শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

জঙ্গিবাদ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী পরস্পরবিরোধী বক্তব্য

  |   রবিবার, ১৯ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট

জঙ্গিবাদ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী পরস্পরবিরোধী বক্তব্য

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে একই সংবাদ সম্মেলনে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিলেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। একবার তিনি বলেন, সরকার গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরকার জঙ্গিবাদকে উপলক্ষ হিসেবে সামনে নিয়ে আসছে। আবার তিনি বলেন, বাংলাদেশে উগ্রবাদীদের স্থান আরও পাকাপোক্ত হয়েছে। জঙ্গিরা মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালাচ্ছে।

রবিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা উঠে আসে বিএনপি নেতার সংবাদ সম্মেলনে।

জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে বরাবরই সমালোচনায় মুখর বিএনপি। গত কয়েকদিনের ঘটনার প্রেক্ষিতেও দলটির নেতারা বলছেন, এসব তৎপরতা নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। শনিবার রাজধানীতে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে জঙ্গি হামলা নিয়ে তার মধ্যে সন্দেহ আছে।

রবিবারের সংবাদ সম্মেলনেও রিজভী একবার বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়-জঙ্গিবাদ নিয়ে বিনাভোটের সরকার জনগণের সাথে লুকোচুরি খেলছে। সরকারের গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী বহু গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উগ্রবাদকে উপলক্ষ হিসেবে জনগণের সামনে আনা হয়েছে।’

পরক্ষণেই রিজভীর বক্তব্য হয় অন্য রকম। তিনি বলেন, ‘যদিও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-জঙ্গীদের স্থান এদেশে হবে না, এধরনের কথা তিনি আগেও বলেছেন। তিনি যতই এধরণের কথা বলেন, আমরা ততই দেখতে পাচ্ছি উগ্রবাদীদের স্থান আরো পাকাপোক্ত হচ্ছে, যার প্রমাণ মিললো গত কয়েকদিনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায়। জঙ্গিদের মধ্যযুগীয় বর্বরতার বাড়বাড়ন্ত অব্যাহত আছে।’

জঙ্গি নির্মুলে ঐক্যের ডাকও দেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমি আবারও দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই-সরকারের বিভেদ-বিভাজন ও প্রতিহিংসার রাজনীতিকে এড়িয়ে মধ্যযুগীয় অন্ধশক্তি জঙ্গিবাদকে দমন করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করতে হবে।’

বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা শুরু গত শতকের ৯০ দশক থেকে। তবে সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় জঙ্গিরা বীভৎসতা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা করে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার পর পাল্টা অভিযানে ছয় মাসে নিহত হয় সন্দেহভাজন প্রায় ৩০ জন জঙ্গি।

কয়েক মাস স্থিমিত থাকলেও সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনা আবারও উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে গত শুক্রবার রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাব ক্যাম্পে আত্মঘাতী হামলা এবং পরদিন খিলগাঁওয়ে র‌্যাব ক্যাম্পে আবার হামলার চেষ্টা নিয়ে দুই দিন ধরে আলোচনা চলছে দেশ জুড়ে।

দেশ আজ  ভয়ঙ্কর সহিংস সন্ত্রাসের ছোবলে আক্রান্ত- এমন মন্তব্য করে  রিজভী তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের রক্তাক্ত সংঘাত শুরু হওয়া থেকে সরকার দেশবাসীকে নানা তত্ত্ব কথা শুনিয়ে এসেছে। ঘটনা ঘটার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দায় চাপিয়ে দেন অন্যের ঘাড়ে। নির্মূল তো দুরে থাক, সম্প্রতি গত কয়েকদিনে উগ্রবাদীদের সহিংস ঘটনায় মনে হচ্ছে এদের নেটওয়ার্ক আরো বেশি বিস্তৃত হয়েছে।’

এপ্রিলের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে সামরিক চুক্তি হলে বিএনপি তা মেনে নেবে না বলেও জানান রিজভী। তিনি বলেন, ‘ভারতের সাথে আমাদের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গোপনীয়তা বলে কিছু থাকবে না। আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভারতের সবকিছু জানার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। শক্তিশালী দেশ হিসেবে ভারত নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। তাতে আমাদের স্বাধীনতা হবে বিপন্ন এবং সার্বভৌমত্ব হবে আরো দুর্বল। সুতরাং ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক এদেশের জনগণ কখনোই মানবে না।’

বিএনপি নেতা ‘পৃথিবীতে শক্তিশালী ও অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী দেশের মধ্যে সামরিক চুক্তি হলে সব সুবিধা শক্তিশালী দেশই পেয়ে থাকে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রস্তাবিত সামরিক চুক্তিতে এর থেকে কোন ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না।

প্রধানমন্ত্রীকে নানা বিষয়ে ভুল বোঝানো হচ্ছে- প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এমন একটি বক্তব্যের নিয়েও কথা বলেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সর্বমহলে এখন এ বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। দেশের প্রধান বিচারপতি যখন এধরনের অভিযোগ উত্থাপন করেন, সেটি নিশ্চয়ই জনমনে যৌক্তিক ভিত্তি পায়।’

রিজভী বলেন, ‘কী পরিমাণ ভুক্তভোগী হলে স্বয়ং প্রধান বিচারপতিও ক্ষুদ্ধ হয়ে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের বিষয়ে অভিযোগ তোলেন। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি স্বাধীন অঙ্গ। সেখানে নির্বাহী বিভাগের অবিরত হস্তক্ষেপ চলতে থাকলে রাষ্ট্রক্ষমতার ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষমতাধর ব্যক্তির অমানবিক আচরণে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির আদালতে শরণাপন্ন হওয়ার শেষ আশ্রয়টুকুও থাকে না।নির্বাহী বিভাগ হিংসাশ্রয়ী হয়ে দানবীয় রূপলাভ করে।’

রিজভী বলেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীদের কথাবার্তায় উগ্রতা, অহমিকা আর দম্ভের প্রকাশ ঘটে সবসময়। তারা রাষ্ট্রের অন্য কোন স্বাধীন অঙ্গের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিক রূপলাভ করেছে বলেই আজকে বিচার বিভাগের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ সর্বত্র দৃশ্যমান।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ প্রধানমন্ত্রী আমলে নেবেন কী না জানি না,তবে যদি প্রধানমন্ত্রী বিভ্রান্তকারীদের ভুল তথ্যের প্রভাব থেকে বেরিয়ে গণতন্ত্রের পথে হাঁটতেন, গণইচ্ছাকে সম্মান দিতেন তাহলে রাষ্ট্রের অঙ্গগুলো রাষ্ট্রের সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতাবলে স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে কাজ করতে পারতো। তাতে দেশকে এতোটা সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে পড়তে হতো না।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৯:০৮ | রবিবার, ১৯ মার্চ ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com