নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২৫ মে ২০২৪ | প্রিন্ট
ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের হাতে বন্দি ইসরায়েলি নারী পণবন্দিদের নিয়ে যে ভিডিওটি ইহুদিবাদী গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে তা বিকৃত ও বানোয়াট।
হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিথ্যা সাক্ষ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সাহসি ফিলিস্তিনি জাতির প্রতিরোধ যুদ্ধের বদনাম করার লক্ষ্যে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের ব্যর্থ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ ধরনের ভিডিও প্রকাশের জন্য বর্তমান সময়কে বেছে নেয়া হয়েছে। এ ধরনের ভিডিওর কনটেন্ট যে মিথ্যা সেকথা উপযুক্ত দলিল প্রমাণের ভিত্তিতে বহু গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে।
হামাসের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ভিডিওটিতে গত বছরের ৭ অক্টোবর একটি ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে কয়েকজন ইহুদিবাদী নারী সেনাকে গাজা ব্রিগেডের যোদ্ধাদের হাতে বন্দি হওয়ার সময়কার ঘটনা দেখানো হয়েছে। এ সময় ইসরায়েলি নারী সেনারা বেসামরিক পোশাকে ছিল। কারণ, সময়টি ছিল শনিবার সকাল এবং সেদিন ইসরায়েলে সরকারি ছুটি থাকায় এসব নারী সেনা ডিউটিতে ছিল না বরং অবসর সময় কাটাচ্ছিল।
হামাস তার বিবৃতিতে আরো জানিয়েছে, মূল ভিডিওটি হুবহু দেখানো হয়নি বরং গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে কেটে ফেলা হয়েছে এবং এমন সব দৃশ্য রাখা হয়েছে যাতে ইসরায়েলি নারী সেনাদের ওপর নির্যাতনের মিথ্যা দাবি সত্য প্রমাণ করা যায়।
হামাসের ভাষায়, ভিডিওতে শুধু দৃশ্যগুলোই পরিবর্তন করা হয়নি বরং এটির কথোপকথনের অনুবাদও ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে ইংরেজি ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা আরবি বা ইংরেজি কোনো ভাষায়ই কোনো হামাস যোদ্ধার মুখ থেকে বের হয়নি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ভিডিওটি হামাস যোদ্ধাদেরই বডি ক্যামেরা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অর্থাৎ ইসরায়েলি নারী সেনাদের বন্দি করার সময় সেখানে হামাস যোদ্ধারা ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিল না। কিন্তু হামাস যোদ্ধাদের নারী নির্যাতনকারী হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্যে ৩ মিনিটের ভিডিওটি প্রকাশ করা হলেও এর কোথাও কোনো হামাস যোদ্ধাকে ইসরায়েলি নারী সেনাদের গায়ে হাত দিতে দেখা যায়নি। হামাস যদি নারী নির্যাতনকারীই হয় তাহলে তারা ইসরায়েলি নারী সেনাদের গায়ে হাত দিল না কেন? এ থেকে প্রমাণিত হয়, হামাসের বদনাম করতে গিয়ে উল্টো প্রতিরোধ যোদ্ধাদের উন্নত গুণাবলীর কথাই তুলে ধরেছে দখলদার ইসরায়েল।
হামাসের বিবৃতির বরাত দিয়ে লেবানন-ভিত্তিক আল-মায়াদিন টিভি জানিয়েছে, ভিডিওতে দু’জন নারী সেনার মুখে রক্তের যে দাগ দেখা গেছে সেটি এ ধরনের অভিযানের স্বাভাবিক পরিণতি। তবে ভিডিওটি দিয়ে নির্যাতনের কোনো দৃশ্য প্রমাণ করা যায়নি বরং ইসরায়েলি নারী সেনাদের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের কথোপকথন ছিল সম্পূর্ণ সহিংসতামুক্ত।
হামাস আরো বলেছে, প্রতিরোধ আন্দোলনের নৈতিক বিধি অনুসারে ইসরায়েলি নারী সেনাদের সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে এবং হামাসের গাজা ব্রিগেড এসব নারী সেনাকে অপমান করেছে- এমন কথাও ভিডিওটি দিয়ে প্রমাণ করা যায়নি; যদিও এসব নারী সেনা ৭ অক্টোবরের আগে গাজা সীমান্তে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী বহু ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়েছে, ভিডিওটি ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা সত্ত্বেও এতে ইসরায়েলি নারী সেনাদের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের সদাচারণের প্রমাণ বহন করে; অথচ এই যোদ্ধারা জানতেন যে, ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু বন্দিদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে দখলদার সেনারা।
আল-মায়াদিন জানিয়েছে, ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো সম্প্রতি ইহুদিবাদী সেনাদের একটি ঘাঁটি থেকে পাঁচ ইসরায়েলি নারী সেনাকে বন্দি করার ভিডিও প্রকাশ করে। ওইসব গণমাধ্যম দাবি করে, হামাস যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি নারী সেনাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছিলেন। ঘটনাটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দিনের প্রথম প্রহরে আল-আকসা তুফান অভিযানের দিন হামাস যোদ্ধাদের বডি ক্যামেরায় ধারন করা। তবে সে ভিডিও কীভাবে ইহুদিবাদীদের হাতে পড়েছে সেকথা ফাঁস করেনি ইসরায়েলি গণমাধ্যম।
একটি মার্কিন গণমাধ্যম গত বুধবার বলেছে, ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে কোনো যৌন নির্যাতন বা নিপীড়ন চালায়নি। বার্তা সংস্থা এপি এ সম্পর্কে জানিয়েছে, ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে ইহুদিবাদী নারীদের ওপর যৌন নির্যাতনের যে দাবি প্রচার করেছিল শেষ পর্যন্ত তা ধোপে টেকেনি বরং প্রমাণিত হয়েছে, ওই দিন কোনো ইসরায়েলি নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়নি। সূত্র : পার্সটুডে।
Posted ০৮:১৬ | শনিবার, ২৫ মে ২০২৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain