শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

চট্টগ্রামে নানা কৌশলে চলছে ভর্তি বানিজ্যের নামে ভর্তিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের মহোৎসবঃ শিক্ষা ও জেলা প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতা

  |   সোমবার, ২১ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট

চট্টগ্রামে নানা কৌশলে চলছে ভর্তি বানিজ্যের নামে ভর্তিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের মহোৎসবঃ শিক্ষা ও জেলা প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতা
এ বি রাজু, চট্টগ্রাম থেকে :  চট্টগ্রামে অনেক বেসরকারি স্কুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তির নীতিমালা না মেনে নতুন ভর্তির ক্ষেত্রে আদায় করা হচ্ছে ইচ্ছেমত ফি। আবার অনেক স্কুলে নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি ফি ৩ হাজার টাকা রাখলেও মাসিক বেতন বাড়ানো হয়েছে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। আবার অনেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে অতিরিক্ত টাকার রশিদ দিচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি স্কুল-স্কুল এন্ড কলেজ মাধ্যমিক, নি¤œ মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় ১ হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২ হাজার টাকা এবং ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি হবে না।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে সেশন চার্জ নেয়া গেলেও পুনঃভর্তির ফি নেয়া যাবে না। নগরীতে অতিরিক্ত ফিস আদায়, ভর্তি বানিজ্য নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াছ হোসেনের কাছে একটি তালিকা হস্তান্তর করেছেন এবং বিগত বছরগুলির ন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে মতবিনিময় সভা আহবান করার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন এক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছেন বলে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
ক্যাব চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে প্রেরিত অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে এসব স্কুলের মধ্যে চট্টেশ^রী রোডে অবস্থিত চিটাগাং ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুলে নতুন ভর্তিতে নেয়া হচ্ছে ১৫ হাজার ৬০০ টাকা। নাসিরাবাদে সানসাইন গ্রামার স্কুলে উন্নয়ন ফি ৯ হাজার এবং ভর্তি ফি ৫ হাজার টাকা। চাঁন্দগাও আবাসিকে ফুলব্রাইট টিউটোরিয়াল স্কুলে ৮ হাজার ৫০০ টাকা, ব্রাইট ফোর টিউটেরিয়াল, ৮ হাজার ৫০০ টাকা, বেপজা স্কুল এন্ড কলেজে ১০ হাজার ২০০ টাকা, টিএসপি কমপ্লেক্স ম্যাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫ হাজার টাকা এবং মেহের আফজল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৪০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও, জামালখানে শাহওয়ালী উল্লাহ ইনস্িটটিউটে ভর্তিতে ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং খাজা রোড়ে ইয়ং ওমেন’স ক্রিস্টিয়ান এসোসিয়েশনে (ওয়াইডাব্লিউসিএ) ভর্তি ফি ৩ হাজার টাকা ছাড়াও আরো ৩ হাজার ৭৫০ টাকাসহ মোট ৬ হাজার ৭৫০ টাকা, জামালখানের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৮ হাজার ৫০০ টাকা, নাসিরাবাদ আবাসিকে  অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৫০ টাকা, মেহেদীবাগের বাংলাদেশ অ্যালিমেন্টারী স্কুলে ৩ হাজার ৪০০ টাকা, জামাল খান এজি চার্চ স্কুলে  ৫ হাজার ১০০ টাকা, চরপাথরঘাট কর্নফুলী আইয়ুব বেবী সিটিকর্পোরেশন স্কুলে ৩ হাজার ২০০ টাকা,  ষোলশহর বন গবেষনাগার উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ১১০ টাকা আদায় করা হলেও রশিদ দিচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকার।
এবিষয়ে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন জানান, নগরীর অনেক বেসরকারি স্কুলে ভর্তি নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। তবে অভিভাবকরা অসহায়, অভিযোগ কার কাছে জানাবেন, কে তাদের কথা শুনবে? সে বিষয়ে পরিস্কার নির্দেশনা নেই? ভর্তি নীতিমালা আছে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে যথাযথ আইন না থাকায় প্রশাসন অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। একই সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্তঃ সমন্বয় খুবই দুর্বল। অনেক সময় অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অন্য উইং তাদেরকে পাঠদান অনুমতি প্রদান করছে। আবার শিক্ষা বোর্ড তাদের পরিচালনা কমিটি অনুমোদন দিচ্ছে। অনেকে আবার উচ্চ আদালত থেকে রায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছেন। অভিভাবকদের অভিযোগের বিষয়টি আমরা লিখিত ভাবে জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু জেলা প্রশাসন এবিষয়ে উদ্যোগ নিতে কালক্ষেপন করছেন। বিগত ২০১৬ ইং থেকে ক্যাব চট্টগ্রাম ভর্তি বানিজ্যে অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, শিক্ষা অফিস ও ক্যাবের প্রতিনিধি সমন্বয়ে তদন্ত টিমের মাধ্যমে সরেজমিনে পরির্দশন করে প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছিলো। একই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধানদের সাথে দফায় দফায় সভা করে ভর্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা পালনে প্রতিষ্ঠানগুলিকে উদ্ধুদ্ধকরণ করা হয়েছিলো। কিন্তু এবার জেলা প্রশসান, শিক্ষা বোর্ড ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরকে অনুরোধ করা সত্বেও তাঁরা ব্যবস্থা নিতে অহেতুক বিলম্ব করছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ভর্তি বানিজ্য বন্ধে ক্যাব, জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিস সমন্বয়ে একটি তদারকি মডেল সফল ভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। যার সুফল অভিভাবরা ইতিমধ্যেই পেয়েছেন। ১১টি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছিলো। আমরা আশা করি নতুন শিক্ষা মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী মহোদয় চট্টগ্রামে ভর্তি বানিজ্য বন্ধে চট্টগ্রামের মডেল সফল করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৯:২৭ | সোমবার, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com