শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

সড়ক দূর্ঘটনার নির্মম সেই স্মৃতি আজও বহন করছে : মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা

  |   শনিবার, ০৪ আগস্ট ২০১৮ | প্রিন্ট

সড়ক দূর্ঘটনার নির্মম সেই স্মৃতি আজও বহন করছে : মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা

 “‍‍নিরাপদ সড়ক চাই” এই দাবীতে কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরা আজও মাঠে রয়েছে। তারা আজ দাবী আদায়ের পক্ষে রাষ্ট্রের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করেও ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সেই দাবীর প্রতি আমার সম্পূর্ণ সংহতি রয়েছে। ব্যক্তি জীবনে আমার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ও ছেলে কলেজে পড়ে। একজন অভিভাবক হিসেবে এই দাবীর প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে। সড়ক দূর্ঘটনার নির্মম শিকার হয়েছিলাম আমি। সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও বহন করছি। সেই কথা মনে হলে এখনও আতকে উঠি। ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে তখন আমি তাঁতীদল খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলাম। মাগুরা জেলা তাঁতী দলের একটি কর্মী সভা শেষে মাগুরা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে আমি ও আমার ড্রাইভার রওনা দিয়েছিলাম। ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বাঘাট নামক জায়গায় গাড়ি পৌঁছালে অপর প্রান্ত থেকে একটি মাটির ট্রাক ব্রেক ফেল করে সরাসরি আমার গাড়ির উপর উঠে যায়। আমি সাথে সাথে দরজা খুলে ডান পাশে লাফ দিয়ে বের হয়ে যাই, আর ড্রাইভার ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। সেই সময় আমার কাছে গচ্ছিত মোবাইল, টাকা পয়সা ওখানকার এলাকাবাসী সু-কৌশলে হাতিয়ে নেয়, আমি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে খালে পড়ে থাকি। একটি পুলিশের গাড়ি এসে আমাকে উদ্ধার করে আমার কথামত মাগুড়াতে পাঠিয়ে দেয়। তখন মাগুড়া তাঁতীদলের নেতৃবৃন্দ আমার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও আজও ডান হাত সম্পূর্ণভাবে সুস্থ্য হয়নি। অনেকটা মানবেতর ও ডান হাতের অসহায়ত্বের জীবনযাপন করছি। সে কারণেই যখনই কেউ দূর্ঘটনা কবলিত হয় তার পাশে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমার কলম দিয়ে তার পক্ষে কিছু লেখারও চেষ্টা করি। বছর কয়েক আগে হাইকোর্টের পাশে সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সোনালী নির্মমভাবে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল। তখন এই হত্যার প্রতিবাদে নানা কর্মসূচীতে উপস্থিত সহ একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলাম “সোনালীদের সোনালী দিন নেই”। অনেক দিন পর সোনালীর বাবা জাকির হোসেন ডেকে বললেন ভাই সব হারিয়ে এখন এক মৃত্যুপুরীর জীবনযাপন করছি। প্রতি বছর সড়ক দূর্ঘটনায় হাজার হাজার জীবন অকালে ঝড়ে যায়। আবার অনেকে মৃত্যুবরণ না করলেও আজীবন পঙ্গুত্ববরণ করে সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বোঝা হয়ে দাড়ায়। যে ব্যক্তিটি সংসারের ব্যয়ভার বহন করতো একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্নায় পরিনত হয়। সড়ক দূর্ঘটনায় এই নির্মম আগ্রাসী অবস্থান থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পাবো। আমাদের সন্তান তুল্য ছেলে-মেয়েরা রাজপথে নেমে নয় দফা দাবী তুলেছে। সেই দাবী আদায় করতে গিয়ে অনেকে রক্তাক্ত হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রায় দেড় শতাধিক ছেলেদেরকে রাতের অন্ধকারে অধ্যক্ষ টিসি দিয়ে বের করে দিয়েছে। একটি সুন্দর ভবিষ্যতকে একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছেলে মেয়েদের রাজপথ ছেড়ে ঘরে ফিরে যেতে বলেছে। কিন্তু যাদের জীবন অন্ধকারে নেমে আসলো, তাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। অহিংস আন্দোলন করে দেশবাসী সহ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের দেশের পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য এবং এই নৈরাজ্যের হোতা পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। তিনি আজও তার ক্ষমতায় বহাল তবিয়তে আছেন। পরিবহন শ্রমিকদেরকে রাজপথে নামিয়ে দিয়ে নতুন অরাজকতা সৃষ্টি করছেন। সন্তানতুল্য ছেলে মেয়েদের আন্দোলন ব্যর্থ করার জন্য নানামুখী চক্রান্ত করছেন। যারা এই চক্রান্তের সাথে জড়িত জাতি তাদের কোন দিনও ক্ষমা করবে না। আমি এইটুকু বলব নির্মম সড়ক দুর্ঘটনার রক্তাক্ত দাগ আজও শুকায়নি। আমার মত অজস্র মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বছরের পর বছর সড়ক দূর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে তাদের পরিবার প্রিয়জন হারিয়ে আজও চোখের জল ফেলছে। প্রতিকারের সময় এসেছে, জেগে উঠার সময় এসেছে, সংস্কারের সময় এসেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন বীর মুক্তিযোদ্ধারা জেগে উঠেছিল, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যেমন মহান ভাষা সৈনিকরা জেগে উঠেছিল, ২০১৮ সালে আমাদের ছেলে মেয়েরা জেগে উঠেছে। আমরা যদি তাদের ঘুম পাড়িয়ে দেই তাহলে সড়ক দূর্ঘটনার এই নির্মম দুঃখ, কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে রেহায় পাবো না। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ আসুন আমরা সবাই মিলে এই আন্দোলনের সাথে অংশগ্রহণ করে সরকারকে বাধ্যকরি এই আন্দোলনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোক।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:২৩ | শনিবার, ০৪ আগস্ট ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com