সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর যেসব তথ্য দিলেন সাবরিনা

  |   রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০ | প্রিন্ট

রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর যেসব তথ্য দিলেন সাবরিনা

করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার মামলায় জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার (জেকেজি হেলথকেয়ার) চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী রিমান্ডের প্রথম দিকে মুখ না খুলে একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের কৌশলী জিজ্ঞাসাবাদে এখন তারা মুখ খোলা শুরু করেছেন। একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন তারা। তারা তাদের সকল অপকর্মের কথা স্বীকার করেছেন। এসব অপকর্মের জন্য কিছুটা অনুশোচনাবোধও হচ্ছে তাদের। ডিবি’র জেরার মুখে সাবরিনা ও আরিফ তাদের সহযোগীদের নাম জানিয়েছেন। কারা তাদের কীভাবে সহযোগিতা করেছেন। বিনিময়ে তাদেরকে কি দিতে হয়েছে।

ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফার রিমান্ডের প্রথম দিনে শনিবার জিজ্ঞাসাবাদে সাবরিনা ও আরিফ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে অন্তত আটজন কর্মকর্তার নাম বলেছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কর্মকর্তারা জানতে পারেন, গত ৪ জুন দুপুরে আরিফ হৃদরোগ হাসপাতালে গিয়ে সাবরিনাকে মারধর করেন। ওই দিনই সাবরিনা তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে গিয়ে জেকেজির সব অপকর্মের কথা ফাঁস করে দিয়ে আসেন। ফিরে এসে রাজধানীর শেরেবাংলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। একই সঙ্গে আরিফকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

পুলিশের জেরায় ডা. সাবরিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় সনদ জালিয়াতির সব খবর জানতেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তখন জেনেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সাবরিনা বলেন, আমি নিজেই তাদের জানিয়েছি।

করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান সাবরিনা শারমিন হুসাইন (সাবরিনা আরিফ চৌধুরী) ও আরিফুল হক চৌধুরী দম্পতি। এমনকি করোনা পরিস্থিতি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকবে ধরে নিয়েই এই পরিকল্পনা করেন তারা। তাদের টার্গেট ছিল কমপক্ষে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া। তাদের এই পরিকল্পনার সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চারজন কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে নমুনা সংগ্রহ করার নাম করে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে- এই অজুহাতে মোটা অঙ্কের অর্থ থোক বরাদ্দ নেওয়ার পরিকল্পনাও করছিল এই দম্পতি।

ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে সাবরিনা জানিয়েছে, ওভাল গ্রুপের মাধ্যমে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অনেক কাজ আগে থেকেই করতো। চিকিৎসক নেতাদের মাধ্যমে তারা সেই কাজ পেয়েছিলো। আরিফ সেসব কাজ পরিচালনা করলেও সাবরিনা কাজ পাবার ব্যবস্থা করতো। এ ভাবে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। এজন্য করোনা পরিস্থিতিতে নমুনা সংগ্রহের আইডিয়া পাবার পর তারা খুব সহজেই কোনো রকম কাগজপত্র, ট্রেড লাইসেন্স ও অফিস ছাড়া কাজ বাগিয়ে নেয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাবরিনা চিকিৎসক হিসেবে তার যে ফেসভ্যালু, তার যে পরিচিতি সেটা ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করেছেন। সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের সহযোগী ও মদতদাতাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে তদন্ত করা হবে। করোনার মতো জটিল পরিস্থিতিতে তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছে। জাল সনদ দিয়ে মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা নিয়েছে। তাই এ ধরনের কাজে যারা যারা জড়িত তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হবে। এর বাইরে ওভাল গ্রুপের কিছু পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের যারা জড়িত তাদের তালিকা করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে তাদের ডাকা হবে। জেকেজিতে চাকরি করতো এমন কয়েকজন পলাতক আছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, সাবরিনা ও আরিফের মদতদাতা একাধিক ব্যক্তির নাম জানতে পেরেছি। তারা নিজেরাই এসব নাম বলেছে। এদের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন। চিকিৎসক নেতাও আছেন। তাদের দেয়া নামগুলো নিয়ে এখন আমরা যাচাই বাছাই করে দেখছি আসলেই তাদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা। যদি আমাদের তদন্তে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবো। তিনি বলেন, সাবরিনা ও আরিফ তাদের সমস্ত অপরাধ স্বীকার করেছে। তারা এও বলেছে প্রতারণা থেকে প্রাপ্ত অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দিতে হয়েছে। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হতভম্ব হয়ে যাচ্ছি। রিজেন্ট ও জেকেজি’র এই ঘটনা যদি ধরা না পড়তো তবে বুঝতেই পারতাম না স্বাস্থ্য সেক্টরের এমন অবস্থা।

ওদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল বাতেন শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে বলেছেন, জেকেজি হেলথ কেয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কাজ পাবার জন্য ব্যবহার করেছে ডা. সাবরিনা চৌধুরীর ফেসভ্যালু। জেকেজি জালিয়াতির প্রধান অস্ত্র ছিল সাবরিনা। অধিদপ্তরে তার ফেসভ্যালু ব্যবহার করে জালিয়াতি ও নানা ধরনের কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। তবে এসব কাজ সে একা একা আনা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মকর্তার সহযোগিতা প্রয়োজন হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আমরা একে একে সবাইকে ডাকবো।

পুলিশ জানায়, জেকেজি হেলথ কেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের নমুনা আইইডিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০টি প্রতিবেদন তৈরি করা হয় জেকেজি কর্মীদের ল্যাপটপে। এর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে। এই জালিয়াতির নেপথ্যে থেকে কাজ করেছেন জেকেজির চেয়ারম্যান সাবরিনা এবং প্রতিষ্ঠানরটির সিইও সাবরিনার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী।

প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হৃদরোগ ইনিস্টিটিউট থেকে ডা. সাবরিনাকে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসির কার্যালয়ে ডেকে নেয় পুলিশ। পরে তাকে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশ বলছে, অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিনই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনাকে বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে বিনামূল্যে পরীক্ষার অনুমতি নিয়ে জাল-জালিয়াতি করছিল জেকেজি। গ্রেপ্তার হন আরিফুল হক চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানের আরও চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমন পরিস্থিতিতে সাবরিনা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, তিনি সরকারি কাজের অবসরে প্রতিষ্ঠানটিতে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন।পূর্বপশ্চিমবিডি

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:১৯ | রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com