শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

প্রস্তাবিত বাজেট কাল্পনিক, অবাস্তবায়নযোগ্য: বিএনপি

  |   শুক্রবার, ০৪ জুন ২০২১ | প্রিন্ট

প্রস্তাবিত বাজেট কাল্পনিক, অবাস্তবায়নযোগ্য: বিএনপি

২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অবাস্তবায়নযোগ্য কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। বাজেটে অর্থনীতির নানা তত্ত্ব ও বিশাল সংখ্যার আর্থিক উপস্থাপনার মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে এক ধরনের ভাওতাবাজি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিপাদ্য শব্দমালার মাঝেই এবারের বাজেটের ভাওতাবাজি পরিষ্কার।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

 

সুস্পষ্টভাবে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা মাথায় না রেখে কেবলমাত্র অর্থনীতির নানা তত্ত্ব ও বিশাল সংখ্যার আর্থিক উপস্থাপনার মাধ্যমে কার্যত জনগণের সঙ্গে এক ধরনের ভাওতাবাজি করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই বাজেটেও স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অথচ এই মুহূর্তে মানুষের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, মহামারিকালে মানুষের জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ইহা একটি অবাস্তবায়নযোগ্য কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণকে কোভিডের মহাসংকট থেকে রক্ষার দিকনির্দেশনা নেই উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। জনগণের সমর্থনবিহীন সরকারের রাষ্ট্রের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই এ বাজেটে জনস্বার্থের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট।’

 

সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ঘোষিত বাজেটে অপচয়, অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ হয়নি। বরং এই সরকারের সময় দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও আইনের শাসন এবং জবাবদিহির যে ঘাটতি রয়েছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটে।’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে দেশে আয়বৈষম্য বেড়েছে। ‘স্বজন তোষণের’ ভিত্তিতে এ সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। যার ফলে মাত্র ১ শতাংশ লোকের কাছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এমনকি এই করোনাকালেও অপ্রদর্শিত আয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন হাজার হাজার লোক। ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সম প্রতিযোগিতার স্বাভাবিক যে বিকাশ, সে সুযোগ তারা বন্ধ করে দিয়েছে।’

 

বাজেটের আকার বৃদ্ধির পরিবর্তে সংকোচিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘এই বাজেট হচ্ছে জিডিপির মাত্র ১৭.৪৬ শতাংশ। ২০২১ অর্থবছরের জন্য মূল বাজেট ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা ছিল জিডিপির ১৭.৯০ শতাংশ। এ হিসাবে বাজেটের প্রকৃত আকার বৃদ্ধির পরিবর্তে সংকোচিত হয়েছে।’

 

এক গবেষণায় বরাত দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে ২ কোটি ৪৫ লাখ নতুন গরিব সৃষ্টি হয়েছে। নতুন দরিদ্র, পুরাতন দরিদ্র আর ক্ষণস্থায়ী দরিদ্র নিয়ে সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। এছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৮৬ শতাংশ শ্রমিক রয়েছে।

 

এদের প্রত্যেককে নগদ আর্থিক সহায়তা দেয়া এবং এ খাতে জিডিপি ৬ থেকে ৭ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে বলে মনে করেন জাতীয়তাবাদী দলটির মহাসচিব।

 

স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপির সেই এক শতাংশের মধ্যেই আছে। এই বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের চাহিদা মিটবে না বলে মনে করেন তিনি।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে মোট ২৫ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে দেখা গেলেও সংশোধিত বাজেটে তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ১৮০ কোটি টাকা। গতবছর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৮৮৩ হাজার কোটি টাকা এবং সংশোধিত আকারে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ২৫ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকায়। এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্যখাত বড় ধাক্কা সামলাতে পারবে না। স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি’র ৫ শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে।’

 

‘করোনার টিকা প্রদানের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। সরকার ২৫ লাখ মানুষকে মাসে টিকা দেয়ার কথা বলেছেন। সেটা কবে থেকে কার্যকর হবে, কিভাবে হবে, সে সম্পর্কে কিছু নিশ্চিত বলা হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা এই হিসেবে প্রতি বছর টিকা নিতে পারবে ৩ কোটি মানুষ। কাংখিত জনগোষ্ঠীকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর। অথচ ভারতে প্রতিদিন ১ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। সেই পর্যায়ক্রমে কতদিনে শেষ হবে।’

 

বাজার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অনেক আগেই সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। গত এপ্রিলে গড়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৫৬ শতাংশ। এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৩ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবভিত্তিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রক্ষেপণ আর বাস্তবতার কোন মিল নেই। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।’

 

বাজেটটি দেশের ৫০ তম বাজেট। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সময় এটা। কিন্তু বাজেটে সে লক্ষে বড় কোন সংস্কার পরিকল্পনার উল্লেখ নেই বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। বলেন, ‘আয় ও ব্যয়ের সামর্থ বৃদ্ধি, বিশেষ করে গুণগত মান বজায় রেখে ব্যয় করার অক্ষমতা নিরসনে কোন সংস্কারমূলক কার্যক্রমের পরিকল্পনা নেই বাজেটে। প্রণোদনা তহবিল দেয়া হচ্ছে আগের মত ব্যাংকের মাধ্যমে অথচ ব্যাংক সেক্টর সংস্কারের কোন কথাই বলা হলো না।’

 

আগামী অর্থবছরটি চালাতে অর্থমন্ত্রী কোন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করবেন? এমন প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ঋণ নেওয়া হবে প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। তবে উচ্চ সুদের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকেও ঋণ নেওয়া হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও থাকছে প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে ঋণের সুদই দিতে হবে ৬৯ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া আছে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন ব্যয় তো রয়েছেই।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:৪০ | শুক্রবার, ০৪ জুন ২০২১

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com