| রবিবার, ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট
রাজু হাওলাদার : বরগুনা জেলা প্রতিনিধি: ১৯৯৪ সালে জন্ম তার। বয়স ২৩ পার হয়নি এখনও। এরই মধ্যে তিনি খুঁজে নিয়েছেন নিজের কর্মসংস্থান। নিজ বুদ্ধিমত্তায় ঘরে বসেই প্রতিমাসে আয় করছেন ৫০ হাজারেরও বেশি টাকা। তার এই কর্মসংস্থানের জন্যে লাগেনি কোন রাজনৈতিক পরিচয়। লাগেনি কোন প্রভাবশালী স্বজনের ফোন কিংবা কোন উৎকোচও। তাহলে কী করে সম্ভব?
না, অলীক কোন গল্প নয়। সদ্য কৈশোর ডিঙ্গানো তরুণ বরগুনার আব্দুর রহমান তানভীর প্রতি মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা রোজগার করছেন কাজ করেই। আত্মপ্রত্যয়ী তানভীর ঘরে বসেই বানিয়ে দেন কারও লোগো, কারও বিজনেস কার্ড, কারও বা কোন বুকলেট। বিনিময়ে পেয়ে যান ন্যায্য মজুরী। মজুরী পেতেও নেই কোন হ্যাঁপা। কাজ হাতে পেয়ে দু’পয়সা কম দেয়ার কথাও বলেন না কোন ক্রেতা। নির্দিষ্ট ব্যাংকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই জমা হয়ে যায় তার প্রাপ্য মজুরী।
পটুয়াখালী পলিটেকনিক্যাল ইন্ন্সটিটিউট থেকে সবে সিভিল ইঞ্জনিয়ারিং পাশ করেছেন তানভীর। সহপাঠী বন্ধুরা যখন চাকরির খোঁজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ঘুরছেন ঢাকার তপ্ত রাজপথে, তখন বরগুনার তানভীর প্রতিমাসেই ঘরে বসে রোজগার করছেন নিজের ইচ্ছে মত। তানভীরের পক্ষে এসবই সম্ভব হয়েছে আত্মবিশ্বাস আর লেগে থাকার গুনে। শৈশব থেকেই মোবাইল ফোন, কমম্পিউটার আর ল্যাপটপের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিলো তানভীরের। ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেই তানভীর জানতে পারেন আউটসোর্সিংয়ের সব খবর। নিজ আগ্রহেই জেনে নেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের এপিঠ ওপিঠ। সর্বশেষ বাবার অনুপ্রেরণায় লেগে যান আউটসোর্সিং এর কাজে।
তার কাছে সাক্ষাত করতে গেলে.. বরগুনার তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তানভীর বলেন, বিশ্ব জুড়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের যে বাজার তা বরগুনার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের তরুণদের জন্যেও এখন উম্মুক্ত। আত্মবিশ্বাস নিয়ে লেগে থাকলে যে কেউই এখানে সফল হতে পারেন। দুই থেকে তিন বছর একটানা লেগে থাকতে পারলে বাংলাদেশের যে কোন চাকরির তুলনায় ফ্রিল্যান্সিং করে স্বাধীনভাবে অনেক বেশি উপার্জন করা সম্ভব বলে জানান তানভীর। তানভীর বলেন, তিনি আর্নিং-এর জন্যে যতটা না আগ্রহী তার থেকে এখনও অনেক বেশী আগ্রহী লার্নিংএ। তিনি বলেন, এখনও অনেক শেখার আছে তার। তাই উপার্জনের চেয়ে এখনও অনেক বেশি সময় ব্যয় করেন তিনি শেখার কাজে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক ড. মহা: বশিরুল আলম বলেন, সারা বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইসিটি খাত এখন অন্যতম প্রধান। এ খাত থেকে বরগুনার তানভীরের মত সারা দেশের সহস্র তরুণের হাত হয়ে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা আয় করছে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভিশন নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের শুভ সূচনা করেছিলেন, তা আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তানভীরের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে বরগুনার সর্বস্তরের তরুণ প্রজন্মকে আউটসোর্সিং বিষয়ে অধিকোতর জ্ঞানার্জণের আহবান জানান জেলা প্রশাসক ড. মহা: বশিরুল আলম।
বরগুনার দারুল উলুম কামিল মডেল মাদ্রাসা থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পটুয়াখালী পলিটেকনিক্যাল ইন্ন্সটিটিউট থেকে চলতি বছর সিভিল ইঞ্জনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন তানভীর। বরগুনার চরকলোনী এলাকার হাফেজ মোঃ রফিকুল ইসলামের দুই মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে সবার বড় তানভীর। মা সাইয়েদা মরিয়ম একজন গৃহিনী। তানভীরের ছোট দুই বোনের মধ্যে মাহবুবা ইসলাম উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। অপর ছোট বোন মাহমুদা ইসলাম হাফেজী পড়ছে এবং ছোট ভাই মাহমুদুর রহমান তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তানভীরের দাদা আলহাজ্ব আইয়ুব আলী ওরফে আইয়ুব আলী হাজী বরগুনার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। নানা ডাঃ আব্দুল আজিজ একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক।
Posted ১১:৩৯ | রবিবার, ০৮ জানুয়ারি ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin