বৃহস্পতিবার ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মার্কিন গোয়েন্দার গোপন তথ্য প্রকাশ: ক্ষমতা ধরে রাখতে ভারতের সঙ্গে আপস করেছিলেন এরশাদ!

  |   শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট

মার্কিন গোয়েন্দার গোপন তথ্য প্রকাশ: ক্ষমতা ধরে রাখতে ভারতের সঙ্গে আপস করেছিলেন এরশাদ!

ক্ষমতা ধরে রাখতে ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে আপস করেছিলেন তত্কালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর অবমুক্ত করা নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

‘বাংলাদেশ-ভারত পানিবণ্টন: ন্যায়সঙ্গত পানিপ্রবাহ’ শীর্ষক মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি ১৯৮৩ সালে তৈরি করা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছে, ভারত উপমহাদেশে পানিবণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আগামী দুই যুগেও এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক চলবে, যার মূল কারণ হবে এখানকার ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্যের জোগান এবং সেচ প্রকল্পের উন্নয়ন। পানিবণ্টনের সঙ্গে অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিষয়টিও জড়িত।

পানিবণ্টন ইস্যুটিতে বাংলাদেশে তীব্র বিতর্ক শুরু হচ্ছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, উজানের দেশ হিসেবে ভারত গঙ্গার পানির ব্যবহার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করছে। এছাড়া ফারাক্কা বাঁধের কারণে ভারত চাইলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ও মানবিক ইস্যু হিসেবে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। কেননা পানিবণ্টন সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধানে ভারতের সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় এ অঞ্চলে বড় ধরনের কারিগরি সমস্যা রয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পানিবণ্টন বিতর্কের সমাধানে মূল বাধা রাজনৈতিক মতপার্থক্য। ভারত ঢাকার সার্বভৌম অধিকারে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে বলে সন্দেহ রয়েছে বাংলাদেশের।

এছাড়া উপমহাদেশে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে ভারত দখলদারিত্ব চালাবে বলেও সন্দেহ রয়েছে দেশটিতে। ফলে গঙ্গার পানি প্রবাহ বাড়ানোর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবের বিপরীতে এ অঞ্চলের বৃহৎ শক্তি ভারত ক্রমাগতভাবেই তার বিতর্কিত আন্তঃনদী সংযোগ প্রস্তাব দিতে থাকবে।

নথিতে বলা হয়েছে, পানিবণ্টন নিয়ে স্বল্প সময়ের চুক্তিটি মূলত এরশাদকে সাময়িকভাবে রাজনৈতিক সমস্যা থেকে উদ্ধার করবে। যদিও এ জটিল সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান পেতে হলে সংক্ষিপ্ত সময়ের এ চুক্তিতে না গিয়ে শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এরশাদকে। কারণ সংক্ষিপ্ত সময়ের এ চুক্তির মাধ্যমে ভারত মূলত যা চেয়েছিল, তা পেয়ে যাবে। তা হচ্ছে আন্তঃনদী সংযোগ নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি। আর এরশাদও যা চেয়েছিলেন, তা পাবেন তিনি। এরশাদ চেয়েছিলেন এ বিতর্কিত প্রকল্পটি নিয়ে সাধারণ মানুষের যে বিরোধিতা ছিল, তা নমনীয় হোক।

সিআইএর এ নথিতে আরো বলা হয়, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদ নয়াদিল্লির আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পে আগ্রহ দেখাবেন। এটি না হলে তার নেতৃত্ব ঝুঁকিতে পড়বে। এটি স্পষ্ট যে, এরশাদ আন্তঃনদী সংযোগ ইস্যুটি নিয়ে তার সাংবিধানিক বিরোধী দল এবং সামরিক বাহিনীকে নমনীয় করতে এখনো কোনো কৌশল নির্ধারণ করেননি।

এ নথিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের পানিবণ্টন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ আগ্রহ রয়েছে, যার মূল কারণ এ অঞ্চলের মানবিক এবং অঞ্চলিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। মাত্র কয়েকটি খরা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতারও পরিবর্তন সম্ভব। পানিবণ্টনের প্রস্তাবে দিল্লির প্রত্যাখ্যান অনেক শরণার্থীকে ভারতের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। বাংলাদেশ আগেই পানিবণ্টন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছিল, এখনো চাচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের অংশগ্রহণকে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। আর পানিবণ্টনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সরাসরি যুক্ত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সমস্যাটি তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ভালোভাবে সমাধান সম্ভব।

গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিবণ্টন নিয়ে ১৯৪৭ সাল থেকেই বিতর্ক চলে আসছে জানিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তান পানিবণ্টন নিয়ে একে অন্যকে সন্দেহ এবং পরস্পরের কাজে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করত। ১৯৬১ সালে ভারত পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করতে চাইলেও পাকিস্তানের ভয়ে পিছিয়ে আসে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর ১৯৭১ সালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি বৃদ্ধি পায়। ১৯৭২ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গান্ধী ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান যৌথ নদী কমিশন গঠন করেন, যার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নদী বিষয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করতে পারবে দুই দেশ। সে সময়ও বাংলাদেশের সন্দেহ ছিল যে, ভারত ক্রমাগত বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে এবং এবং উপমহাদেশে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে দখলদারিত্ব চালাবে।

দুই দেশের পানিবণ্টন বিতর্ক আরো তীব্র হয়, যখন ১৯৭৫ সালে ভারত বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধ পরিচালন শুরু করে। এরপর ১৯৭৭ সালে দুই দেশ পাঁচ বছরের জন্য গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সই করে। এ চুক্তিটিকে যুক্তরাষ্ট্র মূলত দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি হিসেবে দেখেছে। যার মাধ্যমে ভারত তার গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অংশে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের অনুমতি আদায় করতে পারে

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৬:২৪ | শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com