শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

হাফ ভাড়ায় আইডি কার্ড বিড়ম্বনা

  |   সোমবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট

হাফ ভাড়ায় আইডি কার্ড বিড়ম্বনা
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাসে হাফ ভাড়া কার্যকর হয়েছে ১লা ডিসেম্বর থেকে। এই কয়েক দিনে অর্ধেক ভাড়া দেয়ার বিষয়ে নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, অর্ধেক ভাড়া দিতে গিয়ে তারা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চালক ও বাসের সহকারীরা জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের দেখলে দ্রুতগতিতে বাস চালিয়ে চলে যাচ্ছেন। একটু সামনের দিকে থামিয়ে অন্য যাত্রী তুলছেন। বাসের ভেতরে আইডি কার্ড দেখানোর পরও হাফ ভাড়া নিতে চাননি অনেকে। ভুয়া আইডি কার্ড নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাসে উঠছেন বলে দাবি তাদের। আবার অনেক শিক্ষার্থীর কার্ড না থাকায় পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। এই নিয়ে বাসের সহকারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় কথাকাটাকাটি। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দেখা যায়, উত্তরাগামী প্রজাপতি পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা হাত উঠিয়ে বাস থামাতে বলেন। সেদিকে কোনো দৃষ্টি না দিয়ে চালক দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করেন। একটু পরে বাস থামিয়ে অন্য যাত্রীদের উঠান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফার্মগেটে বাসের মধ্যে হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় চালক-হেলপারের। কার্ড দেখানোর পরও অনেকে হাফ ভাড়া নিতে রাজি হয়নি। শিক্ষার্থীরা অনেকে নতুন ভর্তি হওয়ায় করোনার কারণে তাদের আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারেননি। আবার অনেকে কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নবায়ন করতে দিয়েছেন। পুরাতন আইডি কার্ড দেখালেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। উত্তরা, গুলিস্তান, মহাখালী, আজিমপুর, এয়ারপোর্ট, সাভারগামী কয়েকটি পরিবহনে দেখা যায় এমন চিত্র। আবার অনেক বাসে স্টুডেন্ট বললেই হাফ ভাড়া নিয়ে নিচ্ছেন। অনেক বাসে কার্ড যাচাই করা হচ্ছে না।,

কলেজে যাওয়ার জন্য ফার্মগেটে বাসের অপেক্ষায় আছেন মিম রহমান। তিনি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তিনি বলেন, দুইদিন আগে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকাতে এসেছি। আজ কলেজে যাবো বলে বেরিয়েছি। সঙ্গে আমার আগের আইডি কার্ড। পড়াশোনা শেষের দিকে হওয়ায় কার্ডটায় ময়লা হয়েছে। বাসের হেলপার পুরনো কার্ড দেখে বলে, আমি নাকি স্টুডেন্ট না চাকরিজীবী। ভুয়া কার্ড দেখিয়ে হাফ ভাড়া দিচ্ছি। তাকে বুঝিয়ে বললেও শুনতে চাননি। অনেক কথাকাটাকাটির পর হাফ ভাড়া নিয়েছে।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিক হোসেন বলেন, মা তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। আমি আজিমপুরে একটা টিউশনি শেষ করে মায়ের কাছে যাচ্ছি। ভাড়া নেওয়ার সময় বাসের হেলপার কার্ড দেখতে চাইলে আমি কার্ড দেখাই। এরপর সে হাফ ভাড়া রাখে। প্রথমে ইউনিফর্ম পরা না থাকায় সে বিশ্বাস করতে চাইনি। শুক্রবার ফুল ভাড়া নিয়েছে।,

জান্নাত আক্তার বলেন, মোহাম্মদপুরে পলিটেকনিক কলেজে পড়াশোনা করি। দুই-তিনদিন আগে পরীক্ষা শেষ হয়। সকালে একটি কাজের জন্য কলেজে এসেছিলাম। মিরপুরে যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় আছি। প্রজাপতি পরিবহনকে হাত উঠিয়ে দাঁড়াতে বললেও চলে যায়। কিছুটা সামনে গিয়ে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলে। কলেজ কার্ড গলায় ঝোলানো দেখে শিক্ষার্থী মনে করে উঠায় না। আমার পাশে আরও দুইজন শিক্ষার্থী ছিল।

সাভার যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন মাহতাব উদ্দিন। তিনি একটি কোচিং সেন্টারে ক্লাস করানোর জন্য ফার্মগেটে আসেন। সাভার থেকে তাকে সপ্তাহে চারদিন ফার্মগেটে আসতে হয়। তিনি বলেন, একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। আজ কার্ড আনতে ভুলে গেছি। প্রথমে কার্ড না থাকায় বাসের হেলপার অনেক ঝামেলা করেছেন। হাফ ভাড়া নিতে চাননি। এরপর তাকে বুঝিয়ে বলা হয়। তখন আশপাশে বসা অন্যদের কথায় হাফ ভাড়া নেন। হাফ ভাড়া দিতে পারলে আমারও অনেক সুবিধা হয়। এমনিতে পড়াশোনার পিছনে অনেক খরচ হয়। ৫০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা নিয়েছেন।,
আজিমপুর কলেজের শিক্ষার্থী ঐশি বলেন, কার্ড দেখানোর পরেও বিহঙ্গ পরিবহনের হেলপার হাফ ভাড়া নেয়নি। উল্টো আমার সঙ্গে কথাকাটাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। আমি মিরপুরে থাকি। হাফ ভাড়া দিতে গেলে প্রায়ই এরা দুর্ব্যবহার করেন।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে প্রতিদিন কলেজে আসতে হয়। ২৫ টাকার ভাড়া বেড়ে ৩৫ টাকা হয়েছে। অনেক বাসে হাফ ভাড়া নিতে চায় না। সবসময় কি কার্ড সঙ্গে রাখা যায়। এদিকে আমার কার্ডের মেয়াদও শেষ হয়েছে। স্টুডেন্ট দেখলে বাস দ্রুত চালিয়ে চলে যায়।

মতিঝিল ওয়েলকাম পরিবহনের সহকারী রাজীব বলেন, অনেকে মিথ্যা বলে হাফ ভাড়া দিয়ে চলে যায়। কার্ড দেখলেও এদের বিশ্বাস হয় না। পুরনো কার্ড নিয়ে আসে। ভাড়া নেওয়ার সময় এই নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। অনেকে বয়স হলেও কার্ড দেখিয়ে হাফ ভাড়া দেয়। কোনটা বিশ্বাস করবো।
দেওয়ান পরিবহনের সহকারী সালাম বলেন, এক তারিখ থেকেই আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নিচ্ছি। যারা কার্ড দেখাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে। কার্ড না দেখাতে পারলে হাফ ভাড়া নেওয়া হয় না। অনেক শিক্ষার্থী আছে কার্ড না দেখিয়ে জোর করে হাফ ভাড়া দিয়ে যায়। স্টুডেন্টদের দেখলেই বোঝা যায়।

এদিকে ৩০শে নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, পহেলা ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় চলাচল করা বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেওয়া হবে। আইডি কার্ড থাকার পরেও কোনো বাসে হাফ ভাড়া না নিলে অভিযোগ পেলে মালিক সমিতি দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে বিআরটিসি’র বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর হয়েছে। বিআরটিসি’র সব বাসের চালক ও কন্ডাক্টরসহ সবাইকে এটি কার্যকর করতে নির্দেশনা দিয়েছি। সরকারি বাসে যাতে এ নিয়ে কোনো বাকবিতণ্ডা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। বিআরটিসি’র কোনো বাস নির্দেশনা না মানলে অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।  সূূএ:মানবজমিন
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৫:৩৩ | সোমবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com