বুধবার ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নবীজির প্রিয় সুন্নত মিসওয়াক

  |   বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট

নবীজির প্রিয় সুন্নত মিসওয়াক

মুফতি শামসুর রহমান পোরশা 

miswak

কাকরাইল, বায়তুল মোকাররম মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে বিদেশ থেকে আমদানি করা জয়তুন, তুঁতসহ নানা ধরনের মিসওয়াক কিনতে পাওয়া যায়। দেশের অভ্যন্তরেও মিসওয়াক আমদানি-রফতানি করা হয়ে থাকে। ছবিতে মিসওয়াকের বান্ডিল দেখা যাচ্ছে

রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যখনই জিবরাঈল (আ.) আমার কাছে আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য বলতেন। যাতে আমার ভয় হতে লাগল যে, মিসওয়াক করতে করতে আমি আমার মুখের সম্মুখ দিক ক্ষয় করে দেব।’ (মিশকাত : ১/৪৫)

মিসওয়াক রাসূল (সা.) এর এক অতি প্রিয় সুন্নত। বিভিন্ন হাদিসে মিসওয়াক করার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে বেশি বেশি মিসওয়াক করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যখনই জিবরাঈল (আ.) আমার কাছে আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য বলতেন। যাতে আমার ভয় হতে লাগল যে, মিসওয়াক করতে করতে আমি আমার মুখের সম্মুখ দিক ক্ষয় করে দেব।’ (মিশকাত : ১/৪৫)।

রাসূল (সা.) আপন উম্মতকে মিসওয়াকের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘যদি উম্মতের কষ্ট ও অসুবিধার কথা চিন্তা না করতাম, তাহলে প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক তাদের ওপর আবশ্যক করে দিতাম।’ (মুসলিম : ১/১২৮)।

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মিসওয়াক সম্পর্কে আমি তোমাদের অতি গুরুত্বারোপ করছি।’ (নাসাঈ : পৃ. ৩)। মিসওয়াক সব আম্বিয়ায়ে কেরামের শরিয়তে সুন্নত ছিল। যেমন আবু আইউব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, চারটি বস্তু সব নবীদের সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। ১. মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা ২. সুগন্ধি ব্যবহার করা ৩. মিসওয়াক করা ও ৪. বিবাহ করা। (তিরমিজি : ১/২০৬)।

রাসূল (সা.) উম্মতদের মিসওয়াকের প্রতি গুরুত্বারোপ করার সঙ্গে সঙ্গে নিজেও মিসওয়াকের আমলের প্রতি অধিক যত্নবান ছিলেন। যেমন তাবেঈ হজরত শুরাইহ ইবনে হানি (রা.) বলেন, একবার আমি উম্মুল মোমেনিন হজরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল (সা.) যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন কোন কাজ সর্বপ্রথম করতেন? হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, মিসওয়াক। (মুসলিম : ১/১২৮)।

অন্যত্র হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) যখনই ঘুমাতেন রাতে হোক বা দিনে, অতঃপর জাগ্রত হতেন, তখনই মিসওয়াক করতেন অজু করার আগে।’ (আবু দাউদ : ১/৮)।

ইসলামী শরিয়তে মিসওয়াক করার মধ্যে অনেক বরকত ও ফজিলত রয়েছে। ওলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন, মিসওয়াকের ফজিলত প্রসঙ্গে প্রায় ৪০টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম।’ (নাসাঈ : পৃ. ৩)। অন্যত্র হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে নামাজের জন্য মিসওয়াক করা হয়, তার ফজিলত মিসওয়াকবিহীন আদায়কৃত নামাজের তুলনায় ৭০ গুণ অধিক।’ (মেশকাত : ১/৪৫)।

অন্য এক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি একটি মিসওয়াক দ্বারা মিসওয়াক করছি। এ সময় আমার কাছে দু’জন ব্যক্তি এলো, তাদের মধ্যে একজন অপরজন থেকে বড়। আমি ছোট ব্যক্তিকেই আমার মিসওয়াকটি দিয়েছিলাম। তখন আমাকে বলা হলো, (অহির মাধ্যমে) বড় ব্যক্তিকেই মিসওয়াকটি দিন। অতঃপর আমি মিসওয়াকটি বড় ব্যক্তিকে দিলাম। (মুসলিম : ২/২৪৪)।

ইসলামী আদবের একটি উৎকৃষ্ট শিক্ষা হচ্ছে মর্যাদাবান জিনিস বড়কে দেয়া। সুতরাং এ হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয়, মিসওয়াক অতি মর্যাদাবান জিনিস ।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, আমার কাছে মিসওয়াক সহকারে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা মিসওয়াকবিহীন ৭০ রাকাতের চেয়েও পছন্দীয়। (আবু নাঈম)।

বেনায়া গ্রন্থে আল্লামা আয়নি (রহ.) উল্লেখ করেছেন, হজরত ওমর (রা.) বলেন, মিসওয়াকের ফজিলতের ব্যাপারে সব ওলামায়ে কেরাম একমত। এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি। সবার কাছে মিসওয়াক সহকারে নামাজ আদায় করা মিসওয়াকবিহীন নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম।

এছাড়া মিসওয়াকের উপকারিতাও অনেক বেশি। আল্লামা ইবনে আবেদিন শামী (রহ.) উল্লেখ করেছেন, মিসওয়াকের উপকারিতা ৭০-এর অধিক। তন্মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র উপকার হচ্ছে মিসওয়াকের দ্বারা মুখের দুর্গন্ধ দূূর হয়। আর সর্বোচ্চ উপকার হচ্ছে মিসওয়াক করলে মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব হয়। (ফাতাওয়ে শামি : ১/২৩৬)।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মিসওয়াক করার মধ্যে ১০টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- নিয়মিত মিসওয়াক করলে মাড়ি শক্ত হয়, মুখ পরিষ্কার হয়, গলা থেকে কফ নিরাময় হয়, চোখের জ্যোতি বাড়ে, ফেরেশতা খুশি হয়, নামাজের সওয়াব বৃদ্ধি পায়, শারীরিক সুস্থতা লাভ হয়, সুন্নতের অনুকরণ হয় এবং দাঁতের হলুদ রঙ দূর হয়।

এছাড়া অনেক সাহাবায়ে কেরামও মিসওয়াকের ফজিলত বর্ণনা করেছেন। হজরত আলি ও ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মিসওয়াককে আবশ্যকীয় কর। অলসতা না করে সর্বদা মিসওয়াক কর। কেননা এর মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে এবং মিসওয়াকের দ্বারা নামাজের সওয়াবও বৃদ্ধি পায়।

অন্যত্র হজরত আলি (রা.) বর্ণনা করেন, মিসওয়াক মেধাকে বৃদ্ধি করে এবং কফ দূর করে। মিসওয়াক তিক্ত বৃক্ষ হওয়া উচিত। তবে পিলু বৃক্ষের মিসওয়াক উত্তম। কেননা, হাদিস শরিফে পিলু বৃক্ষের কথা উল্লেখ হয়েছে। (মাজাহেরে হক জাদিদ : ১/৩৭৩)।

মিসওয়াক লম্বায় এক বিঘত ও মোটায় কনিষ্ঠ আঙুলের পরিমাণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। (হেদায়া, হাশিয়া : পৃ. ১৮)।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:০৮ | বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com