| রবিবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট
স্টাফ রিপোর্টার : আমরা গণতন্ত্রের মুক্তি চাই। গণতন্ত্র মুক্তি পেলে নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার হবে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতির্ষ্ঠিত হবে, সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মুক্তি পাবেন। তাই সরকারকে গণতন্ত্রের স্বার্থেই দৈনিক আমার দেশসহ বন্ধ গণমাধ্যমগুলো খুলে দিতে হবে। কিন্তু এই সরকারের পতন ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। সরকারের পতনের মাধ্যমেই বন্ধ গণমাধ্যম ও গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।
গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা চালু ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে দেশের রাজনীতিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও প্রকৌশলীসহ বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
ড্যাবের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সালামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, ইউনিভার্সিটি টিসার্চ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, দৈনিক আমার দেশ এর বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ এ্যাবের সাবেক সহ-সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, আমার দেশ এর ইউনিট চীফ বাছির জামাল, ড. মেহেদী হাসান প্রমুখ।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমানে দেশের হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সুপ্রিমকোর্টসহ সব কোর্ট মুজিব কোর্টে পরিণত হয়েছে। সব কোর্ট মুজিব কোটের পকেটে বন্দি। মুজিব কোটের পকেট ছিঁড়তে না পারলে বিচারকরা সঠিক রায় দিতে পারবেন না। তাদের বিবেক জাগ্রত হবে না।বিচারকরা কোনো আরজি শুনে বিচার করতে পারেন না। ইশারার দিকে তাকিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে বিচার চেয়েও কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, আজকে আমরা গণতন্ত্রের মুক্তি চাই, সরকারের পতন চাই। গণতন্ত্র মুক্তি হলে সাগর-রুনির বিচার হবে, মাহমুদুর রহমান মুক্তি পাবে,পাঠকরা আমার দেশ পড়তে পারবে। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে গয়েশ্বর রায় বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মোবারক সরকারের খাদেম হয়ে কাজ করছেন। তার হুজুররা ধরা পড়লে খাদেমরাও প্রস্তুত থাইকেন। তখন খালেদা জিয়াকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
গয়েশ্বর রায় বলেন, একজন গার্মেন্টস কর্মী মারা গেলে সারাদেশ উত্তাল হয়। কিন্তু সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি মারা গেলে সাংবাদিকরা একদিনের জন্যও পত্রিকা বন্ধ রাখেনি। তবে সব বিষয়ের সঙ্গে পার্থক্য না থাকলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে সাংবাদিকদের পার্থক্য রয়েছে। যদি তারা পেটের ক্ষুধার কাছে তাদের বিবেককে বিক্রি করে, তাহলে ভবিষ্যতে দম্পতি সাগর-রুনির মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দুই বছরেও এ হত্যাকান্ডের বিচার হলো না। অনেকে এসে প্রতিবাদ করেন আবার একসঙ্গে চা খান, আবার মাঝে মধ্যে কিছু পান। রাজনীতিবীদরা অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে গেছে। সাংবাদিকরাও যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে দেশ চলবে না।
শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি ও খালেদা জিয়া আন্দোলন করতে পারুক আর না পারুক আপনার পতন (শেখ হাসিনা) দ্রুত নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, তিস্তায় পানি নাই, এদিকে সরকার কোনো খেয়াল নাই। আর ভারতের স্বার্থে দেশীয় সাড়ে ৪ হাজার বিঘা জমি বিদ্যুৎ উৎপাদনে টাওয়ার বসানোর কাজে ব্যবহার করতে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ৫ জানুয়ারি নিবার্চনে সরকার বিবস্ত্র হয়েছে। উপজেলা নিবার্চনে নতুন করে বিবস্ত্র হওয়ার দরকার ছিল না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, জনগণ আজ সংবিধান মোতাবেক হাসিনার কাছে দায়বদ্ধ। তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে এ স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, উপজেলা নিবার্চনে ভোট চুরি হয়নি, ভোট ডাকাতি হয়েছে। জনগণ উপজেলা নিবার্চনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তাই আবার উপজেলা নিবার্চন দিতে হবে। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, নিবার্চন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ রক্ষার পরিবর্তে যাতে জনগণ ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারে- সেই ব্যবস্থা করেছে। সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করেছে।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষ আজ জনপ্রিয় পত্রিকা আমার দেশ পড়তে চায়। মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চায়। কিন্তু সরকার অন্যায়ভাবে দীর্ঘ ১ বছর ধরে পত্রিকাটি বন্ধ ও সম্পাদককে কারারুদ্ধ করে রেখেছে।
সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল বলেই সরকার আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে। আজ দীর্ঘ ১টি বছর ধরে অগণতিক পাঠক এই জনপ্রিয় পত্রিকাটি পড়তে পারছে না। মজলুম সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে কোনো বিচার ছাড়াই কারারুদ্ধ করে রেখেছে। তিনি অবিলম্বে আমার দেশ চালু ও সম্পাদকের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ এক বছর ধরে পত্রিকাটি বন্ধ থাকার কারণে পত্রিকার প্রায় সহ¯্রাধিক সাংবাদিক-কর্মচারির পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাদের পরিবারের দিকে তাকিয়ে সরকারের উচিত পত্রিকাটি খুলে দেয়া।
Posted ১২:৪৯ | রবিবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin