| বৃহস্পতিবার, ০৫ জুলাই ২০১৮ | প্রিন্ট
সশস্ত্র বাহিনীকে সুশৃঙ্খল বাহিনী উল্লেখ করে ‘চেইন অব কমান্ড’ মেনে চলার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, সুশৃঙ্খলভাবে চললে যে কোনো লক্ষ্য অর্জন করা যাবে।
প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট-পিজিআরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে এই নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বনে, ‘ঊর্ধ্বতন যে কর্মকর্তাদের অধীনস্তদের সুযোগ সুবিধা যেমন দেখতে হবে, তেমনি অধীনস্তরা, তারা যেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ মেনে শৃঙ্খলা বজায় রেখে কাজ করবে, সেটাই আমি আশা করি।’
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে পিজিআর। আর তাদের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে সব সময় দোয়া করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘আমি নামাজ পড়ে যখন নিজের ছেলে মেয়ের জন্য দোয়া করি, দেশবাসীর জন্য দোয়া করি, তেমনি আমার আশেপাশে যারা কাজ করে, নিজেদের জীবন দিয়ে আমাকে রক্ষা করতে হয়, তাদের জন্যও আমি সব সময় দোয়া করি আল্লাহর কাছে।’
‘শুধু আল্লাহর কাছে বলি, আমার জীবন গেলেও আমার আশেপাশে যারা তাদের জীবন যেন অক্ষয় থাকে, সে কামনা করি।’
দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী পিজিআরের সুযোগ সুবিধা ও লোকবল বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া নানা চেষ্টা ও উদ্যোগের বিষয় তুলে ধরেন।
‘আমি মনে করি আপনারা একটি পরিবারেরই সদস্য। আপনাদেরকে আমি আমার পরিবার হিসেবেই মনে করি।’
উন্নয়নটা যেন থেমে না যায়
বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে। সেই বিষয়টিও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
‘আমরা বাংলাদেশকে উন্নীত সমৃদ্ধ করে, দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই। ইতিমধ্যে দারিদ্যের হার আমরা ২২ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এই ধারাটা অব্যাহত থাকবে।’
‘মানবসম্পদ আমাদের বড় সম্পদ। এই সম্পদকে কাজে লাগিয়েই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে যাচ্ছি।’
‘আজকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সাথে আমরা উন্নয়ন বরাদ্দটাও বৃদ্ধি করেছি। আমাদের গ্রামে প্রতিটি মানুষ যেন এর সুফলটা পায়, সেই প্রচেষ্টাই আমরা চালাচ্ছি।’
‘আমাদের আয় বৈষম্য দূর হয়েছে। গ্রামে অর্থ সংকুলান হচ্ছে, গ্রামের মানুষেরও ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।’
‘আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। আজকে প্রায় ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, বাকিটুকুও আমরা করে দিতে পারব। শিক্ষদীক্ষা সব দিক থেকেই আমরা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
‘লক্ষ্যটাই আমার ছিল আমার দেশকে উন্নত করতে হবে, জনগণের জীবন মান উন্নত করতে হবে, তাদের সমস্যাটির সমাধান করতে হবে। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, একটি মানুষও অভুক্ত থাকবে না। প্রতিটি মানুষই সুন্দরভাবে বাঁচবে। আর সেই সাথে আমাদের সব শ্রেণি লেখাপড়া শিখে উন্নত হবে। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হবে।’
বাংলাদেশ যে উন্নয়নের পথে আছে, সেটি ধরে রাখার ওপরও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। গুরুত্বারোপ করেন এই অগ্রগতি ধরে রাখার ওপর।
‘আমরা চাই, দেশে যে অর্থনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়েছে, সেটা যেন অব্যাহত থাকে, আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি।’
‘বাংলাদেশে এখন সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাওয়াটা যেন থেমে না যায়, এটা আমরা চাই।’
‘বাংলাদেশের জন্য আমরা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করেছি। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা পালন করব। এই ২০২০ সালের মধ্যেই আমরা ক্ষুধা দারিদ্র্য হ্রাস করতে চাই।
‘উন্নয়নশীল দেশে আমাদের যে উন্নতিটা ঘটেছে, সেটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। সেই সাথে সাথে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হবে, সেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
‘আমি সত্যিই আনন্দিত, আমাদের সকলে, প্রতিটা প্রতিষ্ঠানই নিজ নিজ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশাল অবদান রেখে যাচ্ছে।’
দেশের উন্নয়নে নিজের দর্শন তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যেটুকু কাজ করেছি আন্তরিকতার সাথে, দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ভালোবেসে। কারণ আমার বাবা দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তার একটা স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ হবে। সেই সাথে সাথে বাংলাদেশের মানুষগুলোও একটা মার্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে চলবে।’
পদ্মাসেতুর ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে
এ সময় পদ্মাসেতু প্রকল্প নিয়ে চক্রান্তের বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘একটা চ্যালেঞ্জ এসেছিল। আমার ওপর দোষারোপ করতে চেয়েছিল পদ্মাসেতুর দুর্নীতির কথা বলে।’
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনুসের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমার দেশেরই একজন স্বমানধন্য মানুষ সামান্য ব্যাংকের এমডি পদ বয়সের কারণে হারিয়ে সে প্রতিশোধ নিয়েছিল পদ্মাসেতুর অর্থ বন্ধ করে দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের হয়ে।’
‘এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। এসেছি জনগণের ভাগ্য গড়তে। সেটা প্রমাণ হয়েছে, কোনো দুর্নীতি এখানে হয়নি। আমার সিদ্ধান্ত ছিল নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু করব। যেদিন পারব, সেদিনই করব। সেটা আমরা সফলতার সাথে করতে পারছি। আজকে পদ্মাসেতু দৃশ্যমান।’
‘আর এই একটা সিদ্ধান্তই কিন্তু সারা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে।’
Posted ১৬:১৯ | বৃহস্পতিবার, ০৫ জুলাই ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain