
| বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০ | প্রিন্ট
অনাকাংক্ষিত এবং উদ্ভুট এক পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছে পুরো পৃথিবী। যা ঘটতে যাচ্ছে তা হয়ত চিন্তার বাইরে। করোনাভাইরাসের গ্লোবাল মহামারী থমকে দিতে যাচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। ভাইরাসটির ক্ষতিকর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে যে ধাক্কা দিয়েছে তা কাঠিয়ে ওঠতে কী পারবে বিশ্ব? বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো যেভাবে লকডাউন হতে যাচ্ছে তার সুদূরপ্রসারি বিরুপ প্রভাব কী বিশ্ব বহন করতে প্রস্তুত? ইতালির..পর ডেনমার্ক.. তারপর কে…?
গতকাল বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা WHO কোভিড-১৯ অর্থা নভেল করোনাভাইরাসকে “পেনডেমিক” বলে হুশিয়ারি এবং সতর্ক করেছে। এতদিন যে ভাইরাসকে তারা ‘এপিডেমিক’ বলে আসছে তা গত ১১ মার্চ থেকে পেনডেমিক এ রুপান্তরিত করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি এখন আর কোন দেশের মধ্য সীমাবদ্ধ নেই। ভাইরাসটি একই সময়ের মধ্য মহামারী আকারে ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। বিজ্ঞানী, এক্সপার্ট এবং বিশ্ব নেতাদের মধ্য উদ্বেগ উৎকন্ঠা এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে প্রতি মূহুর্তে। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার বস ত এক প্রর্যায়ে বলে বসে বিশ্বকে এখনই নিতে হবে “urgent and aggressive action”।
বছরের শুরুতে যখন করোনা ভাইরাস চীনে ধরা পড়ে তারপর থেকে এখন পর্যন্ত এর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি যা আমাদের ভয়কে আর অতিমাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা অদম্যগতিতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ভাইরাসটির ভ্যাকসিনেশন উদ্ভাবন করার জন্য। আমরা আশাবাদী অতিশিগ্রই তারা কোন সুসংবাদ নিয়ে আসবেন। যদিও ভাইরাসটির বিস্তারে বিশ্বজুড়ে একধরণের উৎকন্ঠা তৈরি হয়েছে তবে আশার ব্যাপার হলো ইতিমধ্যে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্য প্রায় ৬০ হাজারের মত মানুষ সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন।
WHO করোনা ভাইরাসকে “গ্লোবাল মহামারী” ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে নতুন নতুন ডেভলাপমেন্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ১. আমেরিকা ইউরোপের সব ধরণের ভ্রমণ বাতিল করেছে পরবর্তী একমাস প্রর্যন্ত, বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট টার্ম্প এর সবধরণে সফর। ২. ইউরোপের আরেক দেশ ডেনমার্ক গত ১২ মার্চ থেকে লকডাউন।৩. মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত দেশটিতে গত সন্ধায় জরুরী ভিত্তিতে অন্তত্যপক্ষে দুই সপ্তাহের ছুটি ঘোষণা করেছে।
দেশটিতে কেউ প্রবেশ বা বের হতে পারবে না। তার মানে কুয়েতকে শাটডাউন করা হয়েছে। ৪. বিদেশিদের দেওয়া সব ধরনের ভিসা স্থগিত করেছে ভারত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে বিশ্ব মহামারী ঘোষণা করার কিছুক্ষণের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ থাকবে। ৫. সবচেয়ে খারপ খবরটি দিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল, তার ভাষ্য অনুযায়ী কোভিড-১৯ ভাইরাসে জার্মানির ৭০ শতাংশ মানুষ সংক্রমিত হতে পারেন। তার মানে দেশটি খুবই শিগ্রই লকডাউন এর আওতায় আসছে। ৬. রিপাবলিক অব আয়ারলেন্ড সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।
হতাশার ব্যাপার হলো অনেকের মধ্য একটি ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে যে এই ভাইরাস দ্বারা কেউ আক্রান্ত হলে তার আর রক্ষা নেই যা মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। আক্রান্তদের সেলফ আইসোলেশন বা কোয়েন্টারেইন এর মাধ্যমে সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব যা আমরা প্রত্যাক্ষ করছি চীন এবং ইটালীতে করা হচ্ছে। কাজেই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হলে ভাইরাসটি প্রতিরোধ সম্ভব।
করোনাভাইরাস যেভাবে মানবিক ক্ষতি করছে একইভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। বিশ্ব আর একটি ভয়াভয় অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হওয়ার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। লক্ষণীয় যে, বিশ্বে ইতিমধ্যেই উৎপাদন, উন্নয়ন, বাণিজ্য, পর্যটন খাতগুলো ঝিম ধরে বসে আছে। সবকিছুতে স্তবিরতা নেমে এসেছে। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে বিশ্বমন্দায় পড়তে যাচ্ছি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বিমান ও পরিবহন খাত।
সারা বিশ্বে গত দুই মাসে ২ লাখেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইসিএও) জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোকে ৫ বিলিয়ন ডলার লোকসান হবে যা রিতিমত চমকে ওঠার মত খবর। বিমান সংস্থাগুলো এই মাশুল কীভাবে সামাল দেয় তা সময় বলে দেবে।
মোঃ হাফিজুর রাহমান, অনলাইন এক্টিভিষ্ট
Posted ০৩:২৭ | বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin