শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে দেখতে চায় না তুরস্ক

  |   সোমবার, ১৬ মে ২০২২ | প্রিন্ট

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে দেখতে চায় না তুরস্ক

ফিনল্যান্ড ও সুইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে ইউক্রেনে রুশ হামলার ঘটনায় তারা পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ঢোকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তুরস্ক এতে বাগড়া দিতে পারে বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ন্যাটোর সচিবালয় থেকেও পরিষ্কার বলা হয়েছে, উত্তর ইউরোপের এ দুই দেশ, যাদের একটির (ফিনল্যান্ড) সাথে রাশিয়ার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। সদস্যপদের জন্য আবেদন করলে যত দ্রুত সম্ভব তা অনুমোদনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ন্যাটো জোটে নতুন কোনো দেশকে সদস্য হিসেবে নিতে হলে জোটের ৩০টি সদস্য দেশকে একমত হতে হবে। প্রতিটি সদস্য দেশের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। কিন্তু যে দেশটির সেনাবাহিনী জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম, সেই তুরস্ক স্পষ্টভাবে বলে চলছে ন্যাটোতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে নেয়ার প্রশ্নে তাদের চরম অস্বস্তি রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান শুক্রবার ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের বলেন, তুরস্ক চায় না যে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটো জোটে ঢুকুক। তিনি বলেন, সুইডেন বা ফিনল্যান্ডকে নিয়ে যা হচ্ছে তা আমরা দেখছি। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের মনোভাব ইতিবাচক নয়।এরদোয়ান ওই সময় গ্রিসের বিষয়ে বলেন, ১৯৫২ সালে ন্যাটোতে গ্রিসের সদস্যপদ সমর্থন করে তুরস্ক ভুল করেছিল। যে ভুল তিনি আর করতে চান না। তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে বৈরিতা বহু দিনের এবং ন্যাটো সদস্য হয়েও তারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেছে।

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ব্যাপারে তুরস্কের আপত্তি থাকার বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এ দুটি দেশের ব্যাপারে তুরস্কের বহু দিনের অভিযোগ যে, তারা তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী পিকেকে-কে সমর্থন যোগায়, গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। এরদোয়ান শনিবার বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ওই দেশগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সরাইখানা। তাদের সমর্থন করা সম্ভব নয়।

সন্ত্রাসী সংগঠন বলতে তিনি যে পিকেকে এবং সিরিয়ায় তাদের শাখা বলে পরিচিত কুর্দি মিলিশিয়া গোষ্ঠী ওয়াইপিজিকে বুঝিয়েছেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সুইডেনের ব্যাপারে তুরস্ক বিশেষভাবে বলছে। কারণ, সুইডেন প্রকাশ্যে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে কুর্দি মিলিশিয়া ওয়াইপিজিকে সমর্থন দিয়েছে। এ কারণে, গত বছর এপ্রিলে আঙ্কারায় সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। সুইডেনের পার্লামেন্টে এখন ছয়জন এমপি রয়েছেন যারা জাতিগত কুর্দি, এবং তারা কুর্দি ইস্যুতে সোচ্চার।

তবে আমেরিকা ও ন্যাটো জোটের অনেক সদস্য এখনো মনে করছে না যে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সদস্যপদের প্রশ্নে তুরস্ক শেষ পর্যন্ত ভেটো দেবে। তুরস্ক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশ্লেষক শুক্রবার তার এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটো সদস্যপদের বিষয়টি নিয়ে আঙ্কারা সমরাস্ত্র কেনা নিয়ে আমেরিকার সাথে দরকষাকষি করতে চাইছে।

ওই বিশ্লেষক টিম অ্যাশ লিখেছেন, আমি মনে করি, এরদোয়ান আমেরিকার কাছ থেকে আধুনিক ফাইটার জেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা নিয়ে দরকষাকষির একটি সুযোগ হিসাবে দেখছেন। কিন্তু এরদোয়ানের এই অবস্থান পশ্চিমা দেশের রাজধানীগুলোতে ভালো চোখে দেখা হবে না। এটিকে দেখা হবে পশ্চিমা জোট থেকে তুরস্কের দূরে সরে যাওয়ার আরেকটি অধ্যায় হিসেবে, বলেন তিনি।

তুরস্ক ইউক্রেনের কাছে সামরিক ড্রোন বিক্রি করেছে, কিন্তু রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তারা মানেনি। এখনো রুশ বিনিয়োগ এবং পর্যটক তুরস্কে আসছে, যা নিয়ে অনেক পশ্চিমা দেশ নাখোশ। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি শুক্রবার বলেন, বাইডেন প্রশাসন সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের প্রশ্নে তুরস্কের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করছে।

ন্যাটো মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ রোববার বলেছেন, তুরস্ক পরিষ্কার করছে, সদস্যপদে বাধা তৈরি তাদের উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং আমি নিশ্চিত, তুরস্ক যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তা নিয়ে বোঝাপড়া সম্ভব। সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শিগগির একটি সরকারি প্রতিনিধি দল আঙ্কারায় যাবে। তবে তিনি বলেন, ন্যাটোর বড় এবং প্রভাবশালী সব দেশ সুইডেনের সদস্যপদের পক্ষে এবং সেসব দেশের সাথে সুসম্পর্ক রাখা তুরস্কের প্রয়োজন।

যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা নিয়ে আমেরিকার সাথে তুরস্কের দীর্ঘদিন ধরে একটি টানাপড়েন চলছে। তবে অস্ত্র ছাড়াও এই সুযোগে পিকেকে’র প্রতি সমর্থন কমানো নিয়ে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায়ের সুযোগ হয়তো তুরস্ক ছাড়তে চাইবে না।

বার্লিনে শনিবার ন্যাটো মন্ত্রীদের বৈঠকের আগে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসওলু সাংবাদিকদের বলেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড প্রকাশ্যে পিকেকে ও ওয়াইপিজির সাথে সম্পর্ক রাখছে এবং সমর্থন দিচ্ছে যারা তুরস্কে হামলা করছে এবং তুর্কি সৈন্য ও তুর্কি জনসাধারণকে হত্যা করছে।

তিনি বলেন, তুরস্কের জনগণের বিশাল অংশ এ দেশগুলোর ন্যাটো সদস্যপদের বিরোধিতা করছে। সুতরাং ন্যাটো জোটের অন্যান্য মিত্র এবং এই দু’দেশের সাথে আমাদের কথা হতে হবে।

সূত্র : বিবিসি

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২২:২৪ | সোমবার, ১৬ মে ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com