রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ সম্মেলন : আমার দেশ খুলে দেয়ার দাবি সাংবাদিক নেতাদের

  |   শনিবার, ০৮ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট

-পত্রিকার সঙ্গে জড়িত পাঁচ শতাধিক পরিবারের মানবেতন জীবপ-যাপন
-কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি

basir jamal-amardesh press
নিজস্ব প্রতিনিধ, ঢাকা :   পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক-কর্মচারির পরিবার-পরিজনের কথা বিবেচনা করে সরকারকে অবিল¤ে¦ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন আমার দেশ পরিবার, সাংবাদিক ও আইনজীবী নেতারা।
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স রুমে আমার দেশ পরিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা সরকারের কাছে এ দাবি জানান। কোনো রকম বিচার ছাড়াই দীর্ঘ ১১ মাস ধরে কারারুদ্ধ রাখা দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অবিল¤ে¦ মুক্তি ও পত্রিকা খুলে দেয়া না হলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুশিয়ারি দিয়ে বক্তারা বলেন, সরকার আমার দেশ-এর ছাপাখানা অন্যায়ভাবে বন্ধ ও সম্পাদককে কারারুদ্ধ রাখার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়ে চরম মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিভিন্ন বেঞ্চে ঘুরেও আমার দেশ এর মামলার শুনানী করা হচ্ছে না। এতে আমার দেশ পরিবার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে আমার দেশ পত্রিকা দেশের জনগণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ক্ষমতাসিনদের নানা অনিয়ম তুলে ধরেছে বলেই সরকার গায়ের জোরে পত্রিকাটি বন্ধ রেখেছে। এক্ষেত্রে আদালতকে ব্যবহার করে সরকার মাহমুদুর রহমান ও পত্রিকাটির ব্যাপারে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আমার দেশ এর নির্বাহী সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ। এতে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিই্উজে) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি ও আমার দেশ এর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, বিএফইউজের সহকারি মহাসচিব আমার দেশ-এর সিটি এডিটর এম আবদুল্লাহ, আমার দেশ এর আইনজীবী সালেহ উদ্দিন, ডিই্উজের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ন সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, আমার দেশ এর ইউনিট চীফ বাছির জামাল প্রমুখ।
বক্তারা আমার দেশ প্রসঙ্গে সরকার ও আদালতের দ্বৈত আচরণের সমালোচনা করে বলেন, বিচারপতির স্কাইপি সংলাপ প্রথম ফাঁস হয় লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইকোনমিস্ট পত্রিকায়। সেই সংলাপ বিনা মন্তব্যে প্রকাশ করায় আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইকোনমিস্ট-এর বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পরবর্তীতে কেলেঙ্কারীর দায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারপতির পদত্যাগ করা করে। এরপর ট্রাইব্যুনাল নিজেই ইকোনমিস্ট এর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিলে আমার দেশ-এর মামলা বহাল রাখা হয়েছে। ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ হলে, আমার দেশ কী দোষ করেছে? আমার দেশ-এর মামলা খারিজ হবে না কেন? এগুলো কি সরকার ও আদালতের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বৈতনীতি নয়?
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল আমিন গাজী বলেন, সরকার ফিল্মি স্টাইলে পত্রিকার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকা সম্পাদককে গ্রেফতারের পর ১১ মাস অতিবাহিত হলেও তাঁর ক্ষেত্রে কোনো সুবিচার করা হচ্ছে না। গ্রেফতারের পর ২৩ দিনের রিমান্ড ও বিনাবিচারে কারারুদ্ধ রেখে মানবাধিকার চরম লঙ্ঘঘন করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের পীঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, সাধারণ মানুষের সর্বশেষ ভরসা আদালত সুবিচার না করলে সামনে কঠোর কর্মস–চি ঘোষণা করা ছাড়া কোনো বিকলল্প পথ নেই। সরকার দ্রুত আমার দেশ পত্রিকা খুলে দেয়া ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি না দিলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলন কেমন হয় তা এবার সরকারকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, সরকার ও বিচার বিভাগে কর্তাব্যক্তিরা আইন মেনে চলার শপথ নিলেও আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে অভিভাবক সূলভ আচরণ করতে হবে। তারা মজলুমের প্রতি সুবিচার করবেন এটাই সবাই চায়। কিন্তু আদালতের বিচারপতিদের ওপর গণরোষ সৃষ্টি হোক এটা কেউ চায় না।
এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, সরকার সর্বোচ্চ আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিভিন্ন বিচারপতিদের দ্বারে দ্বারে গেলেও আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে বিচারপতিরা সুবিচার করছেন না। আমাদের কোথাও যাওয়ার আর রাস্তা নেই। দীর্ঘ ১১ মাস ধরে সম্পাদক কারারুদ্ধ ও পত্রিকা বন্ধ থাকায় পত্রিকাটির পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক কর্মচারিরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে সরকারের তথ্যমন্ত্রী একের পর এক মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।
লিখিত বক্তব্যে আমার দেশ এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দৈনিক আমার দেশ বন্ধ এবং পত্রিকাটির সত্যনিষ্ঠ সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করে রাখার প্রায় ১১ মাস হতে যাচ্ছে। পত্রিকার সাংবাদিক-কর্মচারীরা পত্রিকা খুলে দেয়া এবং সম্পাদককে মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে বার বার দাবি জানালেও সরকার এতে কোনো কর্ণপাত করেনি। একইভাবে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলেও এখন পর্যন্ত আমরা দৈনিক আমার দেশ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ব্যাপারে কোনো ন্যায়বিচার পাইনি। ফলে আমার দেশ-এর পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক-কর্মচারী তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে এক মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
তিনি বলেন, গত বছরের ১১ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে দৈনিক আমার দেশ অফিস থেকে কমান্ডো স্টাইলে অভিযান চালিয়ে পুলিশ পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে, বর্বর কায়দায় গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এর আগে পত্রিকা অফিসে তিনি চার মাসেরও বেশি সময় অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং গাড়ি পোড়ানোর উস্কানিসহ তিনটি অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সম্পাদককে গ্রেফতারের পর ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় দৈনিক আমার দেশ-এর ছাপাখানাও সরকার সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূতভাবে বন্ধ করে দেয়। ডিসি অফিসের একটি ‘সার্চ ওয়ারেন্টের’ কথা বলে দুই ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে অধিকতর তদন্তের অজুহাতে ডিবি অফিসের একটি দল তেজগাঁওয়ে আমার দেশ প্রেসে তালা দিয়ে ‘প্রেস জব্দ করা হয়েছে’ বলে চলে যায়।
এ অবস্থায় সম্পূর্ণ আইন মেনে ঢাকার জেলা প্রশাসককে অবহিত করে অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট অনুযায়ীই আমার দেশ কর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থায় অস্থায়ীভাবে আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস থেকে পত্রিকাটি ছাপার ব্যবস্থা করে। কিন্তু পত্রিকা দু’দিন ছাপার পর হঠাৎ তৃতীয় দিনে ছাপাকালীন অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেসে অভিযান চালিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় আমার দেশ ছাপাও বন্ধ করে দেয়। শুধু তা-ই নয়, তারা পত্রিকার ছাপা সব কপি, সেলোফিন বাজেয়াপ্ত এবং আমার দেশ ছাপাখানায় কর্মরত ১৯ জন গরিব বাইন্ডারকে (প্রেস শ্রমিক) গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যায়। মামলা দেয়া হয় আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ৭৫ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ মা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম ও আল ফালাহ প্রেসের কিপার দৈনিক সংগ্রামের প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে। এরপর থেকে আমার দেশ ছাপা বন্ধ রয়েছে।
সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বেআইনিভাবে তার প্রবাসী বন্ধু ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে স্কাইপের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে যেসব কথা বলেন তা বিশে¡র প্রভাবশালী পত্রিকা দি ইকোনমিস্ট প্রকাশ করে। বিচারপতি নাসিম ইকোনমিস্ট পত্রিকার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। ইকোনমিস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনই সাংবাদিকতার সব নিয়মনীতি অনুসরণ করে আমার দেশ প্রকাশ করে। বিচারপতি নাসিমের স্কাইপ সংলাপ প্রকাশের বিষয়ে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের দেয়া আদেশ ও রুল সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ স্থগিত করে দেয়। আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ বহাল থাকা ও ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে দেয়া রুল বিচারাধীন থাকায় সরকার আমার দেশ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে পারে না। কিন্তু সরকার এর কোনো তোয়াক্কা না করে মামলা দিয়ে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে। বিচারপতি নাসিম স্কাইপ সংলাপের দায় স্বীকার করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিদায় নেন। যেহেতু তিনি তার বেআইনি কথোপকথন স্বীকার করে নিয়েছেন, তাই সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটিও চলতে পারে না। কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনিভাবে মামলাটি বহাল রাখা হয়েছে এবং তাকে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রায় ১১ মাস ধরে জেলে বন্দিই শুধু নন, তিনি ভয়াবহ নির্যাতনেরও শিকার হয়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় তাকে ২৩ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিমান্ডে থাকাকালীন তাকে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়েছে। ওই সময় আইনজীবীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন যা পরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো হয়। সম্পাদক মাহমুদুর রহমান নিজেও তার ওপর নির্যাতনের কথা কোর্টে হাজিরার সময় আদালতের কাছে বলেছেন। তার বৃদ্ধ মা ও প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং ১৯ জন গরিব বাইন্ডারকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে তিনি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় অনশনও করেন। একটানা ১১ দিনের অনশনে তার শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দেয়। বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে জেলে থাকায় তার স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতি ঘটেছে। ওজন ১১ কেজি কমে গেছে। এর আগেও অন্যায়ভাবে তাকে ১০ মাসেরও বেশি সময় কারারুদ্ধ রাখা হয়। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে ৬৮টি মামলা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য আরও বলা হয়, শাহবাগ চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যাপারে সমবেত ব্লগারদের কুকর্ম ফাঁস করে দেয়ায় তারা মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করার দাবি জানান। এরপরেই সরকার তড়িঘড়ি করে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়।
সরকারের এই বেআইনি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে আমার দেশ আইনের আশ্রয় নেয়। কিন্তু আদালত আমার দেশ-এর মামলার শুনানি করছেন না। বার বার শুধু শুনানির তারিখ পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। এইভাবে ইচ্ছাকৃত বিল¤ে¦র মধ্য দিয়ে আমার দেশ পরিবারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে ন্যায়বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার থেকে।
আদালতে আমার দেশ নিয়ে শুনানী প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক আরও বলেন, গত বছরের মে মাসে ‘বিকল্প ব্যবস্থায় আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি দিতে ও আল ফালাহ প্রেসে আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা দান কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না’Ñমর্মে আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এই রিট আবেদনটি শুনানির জন্য বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের নেতৃত্বে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে উপস্থাপন করেন। দীর্ঘ তিন মাস এই বেঞ্চের কার্যতালিকায় রিট আবেদনটি অব্যাহতভাবে উল্লিখিত হলেও আদালতের অনাগ্রহের কারণে তা শুনানি হয়নি। সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি পাঁচবার এ রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি করার জন্য আদালতে প্রার্থনা জানান। এক পর্যায়ে এ বেঞ্চ আমার দেশ-এর রিট আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন। এরপর আইনজীবীরা আদালতের সিনিয়র বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট রিট। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক হাজার লোকের পরিবারের ভাগ্য জড়িত। আপনি আদেশ যা-ই দেনÑআমরা মাথা পেতে নেব। আমাদের রিট আবেদনটি শুনানির সুযোগ দিন।’ তার আবেদন-নিবেদনের পরও আদালত এ রিট আবেদন শুনানিতে কোনো আগ্রহ দেখাননি।
তিনি বলেন, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের বেঞ্চে এ রিট আবেদন নিষ্পত্তি করতে না পেরে অবশেষে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেতৃত্বে গঠিত হাইকোর্টের অপর একটি ডিভিশন বেঞ্চে উপস্থাপন করেন। আদালত স্বাভাবিক নিয়মেই তা গ্রহণ করে কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন। পরদিন আমার দেশ-এর পক্ষে শুনানি করেন বার সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী। আমার দেশ-এর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত মৌখিকভাবে আমার দেশ প্রকাশের পক্ষে নিজেই যুক্তি দেখান। তবে সরকারপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সময়ের আবেদন করলে আদালত বলেন, এটি একটি জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট রিট। আমরা এ বিষয়ে কালকেই (পরদিন) আদেশ দেব। আগামীকাল কার্যতালিকার ১ ন¤¦র আইটেম হিসেবে এটি উল্লেখ করার জন্য বেঞ্চ অফিসারকে নির্দেশ দেন সিনিয়র বিচারক। পরদিন কার্যতালিকায় দেখা গেল আমার দেশ-এর রিট আবেদনটি সবার নিচে। আগের দিনের আদালতের মৌখিক আদেশ ও কার্যতালিকার বিষয়টি আদালতে পেশ করে বার সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী পরদিন আদালতে বলেন, আমরা কি কাল ভুল শুনেছি? নাকি আদালত ভুল করেছেন? তার এ প্রশ্নের জবাবে আদালত কোনো মন্তব্য করেননি। আদালত শুধু বললেনÑ‘কিছুদিন পরে আসেন।’
বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আমার দেশ-এর রিট আবেদনটি কিছুদিন থাকার পর আদালতের বাৎসরিক ছুটি হয়। ছুটির পর আদালতের বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি এ রিট আবেদনটি বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে উপস্থাপন করেন। বর্তমানে তার বেঞ্চেই এই রিট আবেদনটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চে ইসলাম ধর্মের অবমাননার দায়ে ব্লগারদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ধর্ম অবমাননাকারী ব্লগার রাজীবকে শহীদ এবং জাতীয় বীর বানিয়ে ব্যাপক মাতামাতি করা হয়েছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই বিধান রাখা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সংবিধানকে ইঙ্গিতে কটাক্ষ করা হলেও দোষীকে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। সংবিধান অনুসারে ইসলাম হচ্ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম। তাই, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের অবমাননা করা হলে সরাসরি সংবিধানকে অবমাননা করা হয়। অথচ ইসলাম ধর্মের অবমাননার মধ্য দিয়ে সংবিধানকে অবমাননা করলেও সরকার শাহবাগি-ব্লগারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তাদের প্রটেকশন দেয়ার জন্য প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করেছে। পাশাপাশি এই কুকর্মের তথ্য ফাঁস করে দিয়ে সংবিধানের মর্যাদা সমুন্নত রাখার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়ায় সরকার উল্টো মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার এবং আমার দেশ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার দেশ পরিবার আজ সরকারি রোষানলের শিকার হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ আবদাল বলেন, আন্তর্জাতিক স্কাইপি সংলাপ প্রথম ফাঁস হয় লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইকোনমিস্ট পত্রিকায়। সেই সংলাপ বিনা মন্তব্যে প্রকাশ করায় আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইকোনমিস্ট-এর বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাইব্যুনালই আবার সেই মামলা তুলে নিয়েছে। অথচ আমার দেশ-এর মামলা বহাল রাখা হয়েছে। ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ হলে, আমার দেশ কী দোষ করেছে? আমার দেশ-এর মামলা খারিজ হবে না কেন? এগুলো কি সরকার ও আদালতের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বৈতনীতি নয়?
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আমার দেশ কোনরকম আনুকূল্য অথবা অনুকম্পা প্রার্থনা না করে আইন অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে নিজস্ব পথে চলুক, সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে যেসব প্রটেকশন দিয়েছে সেগুলোর মর্যাদা রক্ষিত হোকÑএটুকুই চায়। অবিল¤ে¦ আমার দেশ-এর ছাপাখানা খুলে দিয়ে পত্রিকাটি প্রকাশের সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমরা জোর দাবি জানিয়ে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক বলেন, একই সঙ্গে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা তুলে নিয়ে তাকে সম্মানজনকভাবে মুক্তি দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৭:০০ | শনিবার, ০৮ মার্চ ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com