সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ

  |   মঙ্গলবার, ০৯ জুন ২০২০ | প্রিন্ট

শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ

আয়কর রিটার্নে দেখানো নেই- এমন অপ্রদর্শিত বা কালো টাকায় কেনা জমি-ফ্ল্যাট বৈধ করার সুযোগ থাকছে আগামী বাজেটে। এজন্য প্রতি বর্গমিটার হিসাবে নির্দিষ্ট অঙ্কের কর দিতে হবে। একই সঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে। এছাড়া পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা রোধে বাড়তি করারোপের বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। মূলত আন্ডার ইনভয়েসিং-ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাজেটে তৈরি পোশাক খাতের রফতানিতে উৎসে কর বাড়ানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বাজেটে আয়কর খাতে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) অর্থনীতির মূলধারায় আনতে নানা সুযোগ দেয়া হচ্ছে। শর্ত সাপেক্ষে ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিভেঞ্চারে বিনিয়োগ করতে পারবেন যে কেউ। এছাড়া অপ্রদর্শিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ টাকা, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র রিটার্ন প্রদর্শনের মাধ্যমে বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। জমি-ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে বর্গমিটারপ্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে বৈধ করা যাবে। নগদ টাকা, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মোট অঙ্কের ১০ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। এজন্য অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে ১৯এএএএ ও ১৯এএএএএ ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

১৯এএএএ ধারা অনুযায়ী, আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তালিকাভুক্ত স্টক, শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং সরকারি বন্ড ও ডিভেঞ্চারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে, ৩ বছরের জন্য এই বিনিয়োগ করতে হবে। ৩ বছর আগে বিনিয়োগের টাকা উত্তোলন করলে করদাতাকে সাধারণ হারে কর পরিশোধ করতে হবে।

অন্যদিকে ১৯এএএএএ ধারা অনুযায়ী, এলাকাভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত জমি-ফ্ল্যাট আয়কর রিটার্নে দেখানোর মাধ্যমে বৈধ করা যাবে। গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার জন্য প্রতি বর্গমিটার জমির জন্য ২০ হাজার টাকা কর দিতে হবে। তাহলে জমির আয়ের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ আর প্রশ্ন করবে না। ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকার জন্য ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। অন্য সিটি কর্পোরেশন এলাকার জমির ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটার ৫ হাজার টাকা, জেলা শহরের পৌরসভায় এলাকায় এক হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্য এলাকার জন্য ৫০০ টাকা।

অন্যদিকে গুলশান মডেল টাউন, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৪ হাজার টাকা কর দিয়ে বৈধ করা যাবে। ফ্ল্যাটের আয়তন এর বেশি হলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৬ হাজার টাকা কর দিতে হবে। ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৩ হাজার টাকা এবং এর চেয়ে বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা কর ধার্য করা হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অন্য সব এলাকা এবং অন্য সিটি কর্পোরেশনে ১২০ বর্গমিটার ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৭০০ টাকা, ১২০ থেকে ২০০ বর্গমিটারের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ৮৫০ টাকা এবং ২০০ বর্গমিটারের চেয়ে বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য ১৩০০ টাকা কর নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা শহরের পৌরসভা এলাকায় একই আয়তনবিশিষ্ট ফ্ল্যাটের জন্য যথাক্রমে ৩০০, ৪৫০ এবং ৬০০ টাকা কর নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের অন্য সব এলাকার ক্ষেত্রে একই আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য ২০০, ৩০০ ও ৫০০ টাকা কর ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া নগদ টাকা, ব্যাংক আমানতসহ সব ধরনের আমানত, সঞ্চয়ী হিসাব, সঞ্চয়পত্র বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। মোট অর্থের ১০ শতাংশ পরিশোধ করে আগে থেকে কেনা সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকের জমানোর অর্থ বৈধ করা যাবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত সম্পদ ও অর্থের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। করোনার ধাক্কা মোকাবেলায় এই অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় আনার বিকল্প নেই। তাই বাজেটে প্রথমবারের মতো অপ্রদর্শিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ (জমি-ফ্ল্যাট) প্রদর্শনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আগে ক্রয়কৃত জমি-ফ্ল্যাট বৈধ করার সুযোগ ছিল না। পাশাপাশি ঝিমিয়ে পড়া শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিশেষ সুবিধায় বিনিয়োগ সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, পুরনো জমি-ফ্ল্যাট বৈধ করার পাশাপাশি অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কেনায় ছাড় দেয়া হচ্ছে। এজন্য আয়কর অধ্যাদেশের ১৯বিবিবিবিবি ধারা সংশোধন করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে ৩ পদ্ধতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ (কালো টাকা সাদা) করা যায়। আয়কর অধ্যাদেশের ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে যে কোনো খাতেই কালো টাকা বিনিয়োগ করা যায়। শুধু আবাসন খাতের জন্য ১৯বিবিবিবিবি নামে আয়কর অধ্যাদেশে আলাদা একটি ধারা আছে। এ ধারা অনুযায়ী, এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত হারে কর পরিশোধের মাধ্যমে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা যায়। ১৯ডিডি ধারা অনুযায়ী, ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করা যায়। এসব ক্ষেত্রে এনবিআর অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না।

মিথ্যা ঘোষণা রোধে বিশেষ উদ্যোগ: আন্ডার ইনভয়েসিং-ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা (১৬এইচ) যুক্ত করা হচ্ছে। এ ধারা অনুযায়ী, আয়কর রিটার্ন পর্যালোচনায় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আন্ডার ইনভয়েসিং বা ওভার ইনভয়েসিং ধরা পড়লে গোপনকৃত বা পাচারকৃত অর্থের ৫০ ভাগ জরিমানা আদায় করা হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৫০ টাকা পণ্য আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে কাস্টমসে ১০০ টাকা ঘোষণা দিয়ে খালাস করলে পরে তা আয়কর বিভাগের নিরীক্ষায় ধরা পড়লে গোপনকৃত ৫০ টাকার ওপর ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ টাকা আয়কর আদায় করা হবে।

গার্মেন্টের উৎসে কর বাড়ছে: করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত তৈরি পোশাক খাতের উৎসে করও বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছর রফতানিমুখী পোশাক শিল্পকে মোট রফতানি আয়ের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হতো। আগামী বাজেটে সেটি বাড়িয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। তবে পোশাক খাতের কর্পোরেট কর আগের অবস্থানেই রাখা হচ্ছে।

জানা গেছে, আয়কর অধ্যাদেশে রফতানির বিপরীতে উৎসে কর ১ শতাংশ নির্ধারণ করা আছে। প্রতি বছর বাজেটের পর বিজিএমইএ, বিকেএমইএ’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমানো হয়। কিন্তু এবার বাজেটেই অর্থবিলের মাধ্যমে আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ’র দেনদরবারের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছর অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই সময়টুকুতে রফতানিকারকদের কাছ থেকে ১ শতাংশ হারেই উৎসে কর আদায় করা হয়। পরে এ অর্থ ফেরত পেতে উদ্যোক্তাদের নানারকম ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। তাই এবার বাজেটেই উৎসে কর কমানো হচ্ছে।পূর্বপশ্চিমবিডি

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:২৩ | মঙ্গলবার, ০৯ জুন ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com