শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

কাদের মোল্লার ফাঁসিতে পাকিস্তানিরা মর্মাহত: সৌদির হস্তক্ষেপ চেয়েছিল তুরস্ক

  |   রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

pk
 

জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করায় বাংলাদেশের তীব্র সমালোচনা করে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ও সহমর্মিতার জন্যই কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ফাঁসি দেওয়ায় পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিক মর্মাহত। এর মধ্য দিয়ে পুরনো ক্ষত আবার নতুন করে উন্মুক্ত করা হলো। ‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত কাদের মোল্লার ফাঁসির পরদিন গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। একই দিন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করার কথা উল্লেখ করে বলেছে, অন্য কোনো দেশের বিষয়ে নাক গলানো পাকিস্তানের কাজ নয়। তবে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ পাকিস্তান আমলে নিচ্ছে। এদিকে তুরস্ক গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ফাঁসি না দিতে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেছিলেন। এ ছাড়া ফাঁসি ঠেকাতে হস্তক্ষেপের জন্য তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলু সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সউদ আল ফয়সালের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি না দিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল।
পাকিস্তানিরা মর্মাহত : পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরদিন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার পুরনো ক্ষত না খুলে দূরদৃষ্টি, বড় মন ও মহানুভবতার পরিচয় দিলে ভালো হতো।’ এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ ও তীব্র উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সৃষ্টির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি অবিভক্ত পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আজ প্রত্যেক পাকিস্তানি দুঃখিত ও মর্মাহত।’ তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ঘটনার পর ৪২ বছর পর কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক, মর্মান্তিক এবং অনেকে এক বিচারের নামে হত্যা বলছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায়ের সহমর্মিতার দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে অতীতকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের নতুন যুগের সূচনা করা উচিত বলে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন। বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া : বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত’ বলে মন্তব্য করেছেন এ দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে তাঁর (কাদের মোল্লার) অপরাধের জন্য আদালত তাঁকে শাস্তি দিয়েছেন। এতে সরকারের কিছুই করার নেই। এটি পুরোপুরিই আদালতের বিষয়।’
আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ফৌজদারি অপরাধ সময়ের সঙ্গে নিঃশেষ হয়ে যায় না। কাদের মোল্লার ক্ষেত্রেও এটি প্রমাণ হয়েছে। অ্যাডভোকেট কামরুল বলেন, ‘তাঁর (কাদের মোল্লা) ফাঁসির আদেশ কার্যকরের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটেছে।’ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব দাবি : ডন পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধিরা জাতীয় পরিষদে কাদের মোল্লার ফাঁসির নিন্দা জানাতে দৃশ্যত দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার পরই দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বাংলাদেশের সমালোচনা করে বিবৃতি দেন। তবে কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জাতীয় পরিষদে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন না চৌধুরী নিসার আলী খান।
পাকিস্তানের সংসদে জামায়াত-ই-ইসলামীর নেতা সাহিবজাদা তারিকউল্লাহ কাদের মোল্লার ফাঁসির নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব অনুমোদন করার ও তাঁর (কাদের মোল্লা) স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অধিবেশন একদিন মুলতবি রাখার আহ্বান জানান। আন্তপ্রদেশ সমন্বয়মন্ত্রী রিয়াজ হুসেইন পীরজাদা কাদের মোল্লার ফাঁসির ব্যাপারে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ঠিক করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংসদের অন্য দলগুলোর মতামত নেওয়ার জন্য সময় চান। স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত সময় দেন। পাকিস্তানের বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রেসিডেন্ট জাভেদ হাশমি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সংসদ সদস্যদের উদ্বেগের জবাব দেওয়ার জন্য দেশে কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেই। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ আগলে রেখেছেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত বিতর্কে আরো কয়েকজন সদস্য অংশ নিলেও তাঁরা কাদের মোল্লা প্রসঙ্গে বক্তব্য দেননি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য : পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার ‘বাংলাদেশ পরিস্থিতি’ শীর্ষক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বন্ধুপ্রতিম দেশ ও সার্কের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা পাকিস্তানের নীতিবিরুদ্ধ হলেও সাম্প্রতিক বিচারগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগকে আমলে নিচ্ছি। কারণ ওই বিচারগুলো বাংলাদেশে চলমান অস্থিতিশীলতায় বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আমরা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশি জনগণকে শুভ কামনা জানাই। আমরা আশা করি, সংঘাতমুক্ত পরিবেশে সমঝোতার চেতনা সমুন্নত থাকবে।’
ফাঁসির পর তুরস্কের প্রতিক্রিয়া : গত বৃহস্পতিবার কাদের মোল্লার ফাঁসির পরপরই তীব্র নিন্দা জানায় তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ ও পরামর্শ সত্ত্বেও জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় তুরস্ক গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে ও ধিক্কার জানাচ্ছে। এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা এড়াতেই তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত স্থগিত করার আহ্বান জানান। তুরস্কের হারিয়েত পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলু সাংবাদিকদের বলেছেন, কাদের মোল্লার ফাঁসি ঠেকাতে হস্তক্ষেপ করার জন্য তিনি সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সউদ আল ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘এভাবে অতীতের ক্ষত প্রশমন যেমন সম্ভব হবে না, তেমনি সামাজিক ঐকমত্যও প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা এবং ভবিষ্যতেও কার্যকরের মানসিকতা বাংলাদেশে আরো অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এ জন্য আমরা উদ্বিগ্ন।’
বিবৃতির শেষাংশে তুরস্ক বন্ধু ও ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশি জনগণের পাশে থাকার কথা জানায়। চলমান সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হবে বলেও দেশটি প্রত্যাশা করে। সৌদি আরব উদ্বেগ জানায়নি : সৌদি আরব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরোধী বলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রচার করা হলেও দেশটি ওই বিচারকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, সৌদি আরব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে কোনো উদ্বেগ জানায়নি। ওই দেশটিতেও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। এদিকে নিকটতম প্রতিবেশী ভারতও কাদের মোল্লার ফাঁসিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে অভিহিত করেছে। গত শুক্রবার নয়া দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এটি বাংলাদেশের আইন ও অভ্যন্তরীণ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২১:৫৩ | রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com