| বুধবার, ০২ মে ২০১৮ | প্রিন্ট
রাস্তায় যাত্রী নাই, এইরমধ্যে পুরা ফাঁকা। এমনে চললে জমার টাকাও তো উঠবো না’ কথাগুলো সদরঘাট ও মিরপুর রুটে চলা তানজিল পরিবহনের কর্মী শহিদুল ইসলামের।
বাস্তবেও তার কথার সত্যতা পাওয়া গেল রাজধানীর রাস্তায়। চিরচেনা যে ঢাকায় সহজে যান মিলে না, সেখানে এখন যানবাহন আছে কিন্তু যাত্রী নেই। রাজধানীর এ চিত্র গত গোটা সপ্তাহ জুড়েই। বৌদ্ধ পূর্ণিমা, মে দিবস ও শবে বরাতের লম্বা ছুটি পেয়ে রাজধানীর অনেকেই গ্রামের বাড়ি কিংবা বেড়াতে গেছেন ঢাকার বাইরে। ফলে রাজধানীর পথঘাট এখন প্রায় সুনশান।
বছরে দুই ঈদের সময়েই রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলো ফাঁকা থাকে। এবার দীর্ঘ ছুটিতে ঈদের মতোই ফাঁকা হয়ে গেছে রাজপথ। জনশূন্য পথঘাটে কম যানবাহনের এমন ঢাকা ঈদ ছাড়া দেখা যায় না। রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলোতে বুধবার থেমে থেমে গণপরিবহনের চলাচলের দেখা মিলেছে। যাত্রী কম, রাস্তা ফাঁকা তাই গন্তব্যে পৌঁছতে সময়ও লাগছে না তেমন।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর অবধি রাজধানীর ফকফকা সড়কগুলো দেখে যে কেউ ভড়কে যেতে পারেন। কারণ এমন চিত্র তো সাধারণত দেখা যায় না। এমনই একজন বাংলামোটর এলাকার ইসরাত শারমিন। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় বেরিয়ে অবাক হয়েছি। যানবাহন নেই, ফাঁকা রাস্তা। আবার অনেকটা ফাঁকা হওয়ায় চলাচলে একটু ভীতিও কাজ করছে’।
এদিকে পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকার কারণে মালিককে জমার টাকা দিতে পারবেন কিনা এ দুশ্চিন্তা শহিদুলের মতো আরও পরিবহন কর্মীর। যাত্রী না থাকার আক্ষেপের পাশাপাশি তারা ফুরফুরে মেজাজেও আছে, কারণ রাস্তায় জটে পড়ে নাকাল হতে হচ্ছে না।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে অনেকেই নামাজ-মিলাদ দোয়া মাহফিলে রাত পার করেছেন। বুধবার তাই খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া তেমন কেউ বাইরে বের হননি। এজন্য রাস্তায় ব্যক্তিগত যানবাহনও কম। দোকানপাটও বেশিরভাগ জায়গায় বন্ধ। সব মিলিয়ে ঢাকায় যেন ঈদের আমেজ!
গত ২৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত দুই দিন ছাড়া সপ্তাহজুড়ে ছুটির ফাঁদে পড়ে রাজধানী। গত ২৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার চাকরিজীবীদের অনেকে অফিস শেষে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। কারণ, পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার (২৭ ও ২৮ এপ্রিল) সাপ্তাহিক ছুটি। ২৯ এপ্রিল রোববার ছিল বুদ্ধপূর্ণিমার সরকারি ছুটি। পরদিন ৩০ এপ্রিল সোমবার অনেকে একদিনের জন্য ছুটি নিয়েছেন।
মঙ্গলবার মহান মে দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি ছিল। বুধবার শবে বরাতের সরকারি ছুটি রয়েছে। কাল ৩ মে বৃহস্পতিবার ছুটি না থাকলেও পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কথা মাথায় রেখে কেউ কেউ বৃহস্পতিবারও ছুটি নিয়েছেন। অনেকে এভাবেই ছুটি লম্বা করায় মোট নয়দিনের ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশ। এই সুযোগে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে গেছেন গ্রামে। কেউ গেছেন বিভিন্ন দর্শনীয় এলাকায় ঘুরতে। তাই ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানী।
যে কারণে অন্য সময় যানজট নিয়ন্ত্রণে যাদের হিমশিম খেতে হয় সেই ট্রাফিক পুলিশও কিছুটা স্বস্তিতে সময় পার করছেন। নিয়মমতো ডিউটি করতে আসলেও সড়কে গাড়ীর চাপ কম থাকায় নিজেরা চাপমুক্ত সময় পার করছেন।
গত ২৪ মার্চ রাজধানীতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটে ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট: আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা’বিষয়ে বুয়েটের এক অনুষ্ঠানে বলা হয়, ‘রাজধানীতে দুঃসহ যানজটের কারণে মানুষ ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। দীর্ঘ সময় সড়কে আটকে থাকায় মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে। সেই সঙ্গে মানসিক দিক থেকে চাপে পড়ছে নগরবাসী’। এতে আরও বলা হয়, রাজধানীতে যানজটের কারণে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
রাজধানীর কাজলা থেকে ইস্কাটনে আসতে অন্যদিন এক ঘণ্টা লাগলেও আজ মাত্র বিশ মিনিটে অফিসে এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মহিউদ্দিন আহমেদ। বললেন, ‘মুহুর্তের মধ্যে চলে আসছি। সময় লাগছে মাত্র ২০ মিনিট! কোনো যানজট চোখে পড়েনি।’
শ্যামপুর থেকে নিজের মোটরসাইকেলে করে বাংলামোটরে আসতে অন্যদিন প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ রাস্তা ফাঁকা থাকায় ২০ মিনিটে অফিসে ঢুকেছেন বলে জানোলেন লিমন হোসেন।
বিজয়নগর, কাকরাইল এলাকার কয়েকটি ফাঁকা রাস্তার চিত্র পোস্ট করে সাংবাদিক জহির উদ্দিন বাবর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আহ কী শান্তি! হে আল্লাহ যন্ত্রণামুক্ত ঢাকার মেয়াদ বাড়িয়ে দাও!
বাংলামোটরে দায়িত্বপালনকারী ট্রাফিক সার্জেন্ট মোর্শেদ বলেন, ঈদের সময়ও এতোটা ফাঁকা পাওয়া যায় না ঢাকা। আমরা যে কাজটা পাঁচ-ছয়জন মিলে করি, এখন দুইজন সেটা করতে পারছি!
তবে রাস্তা ফাঁকা পেয়ে কিছু চালক অতিরিক্ত গতিতে চালাচ্ছেন বলে উল্লেখ করে তাদের গতি রোধ করতেই সচেষ্ট থাকতে হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
Posted ১৬:৪৯ | বুধবার, ০২ মে ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain