর না ভেঙ্গে তার উপরই দেয়া হয় সিমেন্টের প্রলেপ। আর এই নিম্নমানের কাজের কারনেই অল্প বৃষ্টিতে ধ্বসে গেল স্টেডিয়ামের দেয়াল। আর দেয়াল চাপায় প্রাণ হারালেন স্টেডিয়ামের পার্শ্ববর্তী নিরীহ ৩ চা শ্রমিক।

সিলেট বিভাগীয় ক্রিড়াসংস্থা’র একজন কর্মকর্তা ’নিউজসর্বশেষ২৪ডট কম’কে জানান, আন্তর্জাতিক এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী একজন ভেন্যু ম্যানেজার নিয়োগ দেয়ার কথা। তবে স্থানিয় সরকার দলের শীর্ষ নেতাদের গ্র“পিং আর নিজের পছন্দের লোক নিয়োগ দেয়ার লবিংয়ে’র কারনে এখনো পদটি শূণ্য রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় ক্রিড়া সংস্থার  সাধারণ সম্পাদক ও বিসিবি’র পরিচালক শফিউল আলম নাদেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে চীন সফরে রয়েছেন বলে জানাগেছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:১৫ | মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com