
নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ | প্রিন্ট
অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় সংসদের সাধারণ কিংবা উপনির্বাচনে বলপ্রয়োগ বা জবর-দখলের কারণে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করায় সক্ষমতা হারালে ভোটকেন্দ্র কিংবা পুরো নির্বাচনের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমন বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এ যুক্ত করে তা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন।
এমনকি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়েছে কমিশন। সঙ্গে সংস্কার কমিশনের মোট ৩৫ সুপারিশের মধ্যে ২৫টির সঙ্গে একমত এবং বাকি ১০টির সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়েছে ইসি। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত সুপারিশ কার্যকরের জন্য সরকারের আইন ও সংসদ বিভাগে এই প্রস্তাব পাঠায় ইসি।
একমত হওয়া আশু বাস্তবায়নযোগ্যে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হচ্ছে, সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে ইসির সম্মতি ছাড়া বদলি করা যাবে না। প্রার্থী তার হলফনামায় কোনো মিথ্যা তথ্য দিলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও পদে থাকায় অযোগ্য হবেন। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে ইসির কাছে যদি প্রতীয়মান হয় কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা সরকারের কোনো বিভাগ কর্তব্যে অবহেলা করেছেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
একইভাবে, নির্বাচন-সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনরত যে কোনো কর্মকর্তা বা সরকারি পদে অধিষ্ঠিত অন্য যে কোনো ব্যক্তি, বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো সদস্যকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট প্রদান বা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাধা বা প্রতিরোধ করলে বা প্রচেষ্টা চালালে এবং ভোটারকে প্রভাবিত করলে তাকে প্রত্যাহার ও নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দিতে পারবে ইসি।
অন্যদিকে, দ্বিমত পোষণ করা আলোচিত ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ভোটের পর সংক্ষুব্ধ কেউ কমিশনের বিরুদ্ধে নালিশ জানালে সংসদীয় কমিটির কাছে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে ইসিকে’- এই সুপারিশে ভিন্নমত পোষণ করে তারা। এ ছাড়া ভোটের ফলাফল প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সুষ্ঠু ভোটের স্বপক্ষে সার্টিফাই করা এবং স্বাধীন কমিশন গঠন করে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস করা। এ ধরনের কমপক্ষে ১০টির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করার জন্য তিনটি কারণ চিহ্নিত করে ইসি।
কারণগুলো হচ্ছে সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ইসির ক্ষমতা খর্ব হওয়া, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়া এবং আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থেকে ইসির কার্যক্রমকে সীমিত করা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসিরউদ্দীন ও তাদের দ্বিমত পোষণ করার ওই তিনটি কারণকে নিশ্চিত করেন।
এদিকে, আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশে বলা হয়েছে, নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া, কর্মকর্তা বা ব্যক্তির ব্যক্তিগত নথি, চাকরির বই ও বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে লিপিবদ্ধ করা হবে। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংস্কার কমিশনের তিন কার্য দিবসের বদলে ইসি ১০ কার্যদিবস সংযোজন করে তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।
প্রস্তাবে জেলার রিটার্নিং অফিসার বা রিটার্নিং অফিসাররা লিখিত নোর্টিসে ওই জেলার সব সরকারি বা বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রধানকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং) প্যানেল প্রস্তুত করার জন্য একটি তালিকা পাঠাবেন। এর সঙ্গে ইসি নতুন কিছু শব্দ যুক্ত করে সেখানে একই জেলার একাধিক রিটার্নিং অফিসার থাকলে তার আলোচনার ভিত্তিতে স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংস্কার কমিশনের সঙ্গে একমত পোষণ করে।
সুপারিশে বলা হয়, নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা বা সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রে কোনো প্রকার তথ্য গোপন করা বা মিথ্যা তথ্য দেননি তা প্রার্থীকেই সার্টিফাই করতে হবে। মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রার্থী বা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোনো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রিটার্নিং অফিসারের আদেশে সংক্ষুব্ধ হন, তাহলে তিনি নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে কমিশনে আপিল করবেন এবং আপিলে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়, তফসিল ঘোষণা করার পর নির্বাচনের বিষয়ে আদালত নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসঙ্গত নোটিস ও শুনানির সুযোগ না দিয়ে অন্তর্বর্তী বা অন্য কোনো আদেশ বা নির্দেশ দিতে পারবেন না। ইসির অনুমোদিত ব্যক্তির বাইরে ভোটকেন্দ্রে বা এর বাইরে নির্ধারিত চৌহদ্দির ভেতরে অন্য কোনো ব্যক্তি, কোনো প্রার্থী, প্রার্থীর কর্মী, কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী বা কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি অহেতুক ঘোরাফেরা করতে পারবেন না।
কেউ নিয়ম ভাঙলে তাহলে প্রিসাইডিং অফিসার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে এলাকা থেকে অপসারণ কিংবা আটক করতে পারবেন। কমিশন তাতে নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করে বলেছে, কমিশন নির্বাচনি ব্যয়ের অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে এক বা একাধিক নির্বাচনি আসনের জন্য ‘নির্বাচনি ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন করবে।
এ ক্ষেত্রে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করবে মনিটরিং টিম। কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনি ব্যয়ের ক্ষেত্রে আইন বা বিধিমালা লঙ্ঘন করলে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।’
Posted ০৮:১০ | বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain