বুধবার ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মদীনার ইহুদীদের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহানুভবতা

  |   বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট

মদীনার ইহুদীদের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহানুভবতা

শাফিউর রহামান ফারাবী

islamic

নিজ স্বার্থে ইতিহাসকে বিকৃত করার প্রবণতা চলে আসছে সেই আদিকাল থেকেই। পরবর্তী প্রজন্মের উপর মিথ্যা ইতিহাসকে চাপিয়ে দেওয়া এবং সত্য ইতিহাসকে চাপা দেওয়ার প্রবণতার কারনে পরবর্তী প্রজন্মের মানুষদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়ে বহু মিথ্যা ধ্যান ধারনার জন্ম দিয়েছে। সত্যকে ঢেকে ফেলার কারণে অনেক সময়ই মানুষের কাছে সঠিক ইতিহাস পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ে না। অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা বর্ণনার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সূত্রের পাহাড়। সূত্রগুলো বিপক্ষে গেলে বলা হয়- এইগুলো বিজয়ী শক্তির লেখা ! ঐতিহাসিক ঘটনা গুলিকে পক্ষে-বিপক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার না করে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করলেই আমদের কাছে বেরিয়ে আসবে মূল সত্য। আর এইভাবেই চাপিয়ে দেওয়া এবং চাপা দেওয়া ইতিহাস দূরীভূত হয়ে সত্য প্রকাশিত হবে, কারণ সত্যের জয় অবধারিত।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলা অন্তর্জালে মুক্তমনারুপী নাস্তিকরা অভিযোগ করে আসছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি মদীনার ইহুদীদের উপর অনেক অত্যাচার করেছেন ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি দলে দলে মদীনার পুরুষ ইহুদীদের কে হত্যা করেছেন আর মহিলা ইহুদীদের কে দাসী বানিয়েছেন ! সীরাত সম্পর্কে সঠিক পড়াশুনা না থাকায় শার্ট প্যান্ট পড়া অনেক মুসলমান ছেলেই নাস্তিকদের এইসব কথায় বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মদীনার ইহুদীদের কে নিয়ে মুক্তমনাদের এই ভণ্ডামি গুলি আপনাদের সামনে প্রকাশ করব।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় আসেন তখন মদীনায় ২০ টার মত ইহুদী গোত্র ছিল। এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল বনু কোরায়জা, বনু নাদীরা, বনু কায়নুকা, বনু মোস্তালাক, বনু যানবা, বনু আওফ, বনু আন-নাজ্জার, বনু ছালাবা ইত্যাদি। ইসলাম পূর্ব যুগে মদীনার ইহুদীরা আওস ও খাযরায গোত্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। তারপর আওস ও খাযরায গোত্রের লোকেরা যখন ১ম বায়াতে আকাবা ও ২য় বায়াতে আকাবার মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মদীনার নিরুংকুশ ক্ষমতা দিল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় আগমন করলেন একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনাতে আসার পরে মুসলিম, ইহুদী ও পৌত্তলিকদের নিয়ে এক অভিনব সাধারণতন্ত্র গড়ে তোলেন। বিপরীত চিন্তা, রুচি ও ধর্মাভাব সম্পন্ন মুসলিম, ইহুদী ও পৌত্তলিকদের দেশের সাধারণ স্বার্থরক্ষা ও মঙ্গলের জন্যে একটি রাজনৈতিক জাতিতে পরিণত করার জন্যে তিনি একটি সনদ তৈরী করেন। সনদে তিন পক্ষই স্বাক্ষর করেন। এই অভিনব ও অশ্রুতপূর্ব চুক্তি বা সনদ যেটা ইতিহাসে মদীনা সনদ নামে পরিচিত এর কিছু ধারা নীচে দেয়া হলো-

১। ইহুদী ও মুসলিম ও পৌত্তলিকরা এক জাতি (রাষ্ট্রীক কাঠামোর মধ্যে বসবাসকারী ‘জাতি’)।
২। এই সনদের অন্তর্ভূক্ত কোন গোত্র শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে সবার সমবেত শক্তি নিয়ে তা প্রতিহত করতেহবে।
৩। কেউ কোরাইশদের সাথে কোনো রকমের গোপন সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হতে পারবে না ও কোরাইশদের কে কোন সামরিক দিক দিয়ে সাহায্য করবে না।
৪। মদিনা আক্রান্ত হলে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে সবাই মিলে যুদ্ধ করবে এবং সম্প্রদায়গুলো নিজেদের যুদ্ধব্যয় নিজেরা বহন করবে।
৫। ইহুদী-মুসলিম সহ চুক্তিবদ্ধ সকল সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্মকর্ম পালন করবে, কেউ কারুর ধর্ম-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না।

… ইত্যাদি।
মদিনার সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে চুক্তি/সন্ধি অনুসারে সব ইহুদী গোত্র প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল যে তারা মুসলমানদের কোন শত্রুকে কোনরকম সাহায্য সহযোগিতা করবেনা। কোন বহিঃশত্রু মদিনা আক্রমণ করলে তারাও মুসলমানদের মতো স্বদেশ রক্ষার্থে নিজেদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করবে। কিন্তু সন্ধির শর্ত ও মদীনার স্বাধীনতা ও সম্মানকে উপেক্ষা করে বনু কুরাইযা সহ বাকী ইহুদী গোত্র একাধিকবার কোরাইশদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

তার আগে ইহুদীদের এক গুয়েমি আচরণ সম্পর্কে আপনাদের কে আগে একটু ধারনা দেই। সীরাতে ইবনে ইসহাকে হযরত সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন তখন হযরত সাফিয়ার পিতা হুয়াই ইবনে আখতার এবং চাচা আবু ইয়াসের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একদিন সকালে হাজির হন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত উনারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে থাকেন। উনারা বাসায় আসার পর আমি যখন উনাদের কাছে গেলাম তখন আমার চাচা আবু ইয়াসের আমার পিতাকে বলছেন-

এ কি তিনি ?

– হ্যা, আল্লাহ্‌র শপথ।

-আপনি তাকে ভালোভাবে চিনেছেন তো ?

-হ্যা।

-তাহলে এখন আপনি তাঁর সম্পর্কে কি মনোভাব পোষণ করছেন ?

-আজীবন শত্রুতা। আল্লাহ্‌র শপথ, যতদিন বেঁচে থাকি আমরা। [ সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, আর রাহীকুল মাখতুম ] অর্থাৎ ইহুদীরা জানত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সত্য রাসূল কিন্তু তাও তারা সারাজীবন আল্লাহ্‌র রাসূলের সাথে শত্রুতা করে গেছে। ইহুদীদের এই কূপমুণ্ডকতার কথা আল কোরআনেও বর্ণিত আছে।

আচ্ছা আমরা এখন একটু দেখি তো মুসলমানদের সাথে সম্পাদিত এই চুক্তির ব্যাপারে মদীনার ইহুদীরা ঠিক কতটুকু শ্রদ্ধাশীল ছিল। ইহুদীদের বনু কাইনুকা এই গোত্রটি পেশায় ছিলো কর্মকার, স্বর্ণকার ও থালা বাটি নির্মাতা। বদর যুদ্ধের কিছুদিন পরেই তাদের বাজারে এক মুসলিম মেয়ে এক ইহুদী স্বর্নের দোকানে একটি কাজে গিয়েছিল। ঐ মুসলিম মহিলা যখন বনু কায়নুকা গোত্রের ঐ স্বর্ণের দোকানে গিয়েছিলেন তখন ঐ ইহুদী কর্মচারী ঐ মুসলিম মহিলার মুখ খুলতে বলে। কিন্তু ঐ মুসলিম মহিলা উনার মুখ খুলতে রাজী না হওয়ায় ঐ মুসলিম মহিলাটি যখন ঐ ইহুদী স্বর্নের দোকানের একটি চেয়ারে বসে তারপর ঐ ইহুদী কর্মচারী ঐ মুসলিম মেয়েটির পোশাকে পেরেক মেরে চেয়ারের সাথে আটকে দিলে, উঠতে গিয়ে ঐ মুসলিম মেয়েটির জামা ছিঁড়ে উনার সারা শরীর অনাবৃত হয়ে যায়। মুসলিম মেয়েটির আর্তনাদ শুনে এক মুসলিম পথচারী এটা দেখে খেপে গিয়ে ঐ ইহুদী কর্মচারীকে কতল করলে, তারপর ইহুদী কর্মচারীর পক্ষের লোকেরা সবাই মিলে ঐ মুসলমানকে হত্যা করে ফেলে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু কাইনুকা গোত্র কে অবরোধ করলে তারা ১৫ দিন পর মুসলমানদের নিকট আত্মসমর্পন করে। ইহুদীদের ধর্ম গ্রন্থ তাওরাতের বিধান অনুসারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু চাইলেই পারতেন চুক্তিভংগকারী বনু কাইনুকা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদীদের কে হত্যা করতে আর সকল ইহুদী নারীদের কে দাসি বানাতে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা না করে বনু কাইনুকা গোত্রের সকল ইহুদীকে এই শর্তে ক্ষমা করে দেন যে তারা মদীনা থেকে বের হয়ে অন্যত্র চলে যাবে। যদিও বনু কায়নুকা গোত্র তাদের বিদ্রোহ ও প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের কারনে মৃত্যুদন্ডের অপেক্ষা করছিল কিন্তু শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহানুভবতার কারনেই বনু কায়নুকা গোত্র নিরাপদে ইয়াছরিব/মদীনা ত্যাগ করতে পারে। মদীনার আগের নাম ছিল ইয়াছরিব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় আসার পর মদীনার নাম হয় মদীনাতুর রাসূল বা রাসূলের শহর মদীনা।

বনু নাদের ছিলো মদীনার ইহুদীদের মাঝে সবচেয়ে বড় গোত্র। তাদের মূল ব্যবসা ছিলো খেজুর উৎপাদন। একটা সংঘর্ষে মুসলমান এবং ইহুদি বনু নাদের গোত্রের উভয়পক্ষের লোকজনের দ্বারা বনু কেলাব গোত্রের দুইজনের নিহত হবার ঘটনায় ক্ষতিপূরণের একটা অংশ বনু নাদেরেরও বহন করা উচিৎ এই দাবী নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু নাদির গোত্রের গোত্রপতিদের কাছে আলোচনা করার জন্য গেলে বনু নাদের গোত্রের লোকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলে আপনি কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন, আমরা নিজেরা আলোচনা করে তারপর আপনাকে জানাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাদের একটি ঘরের দেওয়াল সংলগ্ন জায়গায় বসে ছিলেন। সেই সময় বনু নাদির গোত্রের ইহুদীরা ঐ ঘরের ছাদ থেকে একটি বড় পাথর ফেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। ঠিক সেই সময় হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সাল্লাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বনু নাদীর গোত্রের এই পরিকল্পনা জানিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে সাথে সেখান থেকে উঠে গিয়ে পরে মদীনায় চলে যান। তারপর একটানা ৬ দিন ৬ রাত অবরোধ করে রাখার পর বনু নাদিরা গোত্রের ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ক্ষমা চায়। বনু কায়নুকা গোত্রের মত বনু নাদিরা গোত্রের সকল ইহুদীদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই শর্তে ক্ষমা করে দেন যে তারা মদীনা থেকে বের হয়ে অন্যত্র চলে যাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু চাইলেই পারতেন উনাকে হত্যা চেষ্টা করার অপরাধে ইহুদীদের ধর্ম গ্রন্থ তাওরাতের বিধান মতে বনু নাদিরা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদীদের কে হত্যা করতে ও বনু নাদিরা গোত্রের সকল ইহুদী নারীদের কে দাসী বানাতে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা করেননি। বনু নাদিরের এই ঘটনাটি ৪র্থ হিজরির রবিউল আউয়াল মাস মোতাবেক ৬২৫ খৃষ্টাব্দের ৪ আগস্ট সংঘটিত হয়েছিল। বনু নাদিরার ঘটনার পুরা বর্ননা সূরা হাশরে রয়েছে।

এরপর আসল খন্দকের যুদ্ধের সময়। খন্দকের যুদ্ধের সময় যখন মুসলমানরা মদীনা নগরী ত্যাগ করে কাফেরদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত তখন বনু কোরায়জা গোত্রের ইহুদীরা চুক্তিভংগ করে মক্কার কাফেরদের সাথে হাত মিলিয়ে পিছন দিক থেকে মদীনা আক্রমন করার চেষ্টা চালায়। যদিও ইহুদী গোত্র বনু কোরাইজা গোত্রের সেই চেষ্টাটা সফল হয়নি। খন্দকের যুদ্ধের পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু কোরায়জা গোত্রকে অবরোধ করেন। যেহেতু বনু কোরায়জা গোত্র কাফেরদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ চলার সময় চুক্তি ভংগ করেছে তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু কোরায়জা গোত্রকে বলেন তোমাদের ব্যাপারে আমার ফয়সালা কি হবে ? তখন বনু কোরায়জা গোত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলেন তাদের মিত্র আওস গোত্রের হযরত সাদ ইবনে মুয়ায রাযিয়াল্লাহু আনহু যে ফয়সালা করবেন তাতেই তারা সম্মত আছে। হযরত সাদ ইবনে মুয়ায রাযিয়াল্লাহু আনহু ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের বিধান মতে যুদ্ধকালীন চুক্তি ভঙ্গের অপরাধে বনু কোরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদিকে হত্যা করা এবং ইহুদি নারীদের কে দাসী হিসাবে বিক্রি করে দেয়া হোক এই রায় দেন। এরপরে বনু কোরাইজা গোত্রের ৪০০ পুরুষ ব্যক্তিকে একই দিনে হত্যা করা হয় এবং বনু কোরায়জা গোত্রের প্রত্যেকটা যুদ্ধবন্দী নারীকে সাহাবীদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হয়েছিল যেন তারা Public Property তে পরিনত না হয়ে যায়। পরবর্তীতে সাহাবীরা তাদের কে বিয়ে করে তাদের কে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন।

বনু কোরায়জা গোত্রের ইহুদীরা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলত যে আপনি আপনার ইচ্ছামত আমাদের প্রতি আচরণ করেন তাইলে কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঠিকই বনু কোরায়জা গোত্রের সকল ইহুদীদেরকেই ক্ষমা করে দিতেন। ঠিক যেরকম টা আমরা দেখি মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কার কাফেরদের কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তোমরা আমার কাছে কিরকম আচরন প্রত্যাশা করছ তখন মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলেছিল- “ আপনি হচ্ছেন আমাদের সম্মানিত ভ্রাতা ও সম্মানিত ভ্রাতুষ্পুত্র। আমরা আপনার কাছে ভাইয়ের মতই আচরণ প্রত্যাশা করি। “ এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার কাফেরদের কে বলেছিলেন- “ আজ আমি তোমাদের কে সেই কথাই বলব যেই কথা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সাল্লাম তার ভাইদের কে বলেছিলেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। তোমরা সবাই স্বাধীন মুক্ত। “

একটু চিন্তা করে দেখুন যেই মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে শত সহস্রবার আঘাত করেছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে উনার পিতৃভুমি থেকে বহিস্কার করেছিল, বারবার মদীনা আক্রমণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করতে চেয়েছিল কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সকল কেই ক্ষমা করে দেন। এরকম ক্ষমার দৃষ্টান্ত এই পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। যুদ্ধকালীন চুক্তি ভঙ্গের দায়ে অপরাধী বনু কোরায়জা গোত্রের ইহুদীরাও যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ক্ষমা চাইত তাইলে কিন্তু ঠিকই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও মক্কার কাফেরদের ন্যায় বনু কোরাইজা গোত্রের সকল ইহুদীদের কে ক্ষমা করে দিতেন। ঠিক যেরকম ভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত মদীনার অন্যান্য ইহুদী গোত্র যেমন বনু নাদিরা, বনু কায়নুকাদের কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। আর বনু কোরায়জা গোত্রের উপর এই ফয়সালা ছিল ইসরাঈলী শরীয়তের সামরিক বিধি মুতাবেক। তাওরাতের ১১-১৩ আয়াতে বলা আছে: “যখন তুমি কোন নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে তাহার নিকটে উপস্থিত হবে, তখন তাহার কাছে সন্ধির কথা ঘোষনা করিবে। তাহাতে যদি সে সন্ধি করিতে সম্মত হইয়া তোমার জন্য দ্বার খুলিয়া দেয় তবে সেই নগরে যে সমস্ত লোক পাওয়া যাবে তাহারা তোমাকে কর দিবে ও তোমার দাস হইবে। কিন্তু যদি সে সন্ধি না করিয়ে তোমার সহিত যুদ্ধ করে, তবে তুমি সেই নগর অবরোধ করিবে। পরে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহা তোমার হস্তগত করিলে তুমি তাহার সমস্ত পুরুষদের কে খড়গধারে আঘাত করিবে; কিন্তু স্ত্রীলোক, বালক-বালিকা ও পশু প্রভূতি নগরের সর্বস্ব, সমস্ত লুট দ্রব্য আপনার জন্য লুটস্বরুপ গ্রহন করিবে আর তোমার ঈশ্বর প্রদত্ত শত্রুদের লুট ভোগ করিবে” (দ্বিতীয় বিবরণ, অধ্যায় ২০, আয়াত ১০-১৪, পবিত্র বাইবেল, বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি, ঢাকা) বাইবেলের ২টা ভাগ একটা হল অল্ট টেস্টমেন আরেকটা হল নিউ টেস্টমেন। বাইবেলের অল্ড টেস্টমেনকেই তাওরাত বলা হয়। বনী কুরায়জা গোত্রের সাথে মুসলমানদের এই আচরন করার কারন গুলির বিস্তারিত বর্ননা আপনারা এই লিংকে পাবেন

আর যে উইকিপিডিয়ার কথা বলে নাস্তিকরা মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেলে সেই উইকিপিডিয়াতেই ইহুদি ঐতিহাসিকদের রেফারেন্স সহকরে বলা আছে বনু কুরাইজা গোত্র যুদ্ধকালীন চুক্তি ভঙ্গ করেছিল। নাস্তিকরা কি এখন বলবে যে উইকিপিডিয়ার এই লেখাটাও আমরা মুসলমানরা লিখে এসেছি? উইকিপিডিয়াতেও বলা আছে যে বনু কোরাইজা গোত্রের উপর তালমুদীয় শাস্তি প্রয়োগ হয়েছিল।http://en.wikipedia.org/wiki/Invasion_of_Banu_Qurayza

এরপর ৬ষ্ঠ হিজরির শাবান মাসে ইহুদী গোত্র বনু মোস্তালাক যখন মদীনা আক্রমন করতে চায় তখন মুসলমানরা বনু মোস্তালাক গোত্র কে পরাজিত করে। প্রথমদিকে বনু মোস্তালাক গোত্রের ৬০০ পুরুষ কে বন্দী করা হয় কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বনু মোস্তালাক গোত্রের গোত্রপতি হারিস ইবনে দিরারের কন্যা জুওয়াইহিয়া বিনতে হারিস কে বিয়ে করেন তখন সাহাবীরা বনু মোস্তালাক গোত্রের সেই ৬০০ পুরুষ বন্দীকেও মুক্ত করে দেন। কারন সাহাবীরা তখন বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কখনো আমাদের দাস হতে পারে না। অর্থাৎ বনু মোস্তালাক গোত্রের কোন অধিবাসীকেই সাহাবীরা দাস বানাননি।

এরপর ৭ম হিজরিতে মদীনা আক্রমন করার ব্যাপারে খায়বারের ইহুদীদের নতুন ষড়যন্ত্রের কারনে খায়বার যুদ্ধ হয়। খায়বার ছিল মদীনা থেকে ৮০ মাইল দূরের একটি বড় শহর। এখানে ইহুদীদের অনেক গুলি দূর্গ ও ক্ষেত খামার ছিল। মূলত খায়বার ছিল ইহুদীদের একটি নয়া উপনিবেশ। এই খায়বারের ইহুদীরাই বনু কোরাইজা গোত্রের ইহুদীদের কে বিশ্বাসঘাতকায় উদ্দীপিত করেছিল। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র এই খায়বার থেকেই হত। খায়বারের ইহুদীরা গাতফান গোত্র ও বেদুঈনদের সাথে মিলিত হয়ে মদীনা আক্রমন করার ব্যাপারে ষড়যন্ত্র করছিল। খায়বার যুদ্ধে পরাজিত ইহুদীদের কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন নির্বাসন দেন নি বা পরাজিত ইহুদীদের কে দাসদাসীও বানান নি। প্রতি বছর তাদের উৎপাদিত ফল ফসলের অর্ধেক ইহুদীরা মুসলমানদের কে দিবে এই শর্তে খায়বারের ইহুদীরা খায়বারেই থাকার অনুমতি পায়। কিন্তু এই খায়বার যুদ্ধের পর পরই এক ইহুদী মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দাওয়াত করে তারপর বকরীর মাংসের ভিতরে বিষ মিশিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনার পরেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বারের সকল ইহুদীদের কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। একটু চিন্তা করে দেখুন আপনারা বনু নাদিরা গোত্রের পর এইবার ২য় বারের মতন খায়বারের ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করার পরিকল্পনা করার পরেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বারের সকল ইহুদীদের কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এরকম ক্ষমার দৃষ্টান্ত আর কি কখনো আছে ?

খায়বারের অভিযানের পর এর পার্শ্ববর্তী কোরা এলাকার ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যথারীতি কোরা এলাকার ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরা এলাকার সকল ইহুদীদেরকে ক্ষমা করে দেন। উৎপাদিত ফসল বন্টনের ব্যাপারে খায়বারের ইহুদীদের ন্যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কোরা এলাকার ইহুদীদের একটা চুক্তি হয়। কিন্তু সেই সময়ের জাহেলিয়াতের রীতি অনুসারে যুদ্ধে পরাজিত নাগরিক হিসাবে খায়বার ও কোরার ইহুদীদের দাসত্বই ছিল একমাত্র নিয়তি। কিন্তু শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহানুভবতার কারনেই খায়বার ও কোরার ইহুদীরা জানে বেঁচে যায়।

যেই ২/১ টা ইহুদী গোত্রের নারীদের কে মুসলমানরা যুদ্ধবন্দী বানিয়েছিল তারা কিন্তু তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের বিধানমতেই যুদ্ধবন্দী নারী হিসাবে মুসলমানদের কাছে নীত হয়েছিলেন। প্রত্যেকটা যুদ্ধবন্দী নারীকে সাহাবীদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হয়েছিল যেন তারা Public Property তে পরিনত না হয়ে যায়। পরবর্তীতে সাহাবীরা তাদের কে বিয়ে করে তাদের কে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। উম্মুল মুমেনীন জুহায়রিয়া, রায়হানা ও সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহারা কিন্তু প্রথমে যুদ্ধবন্দী নারী হিসাবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসেছিলেন। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেন। তাই আজকে আমরা হযরত জুহায়রিয়া, হযরত রায়হানা ও হযরত সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহাকে উম্মুল মুমেনীন বলি। কিন্তু মুক্তমনায় হযরত রায়হানা ও হযরত সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রক্ষিতা বলা হয়েছে, নাউযুবিল্লাহ। আর মুসলমানরা একমাত্র বনু কুরায়জা এই ১ টি ইহুদী গোত্রের নারীদের কেই যুদ্ধবন্দী বানিয়েছিল। এরপর আর কোন পরাজিত জাতিকেই মুসলমানরা দাস দাসী বানাইনি।প্রাচীন কালের দাস দাসী প্রথা কে ইসলামী শরীয়াহ কি আদৌ সমর্থন করে কিনা তা জানতে আপনারা আমার এই NOTE টি পড়ুন

খায়বার যুদ্ধের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হযরত সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহার এই বিয়ে নিয়ে নাস্তিকরা প্রচুর মিথ্যাচার করে। হযরত সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহার সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই বিয়েকে কেন্দ্র করে বুখারী শরীফের হাদীস বিকৃত করা থেকে শুরু করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে আরো অনেক মিথ্যাচার করে যাচ্ছে নাস্তিকরা।
হযরত সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহার সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিয়ে নিয়ে নাস্তিকদের সকল প্রশ্নের উত্তর এইখানে দেয়া হয়েছে

তাইলে আমরা এখন দেখতে পারি মদীনার আশপাশে ২০ টার মত ইহুদী গোত্র থাকলেও মাত্র ৪ টা ইহুদী গোত্রের সাথে মুসলমানদের ঝামেলা হয়েছিল। আচ্ছা আপনারাই বলুন বনু কোরায়জা গোত্র যদি খন্দকের যুদ্ধের সময় মুসলমানদের সাথে করা তাদের যুদ্ধকালীন চুক্তিটি ভংগ না করত তাইলে কি তাদের এই করুন পরিণতি বহন করতে হত ? ৭০ খ্রিষ্ট পূর্বে রোমানরা যখন জেরুজালেম জয় করে তখন জেরুজালেমে থাকা সকল ইহুদীদেরকে খৃস্টানরা হত্যা করে ফেলে। ইসলাম পূর্ব যুগ থেকেই খ্রিষ্টানরা ইহুদীদের কে হত্যা করত। এমনকি এক ইহুদী গোত্র আরেক ইহুদী গোত্রকে আক্রমন করে পরাজিত সকল ইহুদী পুরুষ ও নারীদের কে দাস-দাসি বানানোর নজিরও ইতিহাসে বহু আছে। আর ১৪০০ সালে স্পেন জয় করার পর তো রাজা ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলা স্পেনের সকল মুসলমানদেরকে হত্যা করে ফেলেছিল। নাস্তিকদের কিন্তু কখনই খৃষ্টানদের দ্বারা ইহুদী নিপীড়নের এই কাহিনীগুলি নিয়ে কোন আলোচনা করে না। গুরুতর অপরাধ থাকা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বনু কাইনুকা, বনু নাদীরা, বনু মোস্তালাক আর খায়বারের ইহুদীদের কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এই ব্যাপারটাও নাস্তিকরা কখনোই তাদের আলোচনায় আনবেনা।

আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে আরবের মানুষ জন খুবই নিষ্ঠুর ছিল। সেই সময় মক্কা ও মদীনার কাফেররা যে কতটুকু হিংস্র ছিল তা আপনাদের কে এখন একটু আমি বলি। জাহেলিয়াত যুগে যুদ্ধক্ষেত্রেও মহিলাদের কে হত্যা করা হত না। কিন্তু মক্কী জীবনে নরাধম আবু জেহেল হযরত সুমাইয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা নামক একজন মহিলা সাহাবীকে হত্যা করেছিলেন শুধুমাত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহন করার অপরাধে। হযরত সুমাইয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা এই মহিলা সাহাবীই কিন্তু ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদ। হযরত সুমাইয়া রাযিয়াল্লাহু আনহার জীবনী জানতে এই লিংকে যান

মক্কা ও মাদানী জীবনে প্রতি মুহূর্তে কাফেররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদের কে হত্যা করতে চাইত। আপনাদের কে আমি এখন ২ টা উদাহরন দেই। হিজরতের ৩য় বছরের সফর মাসে আযল ও কারা গোত্রের লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ৬ জন সাহাবী কে চান তাদের এলাকায় গিয়ে তাদের কে দ্বীন ইসলাম শিখানোর জন্য। ঐ ৬ জন সাহাবী ঐ গোত্রের কাছে উপস্থিত হলে ঐ গোত্রপতিরা ঐ ৬ জন সাহাবীর মাঝে ৪ জন সাহাবীকে হত্যা করে আর ২ জন সাহাবীকে দাস হিসাবে বাজারে বিক্রি করে দেয়। ঐ ৪ জন সাহাবীকে রাবেতা ও জেদ্দার মধ্যবর্তী স্থান রাজী নামক এক ঝর্ণার সামনে হত্যা করা হয় তাই সীরাত সাহিত্যে এই ঘটনাটাকে রাজীর ঘটনা বলে অভিহিত করা হয়। আবার ঐ একই বছর বনু সুলায়ম, বনু উসাইয়া, বনু রিল ও বনু যাকওয়ান গোত্র অনেক বলে কয়ে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার নামে প্রতিজ্ঞা করে নজদের অধিবাসীরা দ্বীন শিখবে বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে ৭০ জন সাহাবীকে নিজেদের গোত্রে নিয়ে যায়। তারপর ঐ সকল সাহাবীর কাছ থেকে নজদের অধিবাসীরা দ্বীন শিখা তো দূরের কথা ৭০ জন সাহাবীকেই নজদের অধিবাসীরা নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করে। এই ঘটনাটা বী’র মা’উনার ঘটনা নামে সীরাত সাহিত্যে পরিচিত। কারন নজদের অধিবাসীরা বী’র মা’উনা নামক স্থানে এই ৭০ জন সাহাবীকে হত্যা করেছিল। একটু চিন্তা করে দেখুন যে জাহেলিয়াতের যুগেও আরবের কাফেররা অতিথিপরায়ন ছিল। কিন্তু কি নিষ্ঠুরভাবেই না আরবের কাফেররা অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে ৭০ জন সাহাবীকে তারা হত্যা করল ! বী’র মা’উনা ও রাজীর ঘটনার মাঝে পার্থক্য ছিল অল্প কয়েকদিনের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বী’র মা’উনা ও রাজীর ঘটনা দ্বারা নিহত সাহাবীদের জন্য দীর্ঘদিন বিষন্নগ্রস্থ ছিলেন। ইসলামে ওহুদ যুদ্ধে শহীদ ৭০ জন সাহাবীদের পরেই এই বী’র মা’উনা ও রাজীর ঘটনা দ্বারা নিহত সাহাবীদের মর্যাদা।

খায়বার যুদ্ধের পর তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরা আরব উপদ্বীপের একচ্ছত্র অধিপতি হন। নাস্তিকদের কথামত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি প্রতিহিংসাপরায়ন হতেন তাইলে তো তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাইলেই পারতেন বী’র মা’উনার ঘটনায় ৭০ জন সাহাবীকে হত্যাকারী বনু সুলায়ম, বনু উসাইয়া, বনু রিল ও বনু যাকওয়ান গোত্রপতিদের কে হত্যা করতে। কিন্তু তা না করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সকল কেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।

সেই সময় জাহেলিয়াত যুগের পরিপ্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের প্রতি দু একটি কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যেমন কাব ইবনে আশরাফ নামক এক কবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে অনেক অশ্লীল কবিতা রচনা করত। তাকে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে তার অশ্লীল কবিতা রচনা করা ত্যাগ করেনি। তাই মদীনা জীবনে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পান তখন সেই অশ্লীল কবিতা রচনাকারী কাব ইবনুল আশরাফ কে হত্যা করেন। আর যুদ্ধকালীন চুক্তি ভঙ্গের অপরাধে তাওরাতের বিধান অনুসারে বনু কোরাইজা গোত্রের সকল ইহুদী পুরুষদের কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ইসলাম বিদ্বেষীরা প্রায়ই কাফেরদের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই দুই একটি কঠোর সিদ্ধান্তকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে বড় করে সবার সামনে প্রচার করে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে উনার জীবনে হাজার হাজার কাফের/ইহুদীদের কে হত্যা না করে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এই তথ্য কখনো নাস্তিকরা কাউকে বলে না। সেই যুগে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয়ের পর পরাজিত যুদ্ধবন্দীদেরকে হয় হত্যা করা হত নতুবা দাস দাসী হিসাবে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হত। বদর যুদ্ধে ৭০ জন কাফের মুসলমানদের হাতে বন্দী হলেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাম মাত্র মুক্তিপণের মাধ্যমে ঐ সকল কাফেরদের কে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। অনেক কাফের আবার মুক্তিপণও দিতেও পারছিল না। তাদের কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্ত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু চাইলেই পারতেন ঐ ৭০ জন কাফেরদের কে হত্যা করতে বা দাস হিসাবে বাজারে বিক্রি করে দিতে।

তারপর মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক মক্কার সকল কাফেরদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার ইতিহাস তো আমরা সবাই জানি। মক্কা বিজয়ের পরে আরবের প্রায় সব গোত্রই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। কিন্তু হাওয়াযেন গোত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়নি। আরবে হাওয়াযেন গোত্রকে কুরাইশদের পর দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে গণ্য করা হত। হাওয়াযেন গোত্রের সাথে আরো বেশ কিছু উচ্ছৃংখল গোত্র যেমন সাকীফ, মোযার, জোশাম ও সাদ ইবনে বকর এর গোত্রসমূহ যোগ দেয়। তারা হাওয়াযেন গোত্রের অধিপতি মালিক ইবনে আওফ কে তাদের নেতা বানিয়ে মক্কা থেকে ১০ মাইল দূরে হোনায়ন নামক প্রান্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এই সকল কাফের গোত্র তাদের পরিবার পরিজন কেও তাদের সাথে নিয়ে আসে যেন পরিবার পরিজনের মুখের দিকে তাকিয়ে তারা সবাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রানপণে যুদ্ধ করে। যথারীতি হুনায়নের যুদ্ধে মুসলমানরা জয়ী হয়। সেই সময়ের যুদ্ধরীতি অনুসারে হুনায়নের যুদ্ধ করতে আসা পরাজিত সকল গোত্রের নারী পুরুষ, তাদের উট বকরী ও ধন সম্পদ মুসলমানদের হস্তগত হয়। এবং যথরীতি তা গনীমতের মাল হিসাবে সাহাবীদের মাঝে বন্টনও করা হয়। কিন্তু গনীমতের মাল বন্টনের ৭ দিন পরেই হুনায়নের যুদ্ধ করতে আসা সকল কাফের গোত্রপতিরা মুসলমান হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বন্টন হয়ে যাওয়া তাদের সকল পরিবার পরিজন ও তাদের সহায় সম্পত্তি সাহাবীদের কাছ থেকে নিয়ে তাদের মাঝে ফেরত দিয়ে দেন। নাস্তিকরা কিন্তু আপনাদের কে খালি এই হুনায়নের যুদ্ধের গনীমতের মাল বন্টনের কথাটাই বলবে কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে গনীমতের মাল বন্টন হবার ৭ দিন পরেই এই হুনায়নের যুদ্ধ করতে আসা সকল পরাজিত গোত্রপতিদের কে তাদের পরিবার পরিজন ও সহায় সম্পত্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তা কিন্তু আপনাকে কখনই বলবে না। এখন আপনি হয়ত বলতে পারেন যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন হুনায়নের যুদ্ধে পরাজিত গোত্রপতিদের পরিবার পরিজন ও সহায় সম্পত্তিকে গনীমতের মাল হিসাবে বন্টন করেছিলেন ? আচ্ছা হুনায়নের যুদ্ধে যদি কাফেররা বিজয়ী হত তাইলে কি তারা আমাদের কে কচুকাটা করত না ? অবশ্যই হুনায়নের যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজিত হলে এখন আর পৃথিবীতে একটি মুসলমানও বেঁচে থাকত না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধে পরাজিত গোত্রপতিদের পরিবার পরিজন ও সহায় সম্পত্তিকে গনীমতের মাল হিসাবে সাহাবীদের মাঝে বন্টন করে আরবের অন্যান্য কাফের গোত্রদের কে একটি শক্ত বার্তা দিয়েছিলেন যে ইসলামের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধ করতে আসলে তাদের পরিনতিও এই হুনায়নের যুদ্ধে পরাজিত এই গোত্রপতিদের ন্যায়ই হবে।

আপনি হয়ত এখন বলতে পারেন যে ঐ যুদ্ধবন্দী নারীদের কে সাহাবীদের মাঝে বন্টন করে দেবার কারন কি ? কিন্তু এটা কি সম্ভব যে ঐ মহিলারা খাবে দাবে কিন্তু তাদের জৈবিক চাহিদা পূরন করতে পারবে না। আর ইসলমের পর্দা প্রথার কারনে এটাও সম্ভব ছিল না যে কোন সাহাবীর তত্ত্ববধানে ঐ সব যুদ্ধবন্দী নারীদের কে সার্বক্ষনিক ভাবে রাখা। কারন এতে আরো ফেতনা ফাসাদ সৃষ্টি হয়ে যাবে। আর আপনারা একটু লক্ষ্য করে দেখুন এই হুনাইনের যুদ্ধে যেইসব যুদ্ধবন্দী নারী মুসলমানদের হস্তগত হয়েছিল তা কিন্তু এই হুনাইনের যুদ্ধ করতে আসা কাফেররাই নিয়ে এসেছিল। হুনাইনের যুদ্ধের ময়দানে যদি এই মহিলারা তাদের স্বামীদের সাথে না থেকে তাদের বাড়িতে বসে থাকত তাইলে কিন্তু তারা কখনই মুসলমানদের হাতে বন্দী হত না। তাই হুনাইনের যুদ্ধবন্দী নারীদের হস্তগত করারা ব্যাপারে সাহাবীদের কোন ভূমিকা নেই। বনু কোরায়জা বা হুনাইনের যুদ্ধের পরে যে নারী গুলি মুসলমানদের হাতে হস্তগত হয়েছিল এদের মাঝে একটা নারীকেও ধর্ষন করা হয় নি। প্রত্যেক নারীকেই সাহাবীদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হয়েছিল। সাহাবীরা পরে মুতা বিয়ের মাধ্যমে তাদের সাথে মিলিত হয়েছিল। ইসলামের মুতা বিয়ের আইন তখনই নাযিল হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে ইসলাম মুতা বিয়েকে হারাম ঘোষনা করেছে। আর হুনাইনের যুদ্ধের পর তাদের কাফের স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের কে যুদ্ধক্ষেত্রে রেখে পালিয়ে গিয়েছিল। এখন সাহাবীদের পক্ষে কি সম্ভব ঐ ৩০০/৪০০ মহিলাকে সারা জীবন দেখে শুনে রাখা ?

আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে যে ইসলাম মানে শান্তি নয় ইসলাম অর্থ হল আত্মসমর্পন। আরব উপদ্বীপে শিশু ইসলাম কে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মাঝে ২/১ টি কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহানুভবতার কারনেই কঠিন কঠিন অপরাধ করা সত্ত্বেও বনু নাদীরা, বনু কায়নুকা, বনু মোস্তালাক, খায়বারের ইহুদিরা ও আরবের কাফেররা বারবার প্রানে বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু মুসলমানরা যদি একবারও কাফের বা ইহুদীদের কাছে হারত তাইলে আরবের কাফের ও ইহুদীরা সবাই মিলে মুসলমানদের কে কচুকাটা করত। এখানে একটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার যে মুসলমানরা কোন যুদ্ধেই কাফেরদের কাছে পরাজিত হয় নি। কিন্তু আল্লাহ না করুক মুসলমানরা যদি কোন যুদ্ধে কাফেরদের কাছে পরাজিত হত তাইলে আজ বাংলাদেশে ইসলাম আসত না। আর মাদানী জীবনে কাফেরদের কাছে মুসলমানদের পরাজয় মানে কাফেররা সবাই মিলে মুসলমানদের কে নিশ্চিহ্ন করে দিত। ঠিক যেমনটি স্পেনের মুসলমানদের ক্ষেত্রে হয়েছিল।

আর সেইসব ইহুদীরা ও কাফেররা যদি সাহাবীদের সাথে যুদ্ধে জিতে যেত তাইলে কিন্তু তারাও সাহাবীদের কে দাস দাসীতে রূপান্তরিত করত। যুদ্ধ কোন মিঠা জিনিস না। সাহাবীরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই ঐ ২/৩ টা গোত্রের লোকদের কে দাস দাসী বানিয়েছিলেন যেন কাফের ও ইহুদীরা মুসলমানদের কে ভয় পায়। আর এই দাস দাসী বানানো টা কিন্তু ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের বিধানমতেই হয়েছিল। একপেশে চিন্তা ভাবনা না করে আপনারা please উভয় দিকের ব্যাপারটাই চিন্তা করুন। তাইলেই আপনার সব প্রশ্নের উত্তর খুজে পাবেন ভাই। আর কোন মুসলমান কে কখনই দাস দাসী বানানো যায় না। আমরা হলাম মুসলমান তাইলে পাকিস্তানীরা আমাদের কে কিভাবে দাস দাসী বানাবে ? পাকিস্তানীরা ৭১ সালে আমাদের উপর যা করেছিল তা ছিল সুস্পষ্ট জুলুম। আর এই জুলুমের প্রতিদান এখন পাকিস্তানীরা নিজেরাই বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একজন আরেকজন কে বোমা মেরে হত্যা করে পাচ্ছে।

অনেকেই বলে থাকেন যে আল কোরআনে কেন আল্লাহ সুবহানাতায়ালা দাস দাসী প্রথা হারাম ঘোষণা করে কোন আয়াত নাযিল করল না। আচ্ছা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা যদি সেই সময়ে দাস দাসী প্রথা হারাম ঘোষণা করে কোন আয়াত নাযিল করতেন তাইলে তো কাফের ও ইহুদীরা আরো বেশী করে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে জড়িত হত কারন তারা ভাল করেই জানত যে আমরা যুদ্ধে পরাজিত হলেও মুসলমানরা আমাদের কে দাস দাসী বানাবে না। মাদানী যুগে ২৭ টা যুদ্ধ হয়েছিল আর আল কোরআনে দাস দাসী প্রথা হারাম ঘোষণা করে কোন আয়াত নাযিল করলে তো সেই মাদানী যুগেই মুসলমানদের সাথে কাফেরদের ২৭০০ টা যুদ্ধ হত। তাই মুসলমানদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই সেই সময়ে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা দাস দাসী প্রথা হারাম ঘোষণা করে কোন আয়াত নাযিল করেন নি।

আপনাদের হয়ত মনে আছে যে বদর যুদ্ধের আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ সুবহানাতায়ালার কাছে দোয়া করে বলেছিলেন যে আজ যুদ্ধে যদি মুসলমানরা হারে তাইলে এই দুনিয়ায় তোমার নাম নেবার মত আর কেউ থাকবে না। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব ভাল করেই জানতেন যে যে কোন একটা যুদ্ধে কাফেরদের কাছে আমাদের পরাজয় মানেই হল নিশ্চিত মৃত্যু। তাই ঘরের শ্ত্রু বিভীষণ ও আশপাশের শ্ত্রুদের কে শায়েস্তা করার জন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মাঝে কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা না হলে কাফের ও ইহুদীরা একটার পর একটা আক্রমন মুসলমানদের কে করেই যেত।

এই যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সারা জীবনে এত এত কাফের/ইহুদীদের কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু চাইলেই পারতেন ঐ সকল কাফের/ইহুদীদের কে হত্যা করতে বা দাস দাসী হিসাবে বাজারে বিক্রি করে দিতে। ইহুদী ও কাফেরদের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই মহানুভবতা গুলি কিন্তু নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা সব সময় পাশ কাটিয়ে যায়। নাস্তিকরা সারাদিন খালি বনু কোরায়জা গোত্র আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে অশ্লীল কবিতা রচনাকারী কাব ইবনে আশরাফের হত্যার ঘটনা গুলিই ফুলিয়ে ফাপিয়ে সবার কাছে প্রচার করে। আরে সেই সময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি দুই একটা কঠোর সিদ্ধান্ত না নিতেন তাইলে কাফেররা ও ইহুদীরা মিলে সকল সাহবীদের কে হত্যা করে ফেলত। সীরাত সম্পর্কে সঠিক পড়াশুনা না থাকায় শার্ট প্যান্ট পড়া অনেক মুসলমান ছেলেই নাস্তিকদের কথায় এখন বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই মুক্তমনাদের ভণ্ডামি জানার জন্য যারা এখনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী ভাল ভাবে পড়েননি তাদের কে সীরাতে ইবনে হিশাম/নবীয়ে রহমত/আর রাহিকুল মাখতুম পড়ার অনুরোধ করছি। সত্যিকথা বলতে কি আমরা আমাদের নিজেদের জীবন সম্পর্কে যতটুকু জানি এর চেয়েও বেশী আমাদের কে জানতে হবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন সম্পর্কে। তাইলেই আমরা মুক্তমনাদের ভণ্ডামি গুলি নিজেরাই ধরতে পারব। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের সবাইকে সীরাত পড়ার তওফীক দান করুক।

তথ্যসুত্রঃ ১.সীরাতে ইবনে হিশাম,
২.আর রাহীকুল মাখতুম,
৩.আস সীরাতুন নাবাবিয়্যা/নবীয়ে রহমত [ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত]

ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:১০ | বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com