বুধবার ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুজিবকোট ছেড়ে, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলে রাজনীতি করব না : সুলতান মনসুর

  |   শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট

sultan monsur

আওয়ামী লীগের নির্বাসিত নেতা, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেছেন, যতদিন বেঁচে থাকব মুজিবকোট ছেড়ে, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলে রাজনীতি করব না। মওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, শামসুল হক ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার চেতনা ধারণ করেই রাজনীতি করব।
সিদ্ধেশ্বরীর ছোট্ট ফ্ল্যাটে বসে সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত সুলতান মনসুর এ কথা বলেন। ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদের পর সুলতান মনসুরই সেই ভাগ্যবান, যিনি ছাত্রলীগ সভাপতি ও ডাকসু ভিপির মুকুট পরে জাতীয় রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
ষাটের দশকে স্কুলজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অভিষিক্ত সুলতান সিলেট এমসি কলেজ, মদন মোহন কলেজের ভিপিই হননি, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিরোধযুদ্ধে যান। ‘৭৫-উত্তর দুঃসময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে তার জীবন উৎসর্গ করেন। দলে জনপ্রিয় কর্মী-অন্তঃপ্রাণ সুলতান ওয়ান-ইলেভেনের পর নক্ষত্রপতনের মতোই দল থেকে নির্বাসিত হন। দলীয় মনোনয়ন ও সাংগঠনিক কাঠামো থেকে বঞ্চিত হন। তবু সুলতান আদর্শচ্যুত হননি।
বলেছেন, ‘সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলে সারা জীবন গণমানুষের পক্ষে রাজনীতি করে যাব।’ এই প্রতিবেদকের সঙ্গে বিকালে যখন সুলতান মনসুর আলাপ করছিলেন তার কিছুক্ষণ আগে নিজ নির্বাচনী এলাকা সিলেটের কুলাউড়ায় গণসংযোগ করে কেবল ফিরেছেন ঢাকায়। সময় পেলেই ছুটে যান কুলাউড়ায়, যে এলাকার মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এখন কীভাবে সময় কাটান, কী করছেন, আগামীতে কীভাবে রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে চান, বর্তমান সরকার, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কিংবা মন্ত্রিসভা সম্পর্কে তার খোলামেলা মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কথা বলার সময় এবং পরিস্থিতি এখনো আসেনি। তবে নিকট-ভবিষ্যতেই বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমি আমার রাজনৈতিক অবস্থান ও ভূমিকার কথা জানাব।
সে সময়টা আনুমানিক কতদিন দেরি হতে পারে- জানতে চাইলে ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, আগামী আগস্টের দিকে সব বলব, কোনো কিছুই বাদ রাখব না। তবে এখন নয়। এখন নয় কেন, বাধা কোথায়- জানতে চাইলে তিনি প্রচলিত প্রবাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের ১০ ফোঁড় তাই।
সুলতান মনসুর আপাতত নিজ নির্বাচনী এলাকাসহ সিলেটের প্রিয় মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। নিয়মিত বই পড়া, টিভি দেখা, পত্রিকা পড়া আর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আড্ডার ভেতর দিয়েই সময় কাটে সাবেক এই নন্দিত ছাত্রনেতার।
অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে একসময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আশির দশকের ছাত্রসমাজের হৃদয় জয় করা এই নেতা। তিনি বলেন, ‘১৯৬৮ সাল থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে ছাত্রলীগের পতাকা হাতে নিয়ে রাজনীতিতে আমার অভিষেক ঘটেছিল। ‘৬৯-এর ছাত্র গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০-এর নির্বাচন, ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের চরম ক্রান্তিকালে, দুঃসময়ে দলীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রেখেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল থেকেই নৌকার পালে হাওয়া উড়িয়ে পথ চলেছি। কিন্তু পথচলার পথে ২০০৮ সালে কেন ধাক্কা খেলাম, তা শুধু দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাই বলতে পারবেন, আমি কিছুই জানি না।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রথম যে ১০ জনের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যতার প্রয়োজন ছিল, নিঃসন্দেহে আমি সেই ১০ জনের একজন দাবি করব। এরপর কেন দলীয় মনোনয়ন পেলাম না, তা আজও অজানা। পরবর্তী-সময়ে আমাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের সবার সম্মতিতে অনুমোদিত কমিটির সদস্যপদ থেকেও আমাকে বাদ দেওয়া হয়। তবে এতটুকু দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, যারা আমাকে জনগণ থেকে, রাজনৈতিক কর্মী থেকে, চিরদিনের জন্য রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল আমার বিবেচনায় তাদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। আমার এলাকাসহ সারা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সচেতন মহল যেভাবে আমার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে, সেটি প্রমাণ করে ষড়যন্ত্রকারীদের দুঃস্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পর দলীয় পদ-পদবি না থাকলেও চিন্তার দিক থেকে আমি সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে জড়িত রয়েছি। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে থাকা লাখো কোটি আওয়ামী লীগ সমর্থক, বঙ্গবন্ধুপ্রেমিক ও আমার ব্যক্তিগত শুভানুধ্যায়ীরা আমার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কোনো বিভ্রান্তিতে থাকুক সে সুযোগ আমি কাউকে দিতে চাই না।
সুলতান মনসুর বলেন, আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি বলতে চাই- আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে, জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে এমন কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে কোনো দিন সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং আমি বলব, স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কথাটি বলেছিলেন তা আমার রাজনৈতিক ভিত্তি। বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন, ‘আমি মানুষ, আমি বাঙালি, আমি মুসলমান’। আমার রাজনীতির চেতনাও হবে তা-ই।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৩৭ | শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com