| শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট
শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ‘শ্রমিকদের রক্তের দাগে তৈরি পোশাক পশ্চিমা ক্রেতারা কিনবেন না’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন সিনেটর রবার্ট মেনেন্দেজ।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার এক বছর পূর্ণ হওয়ায় এক বিবৃতিতে আমেরিকার বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট বলেন, “বাংলাদেশের শ্রমিকদের রক্তের ছাপে তৈরি হওয়া পোশাক কিনবে না পশ্চিমা ক্রেতারা। বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর সম্মিলিত সংগঠন তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক সংস্থাকে (বিজিএমইএ) এই সহজ-সরল বার্তাটি বুঝতেই হবে।”
এক বছর আগের এই দিনেই বিশ্বকে চমকে দিয়ে বাংলাদেশে বহুতল ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় ভবনটিতে অবস্থিত বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানার অন্তত এক হাজার ১৩০ জন শ্রমিক নিহত হন। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করেন রবার্ট।
বাংলাদেশের পোশাক খাতে আরেকটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটা এখন সময়ের ব্যাপার এবং এরপর ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডে যে কলংকের দাগ পড়বে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোনো উপায় থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রবার্ট বলেন, শ্রমিক সংগঠনগুলো গঠন করার কাজ থেকে শ্রমিকদের বিরত রাখতে যেসব দমন-পীড়ন নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে সেগুলো প্রতিহত করতে বিজিএমইএ এবং বাংলাদেশ সরকার যদি অবিলম্বে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে বাংলাদেশের পোশাক খাতে আরেকটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অনেকের জন্যই রানা প্লাজা দুর্ঘটনা এক ধরনের সতর্কবাণী ছিল মন্তব্য করে রবার্ট বলেন, ওই দুর্ঘটনার পর মার্কিন সরকার বাংলাদেশকে দেয়া কিছু বাণিজ্যিক সুবিধা স্থগিত করেছে। বাংলাদেশ সরকার যতদিন না শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, ততদিন পর্যন্ত এসব সুবিধা স্থগিতই রাখবে আমেরিকা। বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও ইতিহাসের সর্ববৃহৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সমন্বিতভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে কাজ করছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ভবন সুরক্ষিত করতে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলেও জানান মার্কিন এই সিনেটর।
শ্রমিক নেতাদের ওপর মালিকপক্ষের হামলার নিন্দা জানিয়ে রবার্ট বলেন, “এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরেও পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের বিভিন্ন পক্ষের জন্য গত বছরটিও অন্যান্য বছরের মতোই শুধুই ব্যবসায়িক ছিল। শ্রমিকদের স্বার্থ আদায়ের জন্য শ্রমিক নেতারা ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টা করায় বাংলাদেশের অনেক পোশাক কারখানার মালিকই তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন, এমনকি বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, কিছু কিছু কারখানার ব্যবস্থাপকদের প্রত্যক্ষ মদদে ইউনিয়ন সংগঠকদের ওপরে বেশ কিছু ঘৃণ্য হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
বিজিএমইএ এখনো আগের মতোই মালিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মালিকপক্ষকে নিরাপত্তা দিতে তাদের প্রহরী হয়েই কাজ করে যাচ্ছে বিজিএমইএ। এমনকি সংস্থাটির যেসব সদস্যরা শ্রমিকদের ইউনিয়নবিরোধী হিসেবে কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার ব্যাপারেও বিজিএমইএ উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে।
শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের বিষয়ে সরকারের মধ্যে স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নতুন শ্রমিক ইউনিয়ন নিবন্ধনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কিছুটা অগ্রসর হলেও এখনো তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে। ফলে দেশটির শ্রমিক সংগঠনগুলো অত্যন্ত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। শ্রমিক ইউনিয়নে অংশগ্রহণ করলে চাকরি হারানোর ভয়ে রয়েছে অনেক শ্রমিকেরই এবং ইউনিয়ন সংগঠকরা এখন নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে শঙ্কিত।
শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে রবার্ট বলেন, একটি স্বাধীন শ্রমিক সংগঠনের শক্তভাবে আওয়াজ তোলার ক্ষমতা না থাকলে শ্রমিকরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে কোনোভাবেই অগ্রসর হতে পারবেন না। তারা কখনোই নিশ্চিত হতে পারবেন না যে কারখানার ব্যবস্থাপকরা জরুরি বহির্গমন পথ বন্ধ করে রাখবেন না এবং তাদের বাইরে বের হওয়ার পথগুলো খোলা থাকবে, কিংবা ফাটল ধরা ভবনের পিলারে এবং দেয়ালের ফাটলগুলো রং দিয়ে ঢেকে দেয়া নয়- এমনটাও নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবেন না তারা।
Posted ১২:৪৩ | শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin