শনিবার ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নবীগঞ্জে নানা সমস্যার বেড়াজালে বন্দি মুচি সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার

  |   শনিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট

নবীগঞ্জে নানা সমস্যার বেড়াজালে বন্দি মুচি সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার

pic-3

ছনি চৌধুরী, নবীগঞ্জ প্রতিনিধি  : নানা সমস্যার বেড়াজালে বন্দি হয়ে আজও অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে মুচি সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার। এদের মধ্যে অনেকেই এখন পৈত্রিক এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। কাজের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার অভাব, সামাজিকভাবে নিম্ন মর্যাদা, বিদ্যুৎ সমস্যা, স্যনিটেশন সমস্যা, লেখাপড়ার সুবিধা না পাওয়া, মুজুরী বৈষম্যসহ নানামুখী সমস্যা প্রতিনিয়তই তাদের টিকে থাকতে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে। তাদের এই দুরাবস্থা দেখার যেন কেউ নেই। তাদের পূর্নবাসনের জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানিয়েছেন এ সম্প্রদায়ের লোকজন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারের পাশে উলুকান্দি গ্রামে বৃটিশ আমল থেকে বসবাস করে আসছেন মুচি সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পরিবার। আর থেকেই এ পল্লীর নামকরন করা হয় মুচি বাড়ী। এখন মুচি বাড়ী নামেই পরিচিত। মাত্র ১৩ শতক জায়গার মধ্যে অনেকটা গাদাগাদি করেই কোন রকম ভাবেই পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন ১১টি পরিবারের অনন্ত শতাধীকেরও বেশি লোকজন। এর মধ্যে তাদের অনেক জায়গাই স্থানীয় ভূমিখেকোদের দখলে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন সম্প্রদায়ের লোকজন।

মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও তারা বিদ্যুতের আলোর মুখ দেখেননি। ফলে তারা ডিজিটাল বাংলাদেশের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের সময় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায় করেন বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী বিভিন্ন প্রার্থীরা। কিন্তু ভোটের পর তাদের চেহারা আর দেখা যায়না বলেও জানান মুচিরা। এমনকি নির্বাচিত হলেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিবেন বলেও আশ্বাস দেন প্রার্থীরা। এভাবেই চলছে যুগের পর যুগ। তবুও বিদ্যুতের আলোর দেখা নেই। অন্ধাকারেই করছেন বসবাস। হারিকেন আর কুপি বাতিই যেন তাদের জন্য আলোর মুখ।

এছাড়াও মুচিপাড়ার স্যানিটেশন ব্যবস্থাও রয়েছে খুবই নাজুক। ১১ টি পরিবার মিলে রিং-স্লাব দিয়ে কোনমতে ২টি পায়খানা তৈরী করে তা ব্যবহার করে শতাধীক লোকজন। অন্য দিকে, মুচিরা জুতা মেরামতের জন্য যে চামড়া সংগ্রহ করে তার ময়লা-আর্বজনা পার্শ্ববর্তী খালে ফেলে দেয়। ফলে খালের পানি দুষিত হয়। আর এসব পানি মুচি পরিবারসহ আশেপাশের নি¤œ আয়ের লোকজন রান্না, গোসল, থালা-বাসন ধোয়ার কাজে ও টয়লেটে ব্যবহার করে। যার কারনে এসকল অসচেতন নিম্ন বিত্ত মানুষেরা নানা রকম পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মুচিপাড়ার শিশুরা বেশীর ভাগই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে বিভিন্ন কাজ করে তারা। ফলে তাদের স্কুলে যাওয়ার সময় হয় না। আবার অনেকেই পিতার কাজে সহযোগীতা করেন। আর এ কারণে স্কুলে বা পড়া লেখার সময় নেই তাদের।

মুচিদের জন্ম সূত্র পেশায়- বিভিন্ন পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয়, জুতা সেলাই করাই প্রধান কাজ। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত তারা এ কাজ করে। সারাদিন কাজ করে তারা দেড় শত বা দুই শত টাকার বেশী আয় করতে পারে না। ফলে তাদের পরিবারে আর্থিক অনটন লেগেই থাকে। এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে চলছে তাদের জীবন যাত্রা। এমনটাই জানালেন আউশকান্দি ইউনিয়নের উলুকান্দি গ্রামের মুচি বাড়ীতে বসবাসকারী, লাখপতি, সুবল, বাবুল, লক্ষন সহ অনেকেই।

তাদের সাথে কথা বলে জানা য়ায়, মুচিদের বিবাহ, আত্মীয়তা, শালিশ-বিচার নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেই হয়ে থাকে। হিন্দুসমাজের নিচুজাত বলে তাদের বিবাহের কোন নথি বা রেজিষ্ট্রেশন হয় না। ফলে বাল্য বিয়ে, বহুবিবাহ, যৌতুক সমস্যা এদের যেন নিত্যসঙ্গী হয়েই আছে। এ ধরনের নানামূখী সমস্যার বেড়াজালে আটকে মুচিসম্প্রদায় আজও অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। প্রাচীন ও প্রয়োজনীয় এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এদের সমস্যাবলীর প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সমাজের সচেতন ও সরকারের উর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করছেন সচেতন মহলের লোকজন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:০৭ | শনিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com