| বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম- জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেছেন, হুট করে রাস্তায় নেমে দু’টো স্লোগান দিলাম, আর গুলি খেয়ে প্রাণ হারালাম। কারণ, এই সরকার আমাদেরকে ছাড়বে না। এই সরকারকে কাবু করতে হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় স্বাধীনতা হলে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম’ নামের একটি সংগঠন এই আলোচনা সভা আয়োজন করে।
মঈন খান বলেন, যে আন্দোলনের কথা আপনারা বলছেন- সেই আন্দোলন করতে হবে ঠান্ডা মাথায়। আমাদের আগামী আন্দোলনের বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করতে হবে। বাস্তবতাকে মাথায় রাখতে হবে। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আগামীতে তার নেতৃত্বে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো।’
তিনি বলেন, আজকে যে আলোচনা হয়েছে পাশাপাশি আত্মসমালোচনা হয়েছে এতে আমি বিশেষভাবে সন্তুষ্ট। আত্মসমালোচনা অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন। আমরা ভুল করলে, অবশ্যই তা স্বীকার করতে হবে। যেসব ভুল নিজেদের ভেতরে বললে সমাধান হয়, সেটা প্রকাশ্যে বলা যাবে না। আর যেটা প্রকাশ্যে বললে সমাধান হয়, সেটা ভেতরে বলা যাবে না।
তিনি বলেন, রাস্তায় গিয়ে পাঁচ/সাতজন মানুষ কথা বলতে পারি- সেই অবস্থা আজকের বাংলাদেশে নেই। এই যে বাস্তবতা, সেটা আমাদের প্রত্যেককেই বুঝতে হবে। আমরা আইয়ুবের শাসন দেখেছি, ইয়াহিয়ার শাসন দেখেছি, এরশাদের শাসন দেখেছি। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে চারজন শহীদকে আমরা মনে রেখেছি। এই চারজন জীবন দিয়ে সারা পাকিস্তান তোলপাড় করে দিয়েছিল। ভাষা আন্দোলনে আমাদের স্বাধীনতার বীজ বপন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই আন্দোলনে জীবন দিয়েছিলেন মাত্র চারজন। আইয়ুব খানের সময় রাজশাহীতে ড. জোহা, এরশাদের সময় জিপিও মোড়ে একটি মাত্র জীবন গিয়েছিল।
তিনি বলেন, যে বাস্তবতার কথা আমি বলছি সেটা হলো- বিগত ১০ বছরে বর্তমান স্বৈরশাসকের আমলে কত হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে? কাজেই আজকের সরকারের সঙ্গে পূর্ববর্তী শাসকদের যে একটি কোয়ালিটি ডিফারেন্স, গুণগত ব্যবধান আছে, সেটি আপনারা ভুলে যাবেন না। কাজেই বায়ান্নর আন্দোলন ও উনসত্তরের আন্দোলনের সঙ্গে আজকের আন্দোলনের গুণগত ফারাক থাকতে হবে। যদি সেই ফারাক না থাকে, তাহলে এই আন্দোলন সফল হবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের একটি মাত্র উপায়, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই সরকারকে বিদায় দিতে হবে, এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। আর এই সরকারকে বিদায় দিতে হলে যে আন্দোলনের কথা আপনারা বলেছেন, সেই আন্দোলন করতে হবে ঠান্ডা মাথায়। বাস্তবধর্মী পরিকল্পনার ভিত্তিতে।
মঈন খান বলেন, এখন বাংলাদেশের ভ্যালুজ সিস্টেম হয়েছে বিত্ত, বৈভব, সম্পদ। এখানে মানবাধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। এখানে দৈনন্দিন কার্যক্রম হচ্ছে খুন, রাহাজানি। এখানে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড হচ্ছে নারী- এমনকি অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের সম্ভ্রমহানি। এই বাংলাদেশের জন্য কি তারা (মুক্তিযোদ্ধারা) জীবন দিয়েছিল? এ প্রশ্নের উত্তর আজ আওয়ামী লীগকে দিতে হবে।
তিনি বলেন, মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে কেউ চিরদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না, পারবে না। পৃথিবীর ইতহাস সাক্ষ্য দেয়, কেউ টিকে থাকতে পারেনি। গণতন্ত্রের জন্য সাধারণ মানুষ জীবন দিয়েছিল যে কারণে, সেটা হলো- পাকিস্তানি অবকাঠামোর মধ্যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থাকতে পারে না। সেই কারণে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু আজকের শোষক-শাসক সমাজ বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, সেখানে কারো জীবন নিরাপদ নয়, কারো জীবনে কোনো স্বাধীনতা নেই, কথা বলার স্বাধীনতা নেই। কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে হুমকি দেয়, মামলা-হামলার কথা নাই বা বললাম।
নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহম্মদ রহমাতুল্লাহ, নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
Posted ১৮:৪৪ | বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain