বৃহস্পতিবার ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিদইয়া কী ও কেন

  |   সোমবার, ২৮ মে ২০১৮ | প্রিন্ট

ফিদইয়া কী ও কেন

মাওলানা আমিনুল ইসলাম: রোজা রাখা দুঃসাধ্য হলে একটা রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে অন্নদান করা কর্তব্য। শরিয়ত মোতাবেক রোজা রাখার সামর্থ্যহীন হলে প্রতিটি রোজার জন্য একটি করে ‘সাদাকাতুল ফিতর’-এর সমপরিমাণ গম বা তার মূল্য গরিবদের দান করাই হলো রোজার ‘ফিদইয়া’ তথা বিনিময় বা মুক্তিপণ। অতিশয় বৃদ্ধ বা গুরুতর রোগাক্রান্ত ব্যক্তি, যার সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই অথবা রোজা রাখলে জীবনহানির আশঙ্কা থাকে, তারা রোজার বদলে ফিদইয়া আদায় করবে। পরবর্তী সময়ে ওই ব্যক্তি যদি সুস্থ হয়ে রোজা রাখার মতো শক্তি ও সাহস পায়, তাহলে তার আগের রোজার কাজা আদায় করতে হবে। তখন আগে আদায়কৃত ফিদইয়া সাদকা হিসেবে গণ্য হবে।

রমজান মাসে যাঁরা পীড়িত, অতিবৃদ্ধ, যাঁদের দৈহিক ভীষণ দুর্বলতার কারণে রোজা পালন করা খুবই কষ্টদায়ক হয়, যাঁরা ভ্রমণে থাকার কারণে সিয়াম পালন করতে পারেন না, তাঁদের জন্য রোজার কাজা, কাফফারা, ফিদইয়া ইত্যাদি বদলাব্যবস্থা স্থির করে ইসলামি শরিয়তে সুনির্দিষ্ট বিধি-ব্যবস্থা রয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা (সিয়াম) যাদেরকে অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে “ফিদইয়া”- একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে, তবে সেটা তার পক্ষে অধিকতর কল্যাণকর। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে তবে বুঝতে সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪)

অসুস্থ ব্যক্তি ফিদইয়া বা মুক্তিপণ আদায় না করে মারা গেলে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে ফিদইয়া আদায় করা কর্তব্য; যদি মৃত ব্যক্তি অসিয়ত করে যায়। অন্যথায় আদায় করা মুস্তাহাব। উল্লেখ্য যে, প্রতিটি রোজার ফিদইয়া হলো একটি সাদাকাতুল ফিতর অর্থাৎ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম আটা বা তার সমমূল্য ৬৬ টাকা দরিদ্র এতিম বা মিসকিনকে দান করা অথবা একজন ফকির বা গরিবকে দুই বেলা পেট পুরে খাওয়ানো। অনেক জায়গায় দেখা যায়, গরিব লোক কোনো ধনীর বদলি রোজা পালন করে দিচ্ছে। মনে রাখবেন, কোনো অবস্থাতেই একজনের রোজা অন্যজন বদলি হিসেবে পালন করতে পারবে না। কেউ কারও রোজা বদলি হিসেবে রাখলে শরিয়তের দৃষ্টিতে তা শুদ্ধ হবে না। রোজার ফিদইয়া গুনাহমাফির মাধ্যমে মানুষকে নিষ্কলুষ ও নির্ভেজাল করে। রোজাকে আল্লাহ তাআলা মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধির এক সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে বান্দার জন্য নির্ধারণ করেছেন। রোজার কাজা, কাফফারা ও ফিদইয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা পাক বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে সওয়াবের আশায় যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার বিগত দিনের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি)

বিনা কারণে যে ব্যক্তি একটি রোজা না রাখে এবং পরে যদি ওই রোজার পরিবর্তে সারা বছরও রোজা রাখে, তবু সে ততটুকু সওয়াব পাবে না, যতটুকু মাহে রমজানে ওই একটি রোজা পালনের কারণে পেত। এ সম্পর্কে ফিকহবিদদের মতে, দুই মাস একাধারে রোজা রাখলে স্বেচ্ছায় ভাঙা একটি রোজার কাফফারা আদায় হয় আর এ কাফফারার বিনিময়ে একটি রোজার ফরজের দায়িত্বটাই কেবল আদায় হয়। আর যারা নানা অজুহাতে ও স্বেচ্ছায় পুরো মাহে রমজানের রোজা রাখে না, তাদের শাস্তি কত যে কঠিন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদের পরিণতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের এক দিনে রোজা কোনো ওজর বা অসুস্থতা ব্যতীত ভঙ্গ করবে, সারা জীবনের রোজায়ও এর ক্ষতি পূরণ হবে না, যদি সে সারা জীবনও রোজা রাখে।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদ)

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৩:৪০ | সোমবার, ২৮ মে ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com