শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

সিলেট যেনো এক ডুবন্ত নগরী

  |   রবিবার, ১৯ জুন ২০২২ | প্রিন্ট

সিলেট যেনো এক ডুবন্ত নগরী

স্বাধীনদেশ অনলাইন : এক পাশ দিয়ে হু হু করে পানি ঢুকে অপর পাশকেও ডুবিয়ে দিচ্ছে। আর ডুবে যাওয়া অংশের লোকজন সব ফেলে অন্য পাশে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। ভয়াবহ বন্যায় এটাই এখন সিলেট মহানগরীর চিরচেনা রূপ। জনবহুল ও কর্মব্যস্ত এই নগরী যেনো এখন এক ডুবন্ত জাহাজ।

শনিবার ভোর থেকে প্রবল বর্ষণ আর প্রমত্তা সুরমার ঢলের তোড়ে নগরীর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আগেই প্লাবিত হয়ে থাকা এলাকায় হয়েছে গলাসমান পানি কিংবা আরও বেশি।

নগরীর মধ্যখানে উঁচু এলাকা হিসেবে পরিচিত জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়, মির্জাজাঙ্গাল, হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মহল্লা, সুবিদবাজার, হাউজিং এস্টেট, জালালাবাদ, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় শনিবার বন্যার পানি ঢুকেছে। সড়কে হাঁটুপানি, বাসায় কোমরপানি এখন অনেকেরই। এসব এলাকায় অতীতে কখনও বন্যার পানি ঢুকতে দেখেননি বলে জানিয়েছেন বয়োবৃদ্ধরা। আর সুরমা নদীর উত্তরপাড়ের অভিজাত আবাসিক এলাকা শাহজালাল উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, সোবহানীঘাট, মিরাবাজার, যতরপুর, ছড়ারপাড়, চালিবন্দর, কাষ্টঘর, কালিঘাট, শেখঘাট, কাজিরবাজার, তালতলা, জামতলা, বাগবাড়ি, কানিশাইল, সুরমা নদীর দক্ষিণপাড়ের ভার্থখলা, লাউয়াই, আলমপুর প্রভৃতি এলাকা আগে থেকেই প্লাবিত।

শনিবার নতুন করে পানি ঢুকেছে দক্ষিণ সুরমায় অবস্থিত রেলওয়ে স্টেশনে। ভোর থেকে একটানা প্রবল বর্ষণ হওয়ায় এসব এলাকায় দ্রুতই পানি বেড়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় সিলেটে ২৪৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগের ১২ ঘণ্টায় হয়েছিল ১০৮ মিলিমিটার। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, প্রবল বর্ষণ আর ঢলের কারণে সুরমা, কুশিয়ারাসহ সিলেটের প্রায় সব নদ-নদীর পানি এখন বিপৎসীমার উপরে। বন্যার কারণে গত শুক্রবার থেকে বন্ধ সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সকল কার্যক্রম।

শনিবার বন্ধ হয়ে গেছে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন। পানি উঠেছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্যার জলে ভাসছে। এজন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ও। বন্যার দ্রুত অবনতির কারণে শনিবার সিলেট নগরী ছিল অনেকটা ভুতুড়ে জনপদ। নগরীর বেশিরভাগ মার্কেট, দোকানপাট খুলেনি। যানবাহন ছিল খুবই অল্প। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল না বিদ্যুৎ। এদিকে সন্ধ্যা থেকে সিলেট নগরীতে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও ঠিকমতো কাজ করছে না।

বন্যার এই ভয়ানক রূপ সিলেট নগরীর প্লাবিত এলাকার অনন্ত লক্ষাধিক মানুষকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। তারা অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বাসা-বাড়িতে মূল্যবান জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়েছে। চুলা পানির নিচে চলে যাওয়ায় রান্না করতে পারছেন না। শুকনো খাবার খেয়ে কোনমতে দিনপার করছেন। আর যারা কোনমতেই বাসায় ঠিকতে পারছেন না কিংবা কোন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়ার সুযোগ নেই তারা গিয়ে উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র। তবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েও তারা স্বস্তিতে নেই। সেখানে রান্না করার কোন ব্যবস্থা নেই কিংবা কেউ সেখানে খাবারও দিচ্ছে না।

নগরীর মিরাবাজারের কিশোরীমোহন প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। শনিবার দুপুরে এই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ২৫-৩০টি পরিবার এসে আশ্রয় নিয়েছে। এই আশ্রয়কেন্দ্রের পাশেই যতরপুরে একটি টিনশেডের বাসায় ভাড়ায় থাকেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী জাকির মিয়া। তিনি জানান, ৩-৪ দিন ধরে তার বাসায় পানি। শুক্রবার তিনি বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও ৩ সন্তানকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। সঙ্গে করে নিয়ে আসা চিড়ামুড়ি খেয়ে রাত পার করেছেন। শনিবার দুপুর পর্যন্ত কিছু খাননি। কিনে খাওয়ার মতো টাকাও নেই। কেউ কোন খাদ্য সহায়তাও দিচ্ছে না। জাকির বলেন, ‘এখানে তো আশ্রয় পেলাম, কিন্তু খাবার নেই। নিজে না হয় সহ্য করলাম, কিন্তু বাচ্চাদের আর কতক্ষণ না খাইয়ে রাখতে পারবো’। খাবার সংকটের কথা জানান, ওই আশ্রয়কেন্দ্রের অন্যরাও।

অভিজাত আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত শাহজালাল উপশহরের প্রায় সবগুলো বাসার নিচতলায় এখন হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। বাসার পানি তোলার মোটর চালানো সম্ভব হচ্ছে না। শনিবার দিনভর ছিল না বিদ্যুৎ। এ অবস্থায় উপশহরের এসব বাসা-বাড়ির অবস্থাসম্পন্ন পরিবারগুলোও এখন দুর্ভোগ-বিড়ম্বনায়। অনেকে গিয়ে আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। কেউ কেউ নিজের গ্রামে বাড়ি কিংবা আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছেন। শাহজালাল উপশহর মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই ভ্যানগাড়িতে পরিবারের নারী-শিশুদের তুলে নিয়ে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন। আবদুল জলিল তেমনি একজন। তার বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে। সিলেটে তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। আবদুল জলিল বলেন, ‘বাসায় আর ঠিকে থাকার মতো অবস্থা নেই। তাই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামে বাড়ি ফেঞ্চুগঞ্জে চলে যাচ্ছি’।

সিলেট নগরীর বন্যার্তদের দুর্ভোগ ও খাদ্য সংকট প্রসঙ্গে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ভয়াবহ এই বন্যায় মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই’। মেয়র বলেন, ‘বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, তবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ এ মুহুর্তে সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে বরাদ্দ পেলে তা দ্রুতই বিতরণ করা হবে’। তিনি বন্যার্তদের খাদ্য সহায়তা প্রদানে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৭:০২ | রবিবার, ১৯ জুন ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com