রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, বিল এলো লাখ টাকা!

  |   রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০২০ | প্রিন্ট

নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, বিল এলো লাখ টাকা!

বসানো হয়নি কোনো প্রকার বৈদ্যুতিক খুঁটি। তারও টানানো হয়নি আবেনদকারী গ্রাহকের সেচ প্রকল্প পর্যন্ত। দেয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। তবুও অবাঞ্ছিত বিল খেলাপির দায়ে বিদ্যুৎ বাংলাদেশ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ কর্তৃপক্ষ এক বৃদ্ধার নামে মামলা করেছে। এ মামলায় আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ওই বৃদ্ধাকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কার্যক্রমে এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই বৃদ্ধার নাম শ্যামলা বেগম। তিনি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর হাকিমপুর গ্রামের মৃত আব্দুল সবুর মিয়ার স্ত্রী।

জানা যায়, শ্যামলা বেগম সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার জন্য ২০১৪ সালের শেষের দিকে বাসাইল পৌর এলাকার মশিউর রহমান নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে টাঙ্গাইল পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর অধীনে আবেদন করেন। ওই সময় দাপনাজোর হাকিমপুর, দেউলী ও মুড়াকৈ এলাকার ১২ জনের কাছ থেকে সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দিতে মশিউর রহমান ১১ লাখ টাকা নেন। পরে ২০১৫ সালের প্রথম দিকে তিনি ৯ জনের সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেন।

এছাড়া নিজ খরচে বাঁশ, সিমেন্টের খুঁটি ও তার কিনে আরও দুইজন তাদের সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ নেন। ওই সময় রহস্যজনক কারণে দূরত্বের অজুহাতে শ্যামলা বেগমকে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়ে সংশ্লিষ্টরা তার আবেদন বাতিলের কথা বলে কাজ শেষ করে চলে যান। আবেদনের প্রায় পাঁচ বছর পর সম্প্রতি শ্যামলা বেগমের নামে এক লাখ ১৪ হাজার ৬২৭ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া দেখিয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইমুম শিবলী বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) আদালতে মামলাটি করেন। এতে বৃদ্ধা শ্যামলা বেগম চরমভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

শ্যামলা বেগম বলেন, আমরা ১২ জন সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করলে সংযোগ পাইয়ে দিতে স্থানীয় শফিকুলের মাধ্যমে বাসাইলের মশিউর রহমান সেচ প্রতি ৮০ হাজার করে টাকা নেন। ওই সময় ১১ জন বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেও আমাকে দেয়া হয়নি। খুঁটি বসানো বা তার টানানো হয়নি। আমার ৮০ হাজার টাকাও ফেরত দেয়নি। উল্টো আমার নামে এক লাখ ১৪ হাজার ৬২৭ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। এছাড়াও আমার নামে তারা মামলাও করেছেন।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের এমন মিথ্যা মামলায় এই বয়সে আমাকে আদালতে দাঁড়াতে হবে। এমনকি বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও বিল খেলাপির অপবাদে জেলেও যেতে হতে পারে। এ ব্যাপারে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। মামলা নিয়ে খুবই চিন্তায় আছি। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন হয়রানিমূলক ও ভিত্তিহীন মামলার দায় থেকে মুক্তি পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শ্যামলা বেগম।

শ্যামলা বেগমের ছেলে সুরুজ্জামান বলেন, ২০১৪ সালে আমরা একটি সেচ মেশিন বসানোর পরিকল্পনা করে বিদ্যুতের লাইন আনার জন্য আবেদন করি। তখন নানা অজুহাতে আমাদের আবেদনটি বাতিল হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চলে যান। প্রায় পাঁচ বছর পর আমার মায়ের নামে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভাগের মামলার নোটিশ আসে। তারা মামলার কপির সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল পাঠিয়ে দেন। অথচ সেচ মেশিন বা বিদ্যুৎ লাইনের কোনো অস্তিত্বই নেই।

কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর হাকিমপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মহসিনুজ্জামান বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য শ্যামলা বেগম আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ খুঁটি স্থাপন বা কোনো তার টানায়নি। সংযোগও দেয়া হয়নি। এরপরও শ্যামলা বেগমের নামে বিদ্যুৎ বিল খেলাপি মামলা হয়েছে। এই মামলা থেকে বৃদ্ধা শ্যামলা বেগমকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাই।

বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দেয়ার জন্য টাকা লেনদেনকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালের শেষের দিকে আমার নিজের একটিসহ ১২টি সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করি। তখন আমার হাত দিয়ে ১২টি সেচে মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বাসাইলের মশিউর রহমানকে ১১ লাখ টাকা দেই। সেই সময় ১১টি সেচে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। কিন্তু শ্যামলা বেগমের সেচ পয়েন্ট পর্যন্ত কোনো প্রকার খুঁটি স্থাপন বা তার টানানোই হয়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি। তারা আবেদনটি বাতিল হয়ে গেছে। গত পাঁচ বছর শ্যামলা বেগমের নামে কোনো বিদ্যুৎ বিলও আসেনি। হঠাৎ শ্যামলা বেগমের নামে বিল বকেয়া সংক্রান্ত বিদ্যুৎ বিভাগের মামলার সমন এসেছে। কেন এটি এসেছে আমার জানা নেই।

বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দিতে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা গ্রহণকারী মশিউর রহমান বলেন, ওই এলাকায় ৯টি সেচে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাকি তিনটির বিষয়ে আমার জানা নেই। পরে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাকি তিনটির ব্যাপারে অফিসকে অবহিত করা হয়। এর মধ্যে দুইটিতে নিজ দায়িত্বে খুঁটি এবং তার কিনে সংযোগ নেন গ্রাহক। কিন্তু শ্যামলা বেগমের আবেদন বাতিল হলে অফিসকে তা অবহিত করা হয়েছিল। যেখানে অফিসকে অবহিত করা হয়েছে সেখানে শ্যামলা বেগমের নামে বিদ্যুৎ বিল আসার কথা না। তার নামে কেন বিদ্যুৎ বিল আসল এটা বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারাই ভালো জানেন।

মামলার বাদী টাঙ্গাইল পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইমুম শিবলী বলেন, সখীপুর বিদ্যুৎ অফিসের কনজুমার শ্যামলা বেগম। ২০১৮ সালে সখীপুর বিদ্যুৎ অফিসকে টাঙ্গাইলের অর্ন্তভুক্ত করা হয়। তৎকালীন সময় থেকে তার নামে অদ্যাবধি বিল বকেয়া ছিল। তার সঙ্গে অসংখ্য বার যোগাযোগের চেষ্টা করার পর বকেয়া বিলের কনজুমার হিসেবে তার নামে মামলা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে টাঙ্গাইল পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদত আলীর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৬:১৪ | রবিবার, ৩০ আগস্ট ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com