শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

প্রণোদনার আড়ালে বড়লোকরাই অতি বড়লোক হচ্ছে: নিকোলাস ক্রিস্টোফ

  |   সোমবার, ২৫ মে ২০২০ | প্রিন্ট

প্রণোদনার আড়ালে বড়লোকরাই অতি বড়লোক হচ্ছে: নিকোলাস ক্রিস্টোফ

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা একদিকে যখন দরিদ্র জনগণের জন্য কম দামে খাদ্য বিক্রির সরকারি কার্যক্রমের উপর রাশ টানার চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনই আরেক দলের প্রতি তাদের মায়া যেন উথলে পড়ছে, আর তারা হলো অপরিমেয় ধনসম্পদের মালিক- জিলিওনিয়ার। তাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজের আওতায় ধনীদের জন্য (রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার বা সমপর্যায়ের ব্যবসায়ী) প্রায় ১৩২ বিলিয়িন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে- জ্বি হ্যাঁ, ১৩২ বিলিয়ন ডলার!

নিউইয়র্ক টাইমসে আমার সহকর্মী জেস ড্রাকার জানালেন, ট্রাম্প নিজে এবং তার জামাতা জ্যারেড কুশনারও এই বরাদ্দ থেকে ভাগ পাচ্ছেন। আর এই সংক্রান্ত আদেশটি রহস্যময়ভাবে মার্চ মাসের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যদিও এর সাথে করোনাভাইরাসের কোন সম্পর্কই নাই। এখানে কভিড-১৯ মহামারি শুরু হবারও আগের, অতীতকালীন কর ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রোড আইল্যান্ডের সিনেটর শেলডন হোয়াইটহাউস এবং টেক্সাসের লয়েড ডুগেট, এই দুই ডেমোক্রেট নেতা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ব্যাখা চেয়েছেন, কিভাবে সবার অলক্ষ্যে ৮৮০ পৃষ্ঠার একটি বিলের ভেতর এমন একটি অধ্যাদেশ ঢুকে গেল।

আনুষ্ঠানিকভাবে এই অধ্যাদেশটির নাম দেয়া হয়েছে “কর্পোরেশন ব্যতীত অন্য করদাতাদের ক্ষতি কমাতে পরিবর্তন”। তবে এটি আসলে ক্যামোফ্লেজ, আমি একে বলতে চাই অতিধনীদের জন্য সরকারি উপহার। কংগ্রেসের কর বিষয়ক যৌথ কমিটির তথ্যমতে, এই অর্থের ৮২ ভাগ পাবে, যাদের বার্ষিক আয় ১০ লাখ ডলারের বেশি। আর যাদের বার্ষিক আয় ১০ লাখ ডলারের বেশি, তাদের গড় লাভ হবে ১৬ লাখ ডলার।

অর্থাৎ একজন সিঙ্গেল মাদার, যে সংসার চালাতে একসাথে দুটি চাকরি করছে, সে পাচ্ছে সর্বোচ্চ ১২০০ ডলারের চেক, আর সেই সাথে তাকে করও দিতে হচ্ছে, যাতে একজন রিয়েল স্টেট মোগল ১৬ লাখ ডলার পেতে পারে। সংগ্রামী শ্রমিকদের জন্য কুকুরের মাংস দিয়ে কুকুর খাওয়ানোর নীতি, আর ধনীদের জন্য সমাজতন্ত্র।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গণস্বাস্থ্য খাতে ট্রাম্প যে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি করেছেন, আমেরিকানদের অনেকেই সে বিষয়টি বোঝেন। তবে জরিপ বলছে, চলমান পরিস্থিতিতে, ট্রাম্প আর কংগ্রেস অর্থনৈতিক খাতে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, বিশেষ করে যাদের সাহায্য দরকার নাই তাদেরকে কৌশলে সুবিধা দেয়ার বিষয়টি তারা একেবারেই পছন্দ করছে না।

যুক্তরাষ্ট্র এটা মেনেই নিয়েছে যে, মহামারির কারণে বিশালসংখ্যক শ্রমিক চাকরি হারাবে, আর তারপর তাদের বেকার ভাতা দেয়া হবে। কিন্তু জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন ডেনমার্কসহ অন্যান্য দেশ কিন্তু আরো কৌশলী পথ বেছে নিয়েছে। তারা বরং প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে, যাতে তারা শ্রমিকদের ঠিক মতো বেতন দিতে পারে, শ্রমিক ছাঁটাইয়ে যাতে বাধ্য না হয়। যুক্তরাষ্ট্রও সীমিত পরিসরে এধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে বটে, তবে তা ইউরোপের তুলনায় একেবারেই কম। অথচ যুক্তরাষ্ট্র বেইল আউটের জন্য জিডিপির যতটুকু অংশ ব্যয় করেছে, অনেক ক্ষেত্রেই তা ইউরোপের চেয়ে বেশি। ফলে যেখানে জার্মানি কিংবা ডেনমার্কে বেকারত্বের হার ৫ শতাংশে পৌঁছানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেখানে এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার হয়তো পৌঁছে গেছে ২০ শতাংশে, কিংবা তারও বেশি।

আমাদের বেকারত্ব সংকটের জন্য মহামারি কিংবা ভাইরাসকে দায়ী করা ঠিক হবে না। এটা আসলে আমাদের জাতীয় সিদ্ধান্ত। সেই সাথে দিন দিন এটাও পরিষ্কার হচ্ছে যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উদ্ধারে যে অর্থ বরাদ্দ থাকার কথা তা যাদের প্রয়োজন তাদের কাছে না যেয়ে, প্রায়ই চলে যাচ্ছে তাদের কাছে, যাদের রয়েছে সবচেয়ে নির্লজ্জ আইনজীবী ।

তারা আমাদের জাতীয় সমীকরণের অংশ, ক্ষমতা অর্থের জন্ম দেয়, অর্থ আরো ক্ষমতার জন্ম দেয়, আরো ক্ষমতা আরো বেশি অর্থের জন্ম দেয়…।

এই উদ্ধার প্যাকেজের একটি অংশে শুধু তাদেরকেই কর বিরতির সুবিধা দিয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের গড় আয় ২৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি।

অটোনেশন, ক্ষুদ্র ব্যবসায় খাতে ৭৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে, যদিও ওয়াশিংটন পোস্টে এই নিয়ে প্রতিবেদন ছাপানোর পর তারা এর কিছু অংশ ফেরত দেয়। ফর-প্রফিট কলেজ, যারা শিক্ষার্থীদের পাঠদানের চেয়ে তাদেরকে শোষণ করার জন্যেই বেশি পরিচিত, তারা বরাদ্দ পেয়েছে ১.১ বিলিয়ন ডলার।

ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রেট ডিপ্রেসনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমেরিকায় প্রতি ছয়টি শিশুর মধ্যে একজন যথেষ্ট পরিমাণে খাবার পাচ্ছে না। অথচ আমরা কাদের সাহায্যে ছুটে যাচ্ছি? টাইকুনদের!

কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ছাঁটাইয়ের কারণে মে মাসের ২ তারিখ পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক স্বাস্থ্যবীমা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।

আপনি হয়তো ভাবছেন, এতে সবাইকেই স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনার দাবি জোরালো হবে। কিন্তু না, বরং তার উল্টোটাই হচ্ছে। লক্ষ্য লক্ষ্য মার্কিন নাগরিককে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনার যে আ্যফর্ডেবল কেয়ার আ্যক্ট, তা পুরোপুরি বাতিলের জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

মহামন্দার সময়, প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট খুব সাহসী কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যার মধ্যে ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া ইত্যাদি। আর চলমান সংকটে ট্রাম্প ফুড স্ট্যাম্প আর স্বাস্থ্যবীমার মতো সুবিধা কমিয়ে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের, যার মধ্যে তিনি নিজেও রয়েছেন, বিনামূল্যে অর্থ দিচ্ছেন।

অবশ্যই আমেরিকা এখনো সম্ভাবনার দেশ, যদি আপনি সম্পদশালী হয়ে থাকেন।

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, মার্চ ১৮ তারিখ থেকে দুই মাসে, অর্থনৈতিক সংকটের শুরুর দিকে আমেরিকার বিলিওনিয়ারদের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এছাড়া, আরো ১৬ জন আমেরিকান এই সময়ের মধ্যে বিলিওনিয়ার হয়েছেন। একদম শূন্য থেকে কাউকে এভাবে উঠে আসতে দেখা সত্যিই ভারি আনন্দের!

প্রতিনিধি পরিষদ এই জিলিওনিয়ার গেটওয়ে প্রত্যাহারের চেষ্টা করছেন, কিন্তু ট্রাম্প ও তার কংগ্রেসীয় সমর্থকরা তাতে যথারীতি বাধা দিচ্ছেন। অন্যদিকে যেসব রাজ্য কিংবা এলাকায় শুধু এপ্রিল মাসেই মহামন্দার সময়ের চেয়েও বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছে, তাদের সাহায্য করার তেমন কোন প্রয়োজনই দেখছেন না ট্রাম্প।

বিরাজমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নানা সংকটের কারণে যারা ক্ষুব্ধ ছিলেন, তাদেরই একটা বড় অংশ ট্রাম্পকে নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের শাসনামলে পরিষ্কারভাবেই অর্থনীতি আরো বেশি সঙ্কটময় হয়ে উঠেছে। এমনকি শিশুরাও এখন না খেয়ে আছে, সাধারণ শ্রমিক তার জীবিকা হারাচ্ছে, জীবন হারাচ্ছে।

লেখক: নিকোলাস ক্রিস্টোফ, কলাম লেখক, নিউ ইয়র্ক টাইমস। অনুবাদ: মোহাম্মাদ সাঈদ জুবেরী চিশতী।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৩৭ | সোমবার, ২৫ মে ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com