রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

তারেককে নির্যাতন করেছেন একজন লে. কর্নেল!

  |   বুধবার, ১৮ জুন ২০১৪ | প্রিন্ট

তারেককে নির্যাতন করেছেন একজন লে. কর্নেল!

 

moin uddin

ওয়ান ইলেভেনে সেনা সমর্থিত সরকারের সময় আটক তারেক রহমানকে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল নির্যাতন করেছেন বলে দাবি করেছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ। নিউইয়র্কে বাসরত বিতর্কিত সাবেক সেনাপ্রধান সে সময়ের ঘটনাবলী নিয়ে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেছেন বলে জানিয়েছে শীর্ষস্থানীয় দৈনিক মানবজমিন।

মইন উ বলেছেন, তারেক রহমানকে টর্চার করেছে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল। এ খবর জানার পর সংশ্লিষ্ট অফিসারকে সরিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে কেবল একজন সেনা কর্মকর্তার পক্ষে তারেক রহমানকে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা এবং তার কোমরের হাড় ভেঙে দেয়ার মতো কাজ করা সম্ভব কিনা তার এই বক্তব্যে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। হয়তো নিজকে বাঁচিয়ে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী সাবেক এই সেনাপ্রধান।  গত ১২ই জুন নিউইয়র্কের বাসায় দেয়া সাক্ষাৎকারে এছাড়া সাবেক এই জেনারেল মইন নির্বাচনকালীন সমঝোতা, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে ব্যর্থতা, দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার, কিংস পার্টি গঠন, দেশে ফেরা না ফেরা নিয়ে কথা বলেন।

মইন উ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আমার নিজ নামে বাড়ি নেই। সবাই বলেন- আমরা নাকি কোটি কোটি টাকার মালিক। কেউ বিশ্বাস করবে কিনা যে, আমরা এখানে আমার মামার বাসায় থাকি। যখন নিউ ইয়র্কে এসে বিপদে পড়লাম, তখন পথঘাট কিছুই চিনতাম না। রাস্তায় রাস্তায় কাঁদতাম বাইরে বের হলে, কারণ অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।’

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার ৩০০-৫০০ কোটি টাকা নেই। অত টাকার মালিক হলে নিউ ইয়র্কের মতো একটি জায়গায় আমাকে এত কষ্ট করে থাকতে হতো না। অনেক ভালো থাকতে পারতাম। এখানে আমার একটি গাড়ি নেই। আমাকে ডাক্তারের কাছে গেলে যেতে হয় বাসে করে।’

বিতর্কিত এই সেনাপ্রধান বলেন, ‘এখানে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আসিনি। একটু সুস্থ হলেই দেশে ফিরবো। এসেছিলাম দুই মাসের জন্য ছেলের কাছে বেড়াতে, কিন্ত ওই সময় কাঁধে ব্যথা দেখা দিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরা ধরা পড়লো ক্যানসার। কেমো দিতে হলো। বোনমেরু ট্রান্সপ্লান্টেশন হলো।’

নির্বাচন তিনমাসের স্থলে দুইবছর কেন লেগেছে এমন প্রশ্নে কৌশলী জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখুন ওই সময় ওই সরকারের মেয়াদ দুই বছর করা হয়েছিল মূলত একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা করার জন্য।’

কিং পার্টি নিয়ে এক প্রশ্নে মইন উ বলেন, ‘আমি কখনোই রাজা ছিলাম না। আমার কথায় কিছুই হতো না, কেবল আমার বাহিনী ছাড়া। আমাদের যেখানে সম্পৃক্ততা ছিল সেখানে ছাড়া কাজ করতাম না। সব সরকারের উপদেষ্টারাই করতেন।’

দু’নেত্রীকে গ্রেপ্তার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেখুন- এটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ দুই নেত্রীকে ধরার জন্য আমার কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা করেছে তারাই যারা দুর্নীতি দমনের জন্য কাজ করছিলেন। দুর্নীতি দমনের জন্য কমিটি ছিল। সেখানে একজন উপদেষ্টা দায়িত্বে ছিলেন। তারাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

তৎকালীন এই সেনাপ্রধান বলেন, ‘দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার বিষয়ে আমার কাছে সিদ্ধান্তের জন্য কোনো প্রস্তাব আসেনি। তবে আমি মনে করি ওই সময় দুর্নীতি দমন করার জন্য তারা যেটা ভালো মনে হয়েছে সেটা করেছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘দুই নেত্রীর সঙ্গে কোনো সমঝোতাও হয়নি। কেউ যদি সমঝোতা করে থাকে তাহলে সেটা তিনি নিজ উদ্যোগে করেছেন। আর আমার নাম বলে থাকলে সেটা তিনি বলতে পারেন তার স্বার্থ হাসিলের জন্য।’

শেখ হাসিনার নিরাপদ এক্সিট দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমরা কোনো বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। কারণ আমরা যখন যিনি সরকার থাকেন তার সঙ্গে কাজ করি।’

তারেক রহমানকে নির্যাতন প্রশ্নে মইন উ বলেন, ‘তারেক রহমানকে ধরে আনা হয়েছে এটা আমাকে জানানো হয়নি। পরে যখন জানতে পারলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাকে আনার পর টর্চার করা হয়েছে এমন একটা খবর আমার কাছে এলো।’

তিনি দাবি করেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ডেকে পাঠালাম, কেন তাকে মারা হয়েছে এটা জানার জন্য। তিনি তাকে মারা হয়নি বলে জানালেন। এটাও বললেন যে, তিনি ভালো আছেন। টিভিতে দেখা গেল তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন।’

‘এর কারণ জানতে চাইলে আমাকে জানানো হলো তিনি নাকি বগুড়ায় একবার সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যথা পান। এই জন্য তার পায়ে ও কোমরে ব্যথা রয়েছে। এখন ব্যথা বেড়েছে তাই খুঁড়িয়ে হাঁটছেন’ যোগ করেন এই সাবেক জেনারেল।

তিনি বলেন, ‘তাকে নির্যাতন করা হয়েছে এটা আমি যখন শুনলাম তখন ওই অফিসারকে বদলি করে দিলাম অন্যত্র।’

প্রয়োজনের বাইরে কোনো কাজ করেননি দাবি করে বাংলাদেশের রাজনীতি ধ্বংস করে দেয়া মইন উ বলেন, ‘আমি নাকি তারেক রহমানকে মারতে বলেছি এটা কখনো হয়। এটা অসম্ভব। কারণ তাকে যে নির্যাতন করেছে বলে পরে জানা গেছে তিনি ছিলেন একজন লে. কর্নেল।’

উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, ‘আপনি বলুন- একজন জেনারেল কি কখনো একজন লে. কর্নেলকে কোনো নির্দেশনা দেয়। আমি বললে কী তাকে মারার জন্য লে. কর্নেলকে বলতাম। আমিতো বললে ডিজি ডিজিএফআইকে বলতাম। তাকে জিজ্ঞেস করেন, সেই বলুক- আমি তাকে ডেকে বলেছি কিনা তারেক রহমানকে নির্যাতন করার জন্য। এটা তিনি বলতে পারবে না।’

এক প্রশ্নে  রাজনৈতিক এই উচ্চাভিলাষী সাবেক এই জেনারেল বলেন, ‘আমি কিংস পার্টি করিনি, কাউকে করতেও বলিনি। আমার নাম দিয়ে নাকি কিংস পার্টি গঠন করার চেষ্টা হয়েছে- এমন খবর এলো।’

তিনি দাবি করেন, ‘ঢাকায় এজন্য মোটরসাইকেল দিয়ে শোডাউনও করা হলো। আমি যখন এটা শুনলাম সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করতে বললাম। এটাও বললাম যে, আমি কোনো পার্টি করবো না এবং ক্ষমতাও নেব না, সুতরাং এগুলো চলবে না। সব বন্ধ করো। এরপর আর কিংস পার্টির কোনো অনুষ্ঠান হয়নি।’

রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ আড়াল করে এক প্রশ্নে মউন উ বলেন, ‘আমি কোনোদিন প্রেসিডেন্ট হতে চাইনি। প্রেসিডেন্ট হতে চাইলে হতে পারতাম। সেই সুযোগ ছিল।’

লাইনচ্যুত ট্রেন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব ছিল ট্রেন লাইনে ওঠানো। সেটা খাদ থেকে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্ত সেটা এখন চালাচ্ছে অন্যরা, তারাই ভালো বলতে পারবে। লক্ষ্য ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন করা, সেটা করেছি।’

সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ এটা এমনভাবে বলবো না। কারণ আমরা চেষ্টা করেছি সফল হতে। সরকারকে সহায়তা করেছি। আর বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কথা বলছেন, সেটা কারো কারো ব্যাপারে হতে পারে। তবে আমি চেষ্টা করেছি কোনো ব্যক্তিগত লোভ-লালসা কিংবা স্বার্থের কারণে যাতে মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত না হয়।’

জেনারেল মাসুদকে নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেখুন আমি তার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছুই বলতে চাই না। তবে এটা বলবো যে, তিনি আগের মতো করে কাজ করতে পারলেন না। কী কারণে তাকে সরে যেতে হলো এটা তিনি ভালো করেই জানেন। আমি তা বলতে চাই না। তবে আমি মনে করি না, যা করেছি তা শতভাগ সঠিক করেছি, তবে চেষ্টা করেছি। আমারও ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে, কিন্তু আমার ব্যক্তিস্বার্থ বড় ছিল না।’

পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে এক প্রশ্নে মইন উ বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা কোনো টাকাই বানায়নি। তাদের ব্যবসা রয়েছে, তারাতো নতুন ব্যবসায়ী নয়। আমার ভাইয়েরা আমার কাছ থেকে ওয়ান ইলেভেনের সুবিধা পায়নি। তা পেলে তারা প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হতে পারতো, কিন্তু তা পারেনি।

‘নির্বাচনেও দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়েছে। আমি ফেভার করলে কি সেটা হতো, সেতো পাস করতো। বিশ্বাস করবেন কিনা, আমার বাসায় তাদের যাওয়াও নিষিদ্ধ ছিল। ওয়ান ইলেভেনের সময় যাতে বদনাম না হয়। তাদের বলেছি, তোমরা আমার এখানে ঘন-ঘন আসবে না, এলে বদনাম হবে। আমি চাই না, কোনো বদনাম হোক। এই কারণে তারা আমার বাসায় ওই দুই বছরে আসার সুযোগ তেমন পেত না’ দাবি করেন তিনি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:০২ | বুধবার, ১৮ জুন ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com