ঢাকা, ১৯ এপ্রিল  : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশে অতিদ্রুত নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। জনগণের আন্দোলনের মুখে এই সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। সরকারকে তাদের সকল কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের কাছে হিসাব দিতে হবে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে প্রধাণ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত। দেশে গণতন্ত্র নেই বলেই শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, কর্মকর্তাদের যখন তখন বদলী করা হচ্ছে, মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনা, আইনের শাসন অনুপস্থিত, যাকে তাকে ধরে নিয়ে গুম খুন করা হচ্ছে। তাই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বর্তমান অবৈধ সরকার বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না। তারা মনে করেছে এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে পার পেয়ে যাবে। কিন্তু তাদের এই স্বপ্ন কখনো পুরণ হবেনা। এই সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। সেই সাথে তাদের সকল কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের কাছে হিসাবও দিতে হবে।

দেশে আজকে মানুষ ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ নেই মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এই অবৈধ সরকার প্রশাসন ব্যাবস্থা, বিচার বিভাগ, পাবলিক সার্বিস কমিশন, দুদক, নির্বাচন কমিশনসহ সব সেক্টরেই দলীয়করণ করেছে। ফলে মাুনষ ন্যায়বিচার পায়না, চাকরী পায়না। দেশে আজকে মানুষ ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ নেই। প্রতিদিনই গুম খুনের পরিমান বাড়ছে।

বিএনপির আন্দোলন সফল হয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, যারা মনে করেন বিএনপির আন্দোলন ব্যার্থ হয়েছে বা বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনা তাদের ধারণা ভুল। গত কয়েক মাসে সারা দেশে যেভাবে সরকারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ওঠেছে তা ইতিহাসে বিরল। সরকার বিরোধী এই আন্দোলনে বিএনপির তিন শতাধিক নেতাকর্মী নিহত, ৬০ জনের অধিক গুম ও হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাবরণ করেছে।

তিনি বলেন, আসলে বিএনপিই আন্দোলনের দল। আওয়ামীলীগ আন্দোলন করতে জানেনা। তারা জানে শুধু আঁতাত করতে। দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় বিএনপির আন্দোলন চলছে চলবে।

আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে আ’লীগ কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। অথচ সীমান্ত পারি দেওয়া ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে তাদের কোন অবদান নাই। খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা অভিযোগ করেন মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানকে নাকি দেখেন নাই। দেখবেন কিভাবে? উনিতো রণাঙ্গনে ছিলেন। আর আপনারা ছিলেন থিয়েটারে। সেখানে আনন্দ ফূর্তি করেছেন।

গত ৫ বছরে দেশে নতুন কোনো শিল্প -কারখানা হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, দেশে নতুন কল-কারখানাতো হয়নি বরং গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটে অনেক কারখান বন্ধ হয়ে গেছে। দেশী বিদেশী বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাচ্ছে। অথচ বিদেশীরা কাজ পাচ্ছে। গার্মেন্টসগুলোর কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়ে তারা আমাদের দেশের টাকা বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের লাভ হচ্ছেনা। আমাদের জনশক্তি রফতানিও কমে যাচ্ছে। সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে একের পর এক দেশ বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিতে অস্বীকার জানাচ্ছে। এতে আমাদের রেমিট্যান্স আহরণ কমে যাচ্ছে।

দেশের ও কৃষকের উন্নয়নে জিয়াউর রহমানের খাল খনন কার্যক্রম পুনরায় চালুর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আজকে কৃষি পণ্যের চেয়ে কৃষি উপকরণের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে, নদীগুলোতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খনন কাজ চালাতে হবে, চাষাবাদের জন্য বিকল্প পানির সন্ধান করতে হবে। নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। কৃষকদের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির সমর্থনের কথা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি গণমানুষের কৃষকের শ্রমিকেরই দল। এসময় তিনি কোটি কোটি টাকা খরচ করে টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন ও লাখো কন্ঠে সোনার বাংলা সঙ্গীত গাওয়ারও সামলোচনা করে। তিনি বলেন, এভাবে টাকা নষ্ট না করে ঐ টাকা দিয়ে কৃষকদের ভুর্তূকী দিলে তাদের উপকার হতো।

সরকারকে আলোচনায় বসার আহবান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। আপনারা আমাদের শত্রু নন। আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান বের করে আনতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কারন আমাদের আছে দক্ষ ও পরিশ্রমি জনগণ। এরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শ্রমিক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মুজিবুর রহমান সারোয়ার, জাফরুল হাসান প্রমুখ।