বুধবার ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে বয়স্ক ও বিধবা ভাতায় অনিয়ম হতদরিদ্র ব্যক্তিরা বাদ তালিকায় আছে কোটিপতিদের নাম

  |   সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট

ঝিনাইদহে বয়স্ক ও বিধবা ভাতায় অনিয়ম হতদরিদ্র ব্যক্তিরা বাদ তালিকায় আছে কোটিপতিদের নাম

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১ নং সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নে ভাতা ভোগীদের তালিকা প্রণয়নে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তালিকা প্রণয়নে পরিপত্র বিধি মোতাবেক না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রণীত তালিকা অনুমোদন না দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন ঐ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি শ্রী নিখিল দত্ত ও সাধারন সম্পাদক আনিসুর রহমান।তারা আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন উপজেলার অত্র ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক গত-২৭ জানুয়ারী-১৯ ইং তারিখে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে উপকার ভোগীদের যে চুড়ান্ত তালিকা অনুমোদনের জন্য কালীগঞ্জ সমাজ সেবা অফিসে প্রেরন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ সরকারী পরিপত্র ও নিতিমালা বর্হিঃভূত। সরকারের মহতী উদ্দেশ্যকে বিঘ্ন ঘটানো সহ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই তালিকা তৈরী করে সমাজ সেবা অফিসে প্রেরন করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।সূত্রমতে, যে তালিকা তৈরী করা হয়েছে তাতে ৬১ জনকে বয়স্ক ভাতা, ২৭ জনকে বিধবা ও স্বামী নিগৃতা দূস্থ মহিলা ভাতা এবং ২৩ জনকে অচল প্রতিবন্ধী ভাতাসহ মোট ১১১ জনকে উপকার ভোগীর নাম উল্লেখ করে তালিকাভূক্ত করে জমা দেওয়া হয়েছে। যাতে ব্যাপক স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দূর্নীতির করা হয়েছে। তারা এই তালিকা তদন্ত পূর্বক পূনরায় সরকার ঘোষিত নিতিমালা মোতাবেক প্রকৃত উপকার ভোগীরা যাতে তালিকা ভূক্ত হয় সে ব্যাপারে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এবং সমাজ সেবা কর্মকর্তার সু-দৃষ্টি কামনা করা হয়েছে।১ নং সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগে সভাপতি নিখিল দত্ত ও সাধারন সম্পাদক আনিসুর রহমান এক লিখিত অভিযোগে জানায়, আমরা দুইজন ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে ঐ তালিকা তদন্তপূর্বক বিধি মোতাবেক করার জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি। তারা ঐ আবেদনে উল্লেখ করেছেন সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নের বর্তমান নির্বাচিত চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু গত সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে অবস্থান করে। এরপর গত-২৭ জানুয়ারী-২০১৯ তারিখে চেয়াম্যানের অনুপস্থিতিতে এক সভায় উক্ত ১১১ জন উপকার ভোগীদের তালিকা চুড়ান্ত করা হয় এবং গত-৩ ফেব্রয়ারী-১৯ তারিখে কালীগঞ্জ সমাজ সেবা অফিসে ৪১.০১.৪৪৩৩.০০০.০৫.০০১.১৭.৮(৪৫) নং স্মারক মোতাবেক প্রেরন করা হয়।উক্ত তালিকায় আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, লাখোপতি, কোটিপতিদের নামও অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। অথচ যে জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের এ কর্মসূচিটি চালমান রয়েছে প্রকৃতপক্ষে সেই হতদরিদ্র ব্যক্তিরা বাদ পড়েছে ফলে তারা সরকারের এ আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে বয়স্কভাতা পাওয়ার উপযুক্ত দরিদ্র ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার অনিয়ম সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। এই ইউনিয়নের স্বচ্ছল পরিবারের তালিকায় যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তারা হলেন-ভাটপাড়া গ্রামের মৃত নেপাল দাসের ছেলে মধুসুদন দাস (৬৯), একই গ্রামের মৃত কুমারেশ দাসের ছেলে কমলেশ দাস (৬৭), দূর্গাপুর গ্রামের মৃত বসন্ত বিশ্বাসের ছেলে নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের (৭২)। এদের মধ্যে নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের গোয়ালে বিদেশী ৪ টা গরু রয়েছে যার প্রতিটির আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।এছাড়া তার ১ ছেলে থাকে কানাডায় উচ্চ বেতনে একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। একই গ্রামের মৃত জিতেন্দ্রনাথের ছেলে সোনাতন বিশ্বাসেরর মাঠে রয়েছে ২৫ বিঘা আবাদি জমি, দৃষ্টি নন্দিত পাকাবাড়ি ও আছে ২০ টি গরু রয়েছে। অন্যদিকে এই তালিকায় সম্পদশালী আরো যাদের নাম ভাতার তালিকাভূক্ত করা হয়েছে তারা হলো যথাক্রমে সিংদহ গ্রামের আব্দার আলী মন্ডলের ছেলে আনোয়ার মন্ডল (৬৬), কমলাপুর গ্রামের মৃত হারেজ আলী মন্ডলের ছেলে ইমারত আলী মন্ডল, একই গ্রামের মৃত আনছার আলী বিশ্বাসের ছেলে ইসরাইল বিশ্বাস (৮১), নিয়ামত আলী খাঁ এর ছেলে মতিয়ার রহমান খা (৬৬), মহাদেবপুর গ্রামের হরেন্দ্রনাথ পালের স্ত্রী আশালতা পাল (৭৩), একই গ্রামের মৃত গঞ্জাধরের ছেলে সুনিল সরকার (৬৮), সিংদহ গ্রামের ছবুর আলীর স্ত্রী নবিরন নেছা (৬৬), মহাদেবপুরের ধনী বাড়ির মৃত ধিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ছেলে অদ্যনাথ বিশ্বাস (৭১), ভাটপাড়া গ্রামের মৃত রসিক দাসের ছেলে কৃঞ্চপদ দাস (৬৬), মহাদেবপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী জহুরা বেগম (৬৬), দূর্গাপুর গ্রামের জালাল মালিথার স্ত্রী সালেহা খাতুন (৬৬), সিংদহ গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে জামাত আলী (৬০), মহাদেবপুর গ্রামের সুবল বিশ্বাসের স্ত্রী অনিতা বিশ্বাস (৫০)।এ ব্যাপারে আদালত কর্তৃক জামিনে মুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু বলেন, আমি তালিকা করার কথা শুনেছি, কিন্তু তারা যখন ঐ তালিকা চুড়ান্ত করে তখন আমি কারাগারে ছিলাম। ইউপি আওয়ামীলীগ সভাপতি বলেন, কথিত একাই উক্ত ইউনিয়নের ৭ টি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন। এগুলো হলো-সুন্দরপুর দাখিল মাদ্রাসার সাভাপতি, সুন্দরপুর বে-সরকারী দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি, দূর্গাপুর ডিপটি মেশিন কমিটির সভাপতি, ইউনিনয়ন সোলার প্যানেলের দায়িত্ব, দশ টাকা কেজি দরে চাউলের ডিলার, বিআরডিবি উপজেলা সভাপতি ও ইউনিয়ন উন্নয়ন কার্য পরিচালনা কমিটির প্রতিনিধি। তার ইন্ধনে কয়েকজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে অসহায় মানুষের ভাগ্য বঞ্চিত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে আসছে। যে তালিকা চুড়ান্ত করেছে সেই তালিকাটি টাকার বিনিময় এবং স্বজনপ্রীতি প্রমানও আছে। এই ইউনিয়নে দূর্নীতির শির্ষে রয়েছে ৬ নং ওয়ার্ড । অন্যান্য ওয়ার্ডে অল্প সংখ্যাক কার্ড পেলেও তার নিজ ওয়ার্ডে ২৩ জনের নামের তালিকা করেছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:৪৩ | সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com