বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে রাঙ্গুনিয়া থেকে মাসে কোটি টাকার বাঁশ পাচার!

এম. মতিন   |   শনিবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে রাঙ্গুনিয়া থেকে মাসে কোটি টাকার বাঁশ পাচার!
চট্টগ্রাম : বন কর্মকর্তাদের সহায়তায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে প্রতিমাসে পাচার হচ্ছে কোটি টাকার বাঁশ। সমানতালেই চলছে চাঁদাবাজি। বনবিভাগের অন্তত ৩০টি চেকপোস্টকে ম্যানেজ করেই দিনরাত চলছে পাচার কার্যক্রম। সিন্ডিকেট পুরোই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের। অবৈধ বাঁশ পাচার থেকে প্রতিমাসে অন্তত আরও ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বনের কর্তারা। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে  রাজস্ব। অন্যদিকে উজাড় হচ্ছে সরকারি বেসরকারিভাবে বনায়নকৃত বাঁশ বাগান।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ার অন্তত সহস্র স্পট থেকে প্রতিনিয়তই উজাড় হচ্ছে সরকারি বেসরকারিভাবে বনায়নকৃত বাঁশ বাগান। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে এসব বাঁশ পাচার করছে অন্তত ৩০টি সিন্ডিকেট। আর এসব সিন্ডিকেটের অধীনে কাজ করছে অন্তত শতাধিক চোরাই বাঁশ পাচারকারী উপ সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট আর উপ সিন্ডিকেটের হাত দিয়েই কাপ্তাই জেটি ঘাট হয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় লাখ লাখ বাঁশ পাচার হচ্ছে প্রতিদিন। শুধুমাত্র রাঙ্গুনিয়ায় রয়েছে ১৫টি পাচারকারী সিন্ডিকেট। এরা হচ্ছেন রাঙ্গুনিয়ার শামসুল, বাবুল, কুদ্দুস, নুরউদ্দিন, সামাদ, ফজল করিম, সানাউল্লাহ, হোসেন মেম্বার, আবদুর রহিম সওদাগর, চাঁনমিয়া, বশর, রেজাউল করিম, হেলাল, বাঁচামিয়া ও মো. বেলাল।
এদিকে রাঙ্গামাটির জেলার কাপ্তাই ইছামতি, রাঙ্গুনিয়া, পোমরা চেক ষ্টেশন, কাপ্তাই রাস্তার মাথাসহ বনবিভাগের অন্তত ৩০টি চেকপোস্টের দায়িত্বরতদের ম্যানেজ করেই নির্দিষ্ট স্থানে পাচার হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার বাঁশ। আর এসব অবৈধ বাঁশ পাচারে একমাত্র সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাপ্তাই আর রাঙ্গামাটি সড়ককে। বহন কাজে ব্যবহার হচ্ছে শতশত ট্রাক। এছাড়াও নদীপথে কাপ্তাই নতুন বাজার, কর্নফুলি নদী, ইছামতি নদীর রানীরহাট হয়ে বাঁশের চালি তৈরি করে পাচার করা হচ্ছে লাখ লাখ বাঁশ।
জানা যায়, কাপ্তাই বাঁধের উপর থেকে কর্ণফুলি কাগজ কলের ঠিকাদাররা কাগজ কলে বাঁশ সরবরাহ না করে খোলা বাজারে অবৈধভাবে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছে একাধিক ঠিকাদার। বাঁশ ব্যবসা সহজ ও লাভবান হওয়ায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এ ব্যবসার প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন অনেকেই। আর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে আওয়ামীলীগসহ এর অঙ্গসংগঠনের নাম।
কাপ্তাই জেটির ফরেস্ট ষ্টেশন, রাম পাহাড় বিট, চন্দ্রঘোনা ফরেস্ট স্টেশন, পোমরা চেক ষ্টেশনসহ বিভিন্ন ফরেস্ট চেক ষ্টেশনে প্রতি ট্রাক বাঁশ থেকে ৭শ থেকে ১ হাজার টাকা হারে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ট্রানজিট পাস (টিপি) নিয়ে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের রানীরহাট বাজার ও কাপ্তাই বাজার থেকে ৪০-৫০টি ট্রাকে করেই প্রতিদিন লাখ লাখ বাঁশ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন হচ্ছে। প্রতিটি বাঁশ থেকে সরকার ১ টাকা ৪০ পায়সা হারে প্রতি হাজার ১৪শ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। একটি ট্রাকে দেড় থেকে দু’হাজার বাঁশ পরিবহন  দেখানো হচ্ছে। অথচ ২ হাজার বাঁশের গাড়িতেও ঝুঁকি নিয়ে নেয়া হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বাঁশ। আর এসব গাড়ি থেকে বন কর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কমপক্ষে ১ হাজার টাকা হারে। আর সরকার রাজস্ব দেখানো হচ্ছে প্রতি গাড়িতে ১৪শ থেকে ২ হাজার টাকা হারে। এটি হচ্ছে সড়ক পথের চাঁদাবাজির চিত্র।
অন্যদিকে কর্ণফুলী আর ইছামতি নদী পথে পাচারের হিসেব এর তিনগুন বেশি। দিনরাত লাখ লাখ বাঁশ ভেসে যাচ্ছে পানির স্রোতে সাথে। আর পানিতে চাঁদাবাজির পরিমাণও সড়কপথের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। তাই বন কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিদিষ্ট স্পষ্ট বাদ দিয়ে তাদের নজর থাকে বেশি পানিতে ভেসে যাওয়া বাঁশের ওপর।
রাজানগরের বাঁশ ব্যবসায়ী মো. সানাউল্লাহ জানান, ট্রানজিট পাস (টিপি) নিয়ে বাঁশ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে টিপির চেয়ে বেশি বাঁশ নিলে বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে হয় ।
অবৈধ বাঁশ পাচার থেকে মাসোহারা নেয়ার কথা অস্বীকার করে রাঙ্গুনিয়ার ইছামতি রেঞ্জের বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি দুই সাপ্তাহ আগেই এই রেঞ্জে যোগদান করেছি। আগে কে কী করেছে তা আমার জানা নেই। তবে টিপির বাইরে বাঁশ বোঝাই ট্রাক থেকে অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয় না। সরকারি রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যে আমরা নদী ও সড়কপথে বাঁশ পাচার রোধে সজাগ রয়েছি।
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৯:১৩ | শনিবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com