নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট
নেত্রকোণায় গলা কাটা মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উন্মোচন করেছে র্যাব। মরদেহটির পরিচয় জানা গেছে। সেটি সাইফুল নামে এক মোটরসাইকেলচালকের। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করা হয়। পরিচয় গোপন রাখতে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয় মুখ। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. মাসুক মিয়া (২৯) ও আল-ইমরান ফয়সাল (৪৪)। রোববার (১৮ মার্চ) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব-১৪-এর একটি দল।
কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ১৪ মার্চ দুপুরে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের দেওরাজান বালুর চরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলা কাটা লাশ দেখে স্থানীয়রা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানায়। লাশ উদ্ধার ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
জানা যায়, নিহতের নাম সাইফুল ইসলাম। বাবা আব্দুস সামাদ, বাড়ি ঝিনাইদহ। ঐ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা সাইফুল হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার মাসুক ও ফয়সাল মূলত আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাই/চুরি চক্রের সদস্য। সাইফুল তিন-চার বছর ধরে রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করে আসছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালাতেন। ১০-১৫ দিন আগে গ্রেফতার মাসুক ফয়সালকে জানান তার ভাগ্নের একটা মোটরসাইকেল দরকার। সেই সুবাদে মাসুক তার ভাগ্নের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে ফয়সালকে দেন। কিন্তু ফয়সাল বাইক দিতে না পারায় মাসুক চাপ দিতে থাকেন। পরে দুজন মিলে ফয়সালের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পিতভাবে তারা গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছুরি ক্রয় করেন। তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিও চিত্র ধারণের জন্য নেত্রকোনায় যেতে গত ১৩ মার্চ তিন হাজার টাকা ভাড়ায় সাইফুলকে ভাড়া করা হয়। বিকেল ৩টায় মাসুক সাইফুলকে নিয়ে মিরপুর-১৪ থেকে নেত্রকোনার উদ্দেশে রওনা দেন। গাজীপুর থেকে ওঠেন ফয়সালও।
‘ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছলে ট্রাফিক পুলিশ তাদের মোটরসাইকেল আটকায়। ফয়সাল নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চলে যান। এরপর নেত্রকোণা শহরে চলে আসেন এবং সংবাদের তথ্য সংগ্রহের অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে রাত ৩টার দিকে পাথর দিয়ে প্রথমে মাথায় সজোরে আঘাত করা হয়। অচেতন হয়ে গেলে ছুরি দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় সাইফুলের।’
কমান্ডার মঈন আরো বলেন, পরে পরিচয় গোপন করতে গ্রেফতারকৃতরা ভুক্তভোগী সাইফুলের পরনের শার্ট-প্যান্ট খুলে তার মুখমণ্ডল পেঁচিয়ে মোটরসাইকেলের পেট্রল দিয়ে মুখে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এরপর হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও সাইফুলের মোবাইল ফোন পানিতে ফেলে তারা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান। মোটরসাইকেলটি মাসুকের ভাগ্নের কাছে রেখে দুজনই আত্মগোপনে চলে যান।
গ্রেফতার মাসুক সম্পর্কে র্যাব মুখপাত্র বলেন, রাজধানীর মিরপুর-১৪ এলাকায় বসবাস করতেন মাসুক। দিনে রাজমিস্ত্রির কাজ আর সন্ধ্যায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রির আড়ালে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতেন তিনি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপন করেন। সেখানে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন।
গ্রেফতার ফয়সাল রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ছিনতাই করতেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপন করেন। ঐ এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাব তাকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
Posted ১০:৪৫ | সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain