বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, কোনো স্বৈরাচারী সরকার আপোসে ক্ষমতা ছেড়ে যায় না। তাদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটানোর বিকল্প নেই। অতীতে যেমন ছাত্র জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদকে হটিয়েছে। তেমনই এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র যে এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নেবে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় করাই মূলত আমাদের প্রথম দফা। যেভাবে দেশ চলছে সেভাবে চলতে পারে না। জনগণকে চাপাবাজি করে দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে চাই। এজন্য ২৭ দফা প্রণয়ন করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান যে লক্ষ্যে বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন সেগুলো বর্তমান সরকার ধ্বংস করেছে।

শনিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাত জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, বহুদলীয় গণতন্ত্র ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমান নিজে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে প্রথমে বিদ্রোহ করেন। তার নেতৃত্বে দেশবাসী মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। কিন্তু ব্যর্থতা ঢাকতে বর্তমান হাইব্রিড সরকার জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের চর হিসেবে পরিচিত করাতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিদেশি গণমাধ্যমে এবং বিভিন্ন লেখকের বইয়ে জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটাকে বিকৃত করছে।

‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ভুল ইতিহাস শেখাচ্ছে। সত্য কিন্তু কখনো চাপা থাকে না। ইতিহাস একদিন প্রতিষ্ঠিত হবেই। আওয়ামী লীগের এই ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার ও প্রতিবাদ করতে হবে।-যোগ করেন মোশাররফ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জিয়াউর রহমান দুটি ক্রান্তিকালে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। একটি ২৫ মার্চের পর আরেকটি ৭ নভেম্বর। আজকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলে দাবি করে। অন্যদিকে বিএনপি হলো মুক্তিযোদ্ধাদের দল। আওয়ামী লীগে কোনো খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা নেই। আমাদের দলে এখনো শাহজাহান ওমরের মতো খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা জীবিত আছেন। এগুলো তো জীবন্ত ইতিহাস।

খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য জিয়াউর রহমান নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেন। আজকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ শুরু করেন। গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি খাদ্য উৎপাদন করে বিদেশে চাল রফতানি করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর তিনি শাসন করেছেন। এমন কোনো খাত নেই যেখানে জিয়াউর রহমানের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, জিয়াউর রহমান বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীকে নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রণয়ন করেন। তার ঘোষিত ১৯ দফা এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ‘ভিশন ২০৩০‘ এর আলোকে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা ঘোষণা দিয়েছি।

তিনি বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই। বিএনপির ৬শর বেশি লোক গুম। এক হাজারের বেশি মানুষ খুন। খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। এটা জনবিচ্ছিন্ন সরকার। জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নেই। ১১ লাখ কোটি টাকা লুটে বিদেশে পাচার করেছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির দাম বেড়েছে। তারা দেশে বিচারব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণে। দলীয়করণের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। এমতাবস্থায় জনগণ আওয়াজ তুলেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো সংকটের সমাধান হবে না। যারা অর্থনীতি ধ্বংস করেছে তারা এর পুনর্গঠন করতে পারবে না। তাদেরকে বিদায় না দিলে দেশকে মেরামত করা যাবে না।

ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালামের সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং ডা. মো. ফখরুজ্জামান ফখরুল ও ডা. মেহেদী হাসানের পরিচালনায় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ড্যাবের সহসভাপতি ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল প্রমুখ বক্তব্য দেন।