
| শনিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৮ | প্রিন্ট
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবারের যুক্তরাজ্য সফরের অাগের লেখাটিতে অনুরোধ করেছিলাম, অন্তত এবারের সফরে এখানকার বিএনপির ক্ষোভ প্রতিবাদের ভাষা অার তার বহিঃপ্রকাশটি যেন ভিন্নতা পায়। সেখানে যেন শালীণতা অার রাজনৈতিক ভাষা থাকে, অন্যান্যবারের তুলনায়। হ্যা, সত্যিই ভিন্নতা পেয়েছে। তবে সে ভিন্নতা ধর্মকে অবমাননার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে বিভেদ তৈরীর লজ্জাস্কর ও অতীতের চেয়ে অারো নেতিবাচক ভিন্নতা।
অাশ্চর্য হবার মতো বিষয়, যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে চলতি বছরের সাত ফেব্রয়ারীর বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর অসহিষ্ণুতার ঘটনায় অামরা দেখি ঘটনার পরে দুঃখ প্রকাশ করেছিল দলটি। কিন্তু এবারের প্রধানমন্ত্রীর সফরে ” হরে কৃষ্ণ হরে রাম ” মন্ত্রজপকে বিকারগ্রস্থতায় এবং নীচতায় রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। অাপনার বা অামার যে কোন দল বা রাজনৈতিক অাদর্শের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বা ক্রোধ থাকতে ই পারে। কিন্তু যেখানে অাপনি মুখে অন্তত অসাস্প্রদায়িক রাজনীতির কথা বলছেন, সেই একই মুখে অামার ধর্ম বা বিশ্বাসকে অপমানিত করার চেষ্টা কিসের ইঙ্গিত দেয় ?
শুধুমাত্র শ্লোগানটি নয়,এখানে উল্লেখযোগ্য ঢোল-করতাল ও ব্যাঙ্গাত্বক অঙ্গভঙ্গির দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, শ্লোগানধারীদের বিকারগ্রস্থ চিত্তে ধর্ম বা মানুষের বিশ্বাসকে অাঘাত করার প্রবণতার বিষয়টি। যার নেতৃত্বে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে বা ঘটেছে তিনি যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি। ঘটনাটি এখানেও শেষ হয়নি। যুক্তরাজ্য বিএনপির ঐ নেতা গত সোমবার অাবার একটি টিভি টকশোতে গিয়ে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইসলাম ধর্ম, নবীজী ( সঃ) ও সনাতন ধর্মাবলম্বীকে নিয়ে ফের ভূল এবং অপব্যাখ্যা দেন। তার এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দুটো পবিত্র ধর্মের বিশ্বাসী এবং অনুসারীরা অাবারো অাঘাতপ্রাপ্ত হন। পরবর্তী পর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক গনমাধ্যমে তার বক্তব্যের একটি লিখিত ব্যাখ্যা দেন। সে ব্যাখ্যাতেও একটি অংশকে খুশী করার চেষ্টা করলেও ঘটনার সুত্রপাত হরে কৃষ্ণ হরে রাম তথা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তার কোন ব্যাখ্যা বা দুঃখ প্রকাশের কোন প্রয়োজনীয়তা তিনি বোধ করেননি।
এমনকি, বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে পদবীধারী সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজনকেও অামরা দেখি এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এটে থাকতে। যা থেকে প্রতীয়মান হয়, বিএনপি বোধহয় সচেতনভাবেই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। এ পরিস্থিতিতে মনে পড়ে যায়, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অথবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অামলে এ ধরনের অসংলগ্ন কোন ব্যাক্তি রেহাই পাননি। তাহলে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের অামলে এবং তাঁর এখানে অবস্থানকালে যদি এর সুষ্ঠ বিচার না হয়,সরকার এবং বিএনপি বিরোধী লোকেরা এটাকে বহুদুর নিয়ে যাবে। ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা সংশ্লিষ্ট একটি ইস্যু হিসেবে।
তাই অামি এখনই দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে বিষয়টির নায্য ও ন্যায়নিষ্ঠ প্রতিকার চাইছি।
গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন ও দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতনের ইস্যুতে দেশের একদল হিন্দু লোকজনই লন্ডনে সংবাদ সন্মেলন করেছিল। যা বিএনপির সরাসরি পক্ষে গিয়েছিল। কিন্তু মিষ্টার এম এ মালেক অথবা মোঃ অাব্দুল মালিকের ঐ বক্তব্যের পর ঐ সংখ্যায় লঘু হিন্দু লোকগুলি, যারা সেদিন সংবাদ সন্মেলন করেছিলেন তারা অাজ যার পর নাই অাক্রান্ত। লজ্জিত অাজ তারা ঘরে বাইরে, সন্তানের কাছেও।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশী জাতীয়তবাদ, সাম্য, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধীতার অঙ্গীকার নিয়ে। অামি অাশ্চর্য হই,লজ্জিত হই, অাজ দলটির একটি সাংগঠনিক জেলা সমপর্যায়ের সভাপতির কোন ধর্মকে জড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বালখিল্যতায়।
সামনে সংযমের মাস রামাদান সমাগত। অন্তরে এতটা উন্মততা, অন্যের ধর্ম বা বিশ্বাসের প্রতি অতটা ক্রোধ রেখে কী করে যে মানুষ দাবী করা যায়? অার এরা রাজনীতি করবে? এদের হাতে রাষ্ট্র নিরাপদ থাকবে? থাকবে কি মানুষ বা গনতন্ত্র? অামার হাইস্কুল পড়ুয়া পুত্রের এই প্রশ্নের জবাব অামি দিতে পারি নি।
ভূল তো মানুষই করে। সে ভূলটি স্বীকার করে মানুষ অাবার প্রমান দেয় তার মনুষত্বের। অার, ভূল স্বীকার না করবার মধ্যে থাকে অডাসিটি,উদ্ধত্ব। বিএনপি নামের দলটি এখন যেখানে সংগ্রাম করছে গনতন্ত্র অার মানুষের মুক্তির জন্য। যেখানে দলটির একজন বিশ্বস্ত মুখপাত্র কী অবলীলায় দেশটির সংখ্যায় লঘু মানুষের বিশ্বাসের জায়গাটিতে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপের মাধ্যমে অাঘাত করেন? গনতন্ত্রের অান্দোলন কি অামাদের শেখায় দেশের সংখ্যায় সল্প মানুষকে অাক্রমন করার শিক্ষা? অামি জানি না,অামার বোধগম্য হয় না। এতটা অপমান হয়ত অামার সংখ্যালঘু হয়ে জন্ম নেবার দায়।
লন্ডন ২৭ এপ্রিল
লেখক : বিপ্লব কুমার কুমার – লন্ডনে কর্মরত অাইনজীবি
Posted ০৩:০৯ | শনিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin