
| শনিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট
আব্দুল হাই সঞ্জু
ক্লাবের সদস্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় কারচুপির অভিযোগের কোনও সুরাহা না করেই আবারো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নতুন আরেকটি কমিটি গঠনের নির্বাচন। গত এক দশক ধরে দুটি বিষয়কে নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনার মাধ্যমে একটা চিহ্নিত সিণ্ডিকেট ক্লাবকে নিজেদের পকেটে পুরে রেখেছে। প্রথম বিষয় হল ক্লাবের গঠনতন্ত্র আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে নির্বাচনে ক্লাবের সদস্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া। এই বিশ্লেষণ আমার নিজস্ব। আমি চাই, আমার বক্তব্য যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ক্লাবের সদস্য সহ অন্যরা গ্রহণ করুক।
গত মেয়াদে একটি পক্ষের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়নকে বৈধ করার জন্য তড়িঘড়ি করে বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে ক্লাবের গঠনতন্ত্রের সংশোধন করা হয়। সেখানে বলা হয়ঃ কমনওয়েলথ এর নামে একটা সাংবাদিক সংগঠনের উচ্চ পদে থাকলেও একজন ব্যক্তি লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের উচ্চ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। এই সংশোধনীটা যে কতো লজ্জাজনক ও নগ্নভাবে করা হল এবং কেন করা হল, সেটা বোঝেনি এমন লোক কম পাওয়া যাবে। অথচ আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আমার চেনা-জানা অনেককে বিভিন্ন চ্যারিটি সংগঠনের শীর্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করতে দেখেছি। কিন্তু ওই ব্যক্তি যাতে গাছের এবঙ তলার দুটোই খেতে পারেন- সেই জন্যই গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হল। What a privilege!
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। অবশেষে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হলেন। কিন্তু ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ব্যারিস্টার তারেক কেন প্রার্থী হলেন তা নিয়েও তাঁর এলারজি দেখা দিলো। আইনজীবীদের একটা সংগঠন কিম্বা লেবার পার্টির সম্ভবত কোনও একটা শাখার উপরের পদে থাকার কারণে ব্যারিস্টার তারেকের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনারের কাছে নালিশ করলেন তৎকালীন এবং আসন্ন নির্বাচনের সেই শীর্ষ প্রার্থী। কি দারুণ নিয়ম! আমার জন্য সাত খুন মাপ, আর অন্যের জন্য…
পরে ক্লাবের সাধারণ সদস্যদের অজ্ঞাতসারে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে সেই সমস্যার আপাত সমাধান করেন। কিন্তু, গঠনতন্ত্র এখনও সংশোধন হয়নি।
বাংলা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিকাশের কারণেই লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে সদস্য সংখ্যা বাড়তে শুরু করে দ্রুত গতিতে, আজ থেকে দেড় দশক আগে।অথচ এই ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ এখনও সেই প্রিন্ট মিডিয়ার সিন্ডিকেটের কাছে। লন্ডনের বাংলা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ছাড়া প্রিন্ট মিডিয়াকে এখন লোকে খুব একটা গুনতে চায়না। অথচ ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ এখনও প্রিন্ট মিডিয়ার কাছে। আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে ব্রিটিশ-বাংলা প্রেস ক্লাব নামে আরেকটা ক্লাব দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন চ্যানেল এস এর মালিক মাহি জলিল। সেই ক্লাব যাতে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছিল এই লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিনিধিরা। অথচ আজ তারা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকের সংখ্যা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মালিকদের কাছে রীতিমত অসহায়।
নিজেদের দুর্বলতাকে ঢেকে রাখতে এবং ক্লাবে নিজেদের প্রভাব ও ক্ষমতা ধরে রাখতে গত অন্তত চার মেয়াদে ক্লাবের সদস্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে সিন্ডিকেটের লোকেরা দুষিত করে চলেছে। এমন অভিযোগ এখন সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, ভোটের জন্য ক্লাবের কিছু চিহ্নিত লোক ভুয়া লোকদের সদস্য বানায়। ভুয়া লোকের সদস্য ফী-ও তারাই পরিশোধ করে। দীর্ঘমেয়াদি দূষণ প্রকল্পের আওতায় ক্লাবের চিহ্নিত স্বার্থান্বেষীরা ভুয়া লোকদের সদস্য-ফী পরিশোধ করে ভুয়া নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছে। ভোটের দিন এবং ভোটের আগে থেকেই এসব ভুয়া ভোটারদের বিষয়ে সতর্ক হন। এদের নাম-পরিচয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন; সামাজিকভাবে বয়কট করা সহ ভোট কেন্দ্রে এদেরকে প্রতিহত করুন।
ভুয়া ভোটার ও ভুয়া সদস্য থেকে ক্লাবকে মুক্ত করতে মাসিক ভিত্তিতে ক্লাবের চাঁদা আদায় করুন। ক্লাবের সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ডাইরেক্ট ডেবিটের ভিত্তিতে চাঁদা গ্রহণের উদ্যোগ নিন। দুই বছর মেয়াদি সদস্য পদের নিয়ম বাতিল করুন। যতদিন চাঁদা অব্যাহত রাখবে, ততদিন সদস্য থাকবেন। প্রতি বছর সদস্যরা বাধ্যতামূলকভাবে তাদের পেশাগত (কর্মস্থল) তথ্য নিজেরাই ক্লাবের কাছে হালনাগাত করবেন। ভুয়া সদস্যরা এই নিয়ম দেখলে এমনিতেই ক্লাব ছেড়ে পালাবে। মাসিক চাঁদা ৩ থেকে ৫ পাউন্ড। যার পোষাবে না, সে এমনিতেই পালাবে। বারমিংহ্যাম, ম্যানচেস্টার গিয়ে গায়ে পড়ে ক্লাবের সদস্য ফরম পূরণ করিয়ে নিজের পকেট থেকে সদস্য- ফী দিয়ে ক্লাবের সদস্য বানানোর তো কোনও মানে নেই!
বি:দ্র : এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের ব্যক্তিগত এর সাথে সম্পাদকের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই ।
Posted ০৭:০৪ | শনিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin