| বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে সবার জন্য উচ্চ শিক্ষা নিশ্চত করার জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়বদ্ধতা রয়েছে।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনোই মুনাফা অর্জনকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে পরিণত না হয়, তা সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
বুধবার রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি’র (এসএমইউসিটি) প্রথম সমাবর্তনে সভাপতির ভাষণকালে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গ্রাজুয়েট ও পোস্ট গ্রাজুয়েট ১৩৭৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয় এবং অসামান্য কৃতিত্ব অর্জনের জন্য ৬ শিক্ষার্থীকে গোল্ড মেডেল দেয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ব্যয়বহুল বিধায় এখানে সমাজে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র শ্রেণীর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করার সুযোগ কম। তাই তাদের শিক্ষার জন্য বৃত্তিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। কেবল বিত্তবান ঘরের সন্তান নয়, দরিদ্র ঘরের মেধাবী সন্তানরাও যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় সে বিষয়টি সুবিবেচনার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম তৈরি করা দরকার। তিনি বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এদেশকে ‘সোনার বাংলায়’ পরিণত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। এ অবস্থায় আমাদের শিক্ষিত ও দক্ষ মানব সম্পদ গঠন ও তার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
রাষ্ট্রপতি ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা হ্রাসে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। ‘দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা তাদের ছন্দের বিষয় পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন না, তারা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া বিষয়ে পড়াশোনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।’ তিনি বলেন, শিক্ষার অর্থ এই নয় যে, কেবল অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন হবে। এর অর্থ এটাও যে, বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে শিক্ষার্থীর অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্নয়ন ঘটবে, সর্বোপরি দেশপ্রেম জাগ্রত হবে।’
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শিক্ষার সাথে বিনোদনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, জনগণের প্রত্যাশা, মানবতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক কৌশল অবশ্যই শিক্ষায় চালু করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন শিক্ষার প্রয়োজন, যে শিক্ষা সৃষ্টিশীল ও আলোকিত মানুষ গড়ে তুলবে। শুধু সার্টিফিকেট ভিত্তিক শিক্ষা হলে চলবে না। এ জন্য টেক্সট বুক পড়তে হবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষা হচ্ছে, আলোকিত বিশ্বে প্রবেশের চাবি। শিক্ষা কোনো বন্ধ অন্ধকার ঘরের জন্য একটি জানালা খুলে দেবে তিনি আস্থা ব্যক্ত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গবেষণায় মনোনিবেশের প্রায়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ উচ্চ শিক্ষায় অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। ২০০৫ সালে উচ্চ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ১১ লাখ। বর্তমানে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২২ লাখের বেশি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত যুব সমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোগও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবিরও সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী, এসএমইউসিটি বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান ইনামুল কবির শান্ত এবং এসএমইউসিটির ভিসি অধ্যাপক শামসুল হক ও প্রোভিসি শীনা এম ফালকোনার বক্তব্য রাখেন।
Posted ১২:৪৮ | বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin