সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে পাত্তা না দিয়ে ভুগছেন খালেদা

  |   শনিবার, ০৭ জুলাই ২০১৮ | প্রিন্ট

ছয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে পাত্তা না দিয়ে ভুগছেন খালেদা

যেসব মামলার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে সেসব মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে তিনি বা তার আইনজীবীরা পাত্তাই দেননি এতদিন। অথচ এখন বিচারিক আদালত থেকে উচ্চ আদালতে দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে তাদের।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তারি হয়ে কারাগারে যাওয়া বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আগেই অন্তত পাঁচটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের নানা সময় এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে পরোয়ানাগুলো জারি হয়। কিন্তু পুলিশ যেমন বিএনপি নেত্রীকে গ্রেপ্তার না করে অপেক্ষার নীতিতে ছিল, তেমনি খালেদা জিয়া এবং তার আইনজীবীরাও ছিলেন নিষ্ক্রিয়। আদালতে আইনজীবী পাঠিয়ে সে সময় মামলাগুলো মোকাবেলায় তারা তেমন গা করেননি।

অথচ দণ্ড হওয়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় প্রায় দেড় মাসেরও বেশি সময় আগে জামিন হয়ে গেলেও সেই ছয় মামলার কারণে বের হতে পারছেন না বিএনপি নেত্রী।

খালেদা জিয়ার কারামুক্তি না হওয়ার কারণ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের ভুল ছিল বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আইনজীবীদের ভুলের কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে।’

ওই বক্তব্যের বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, আইনজীবীদের ভুল নয়, সরকারি কূটকৌশলে খালেদা জিয়া বন্দী থাকছেন।

তবে এর মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা কুমিল্লার তিনটি, ঢাকার দুইটি এবং নড়াইলের একটি মামলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মামলার আদেশ হওয়ার সময় খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা আদালতে গিয়ে বক্তব্য রাখেননি। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা নিজেদের মতো চেষ্টা করে গেছেন।

আবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও খালেদা জিয়া মাসের পর মাস আদালতে হাজির হয়ে বক্তব্য দেননি বা তার আইনজীবী প্যানেলের কেউ আদালতে গিয়ে আবেদন জানাননি। অথচ যে দুটি মামলায় তিনি নিয়মিত হাজিরা দিয়েছেন, সেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তিনি বরাবরিই জামিন পেয়েছেন।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও খালেদা জিয়ার আদালতে না যাওয়ার বিষয়ে তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন  বলেন, ‘কোনো সুযোগ ছিল না।’ তবে কেন সুযোগ ছিল না, সেই কথাটি বলেননি তিনি।

খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগে এসব মামলা করেছে। যাদের মামলা দায়েরের অধিকারই নেই, আদালত তাদের মামলা নিয়েছে। এখন আমরা আদালতে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করলেও সেই আবেদন গ্রহণ করছে না।’

সেই ছয় মামলা

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা বিরূপ নিয়ে মন্তব্যের মামলা

২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খালেদা জিয়া ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে বলেন,  স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। একই সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ না করে তাঁকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তিনি স্বাধীনতা চাননি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।’

পত্রিকায় এই খবর পড়ে নড়াইলের নড়াগাতি থানার চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নড়াইল সদর আমলি আদালতে মামলা করেন।

২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। আর তার পক্ষে জামিনের আবেদন জমা পড়ে দেড় বছর পর গত ১৬ এপ্রিলে।

মামলাটি এখন তদারকি করছেন বিএনপির আইনজীবী নেতা মাসুদ আহমেদ তালুকদার। শুনানির প্রতিটি কর্মদিবসেই তিনি যাচ্ছেন জেলা শহরটিতে।

এই মামলায় বিএনপি নেত্রীর জামিন চেয় করা আবেদনের ওপর গত ২ জুলাই শেষ হয়েছে। আগামী ১৭ জুলাই আদেশের দিন ধার্য করেছে আদালত।

ভুয়া জন্মদিন মামলা

১৫ আগস্ট জন্মদিন না হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিন উল্লাস করতে জন্মদিন পালনের অভিযোগে এনে মামলাটি হয় ২০১৬ সলের ৩০ আগস্ট।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলামের এই মামলায় বিএনপি প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর। আর ১৬ মাস পর গত ২৫ এপ্রিল এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ততদিনে তিনি কারাগারে বন্দী।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবেদন করার প্রায় এক মাস পর ১৭ মে শুনানি হয়। সেদিন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের আদেশ দিয়ে ৫ জুলাই জামিন বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন। এ অবস্থায় তার জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালত আবেদনটি বিচারিক আদালতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। আর বিচারিক আদালতে ৫ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জামিন আবেদন নাকচ হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের মদদের মামলা

চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদেরকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। বাদী বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী।

এই মামলায় ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় বিএনপি প্রধানের বিরুদ্ধে। এই মামলাতেও তখন পাত্তা না দিয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার দুই মাস পর গত ১২ এপ্রিল খালেদা জিয়ার জামিন চান।

এই মামলাতেও হাইকোর্টে গিয়ে জামিন চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর গত ৫ জুলাই বিচারিক আদালতেও জামিন পাননি বিএনপি নেত্রী।

কুমিল্লায় বাসে পেট্রল বোমা হামলার দুই মামলা

২০১৫ সালের শুরুতে বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের সময় ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রল বোমা হামলা চালিয়ে আট জনকে হত্যার ঘটনায় দুই মামলার আসামি খালেদা জিয়া। এর একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। দুটি মামলাতেই হুকুমের আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে।

এর মধ্যে একটি মামলায় বিএনপি প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় যথাক্রমে ৯ অক্টোবর এবং ২ জানুয়ারি।

খালেদা জিয়ার মুক্তি আটকে যাওয়ার পর গত ২৮ মার্চ জামিন আবেদন করা হয় মামলা দুটিতে।

বিচারিক আদালতে আবেদনের পাশাপাশি উচ্চ আদালতেও জামিন চেয়ে আবেদন করা হয় দুটি মামলায়। সেটি গত ২০ মে।

এর মধ্যে একটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নাচক হয়েছে। আর একটি মামলায় হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। আগামী ১০ জুলাই এই আবেদনের ওপর শুনানি হবে।

কুমিল্লায় ভ্যানে হামলা মামলা

২০১৫ সালের ২৫ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের হায়দারপুল এলাকায় কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। এ মামলায় ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। মামলাটি বর্তমানে কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন।

মামলায় ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর অভিযোগ আমলে নেন আদালত। এই মামলায় কবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, এই তথ্যটিও জানাতে পারছেন না খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

এ মামলায় কুমিল্লা আদালতে খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করা হয় গত ২৩ এপ্রিল। আর ২০ মে যে তিন মামলায় বিএনপি নেত্রীর জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়, তার মধ্যে এই মামলাটিও ছিল।

গত ২৮ মে হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জামিন দেয়ার পর আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আর সব প্রক্রিয়া শেষে গত ২৬ জুন আপিল বিভাগও জামিন বহাল রাখে।

ঢাকাটাইমস

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৩:০১ | শনিবার, ০৭ জুলাই ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com