বুধবার ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মস্তিষ্কে চিপ বসিয়ে ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট

মস্তিষ্কে চিপ বসিয়ে ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা

ছবি সংগৃহীত

 

এতকাল শরীরে পেসমেকার বা কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বসিয়ে জীবনযাত্রার মানের উন্নতির চেষ্টা হয়েছে। মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসিয়ে যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের বিতর্কিত প্রযুক্তি চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

 

ইলন মাস্ক কি সবে টেলিপ্যাথি সম্ভব করেছেন? টেলিপ্যাথি নামের এক ওয়্যারলেস চিপ সফলভাবে এক মানুষের মস্তিষ্কে বসানো হয়েছে৷ মার্কিন কোটিপতি মাস্ক কমপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এমনটাই ঘোষণা করেছেন৷

 

মোটকথা মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটার সংযুক্ত করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ সে ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা শুধু চিন্তার মাধ্যমে ডিজিটাল পরিষেবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন৷

 

শুনতে খুবই ভবিষ্যতধর্মী হলেও বাস্তবে সেটা সত্যি কতটা যুগান্তকারী? তথাকথিত বিসিআই নামের ডিভাইসগুলো মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিমাপ করে সেই সংকেত ডিজিটাল কমান্ডে রূপান্তরিত করতে পারে৷

 

এমন ডিভাইস ব্যবহার করলে নীতিগতভাবে কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের সঙ্গে একেবারে নতুন ও বিরামহীন উপায়ে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়৷ মাস্কের ভাষায় ‘টেলিপ্যাথি’ ফোন বা কম্পিউটারের উপর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব করবে৷ শুধু চিন্তাশক্তির বলে সেগুলির মাধ্যমে প্রায় যে কোনো ডিভাইস চালনা করা যাবে৷

 

শুনে মনে কৌতূহল জাগছে? কিন্তু এর এক বড় ঘাটতিও রয়েছে। কারণ মাস্কের চিপ মস্তিষ্কে ইমপ্লান্ট করতে হবে। এক রোবট সেই অপারেশন করবে। মানুষের চুলের থেকে বেশি চিকন ৬৪টি নমনীয় সুতা চিপ থেকে মস্তিষ্কে যোগাযোগ স্থাপন করবে।

 

রোগগ্রস্ত বা প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য এমন অস্ত্রোপচার হয়তো উপকারও বয়ে আনতে পারে। যেমন কারো মৃগি রোগ থাকলে বিসিআই আগে থেকেই সম্ভাব্য খিঁচুনি শনাক্ত করে সেটি এড়িয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।

 

মাস্ক নিজেই অন্যান্য সম্ভাবনার উল্লেখ করেছেন। তার বার্তা অনুযায়ী, “যারা নিজেদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার করতে পারেন না, তারাই প্রাথমিক ব্যবহারকারী হবেন।”

 

ভেবে দেখুন, স্টিফেন হকিং যদি স্পিড টাইপিস্ট বা নিলামকারীর তুলনায় দ্রুত ভাবের আদানপ্রদান করতে পারতেন, তাহলে কী হতো? তিনি খুব সম্ভবত সেই প্রযুক্তি পছন্দ করতেন এবং সেটা থেকে উপকারও পেতেন।

 

চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে বিসিআই-এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। স্টিফেন হকিং এএলএস নামের দূরারোগ্য মোটর নিউরন রোগে ভুগছিলেন। এই রোগ হলে স্নায়ুর কোষগুলোর ক্ষয় হতে থাকে। রোগীরা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

 

বিসিআই হয়তো হকিং-কে চিন্তার মাধ্যমে টেক্সট টাইপ করার ক্ষমতা দিতে পারতো। কিন্তু নিউরালিংক সে রকম কিছু উদ্ভাবন করেনি। তবে অন্যান্য কিছু কোম্পানি মানুষের উপর সফলভাবে পরীক্ষা চালিয়েছে। যেমন সিনক্রোন নামে অস্ট্রেলিয়ার স্টার্ট-আপ কোম্পানি এ ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে।

অন্যান্য গবেষকরা এমনকি ব্রেন ইমপ্লান্ট ও পেশির মধ্যে নতুন সংযোগ গড়ে তুলছেন। ২০২৩ সালের মে মাসে সুইজারল্যান্ডের নিউরোরিস্টোর নামের কোম্পানি এমন এক ব্যক্তিকে আবার হাঁটার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে, যিনি দুর্ঘটনার কারণে পঙ্গু হয়ে পড়েছিলেন।

নিউরালিংক মডেলের তুলনায় এই দুই দৃষ্টান্তের একটা বড় সুবিধা রয়েছে। সেগুলোও রোগীর মাথায় ইমপ্লান্ট করতে হলেও সেই অপারেশন অনেক কম জটিল। তা সত্ত্বেও মাস্কের নিউরালিংক-কে ঘিরে কেন এত আলোড়ন চলছে?

 

সত্যি কথা বলতে গেলে উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে কোনওটিই বিসিআই উদ্ভাবন করেনি। সেই ১৯৯৮ সালেই মস্তিষ্কে প্রথম চিপ বসানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাস্কের মতো কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি সেই প্রযুক্তির উন্নতির জন্য চাপ দেননি। এমনকি জনসংযোগের ইভেন্টকেও তিনি প্রাণীর উপর পরীক্ষা চালানোর মঞ্চে পরিণত করতে দ্বিধা করেননি।

 

২০২০ সালে মাস্ক বিশ্বের সঙ্গে ‘গ্যারট্রুড’ নামের এক শুকরের পরিচয় করিয়ে দেন, যেটির মধ্যে নিউরালিংক চিপ বসানো হয়েছে। ২০২১ সালে তিনি ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘পেজার’ নামের এক বানরকে তুলে ধরেছিলেন, যে চিপ ইমপ্লান্টের মাধ্যমে ‘পং’ নামের ভিডিও গেম খেলতে পারে।

সেসব ছাড়াও ইলন মাস্ক সেই প্রযুক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে বেশ কিছু বড়সড় পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। যেমন ২০২০ সালে নিউরালিংকের এক ইভেন্টে তিনি বলেন, ‘‘আমরা স্মৃতি ধরে রেখে রিপ্লে করতে পারি। ভবিষ্যৎ বেশ অদ্ভুত হতে চলেছে।

 

মনে হচ্ছে, মাস্ক আমাদের ব্রেন হ্যাক করতে বদ্ধপরিকর। তার বিশ্বাস, বিসিআই মানুষের মধ্যে উন্নতি আনতে পারে। সেই উন্নতি শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। কিন্তু প্রশ্ন হল- আপনি কি মাস্কের কোনও কোম্পানির হাতে নিজের মস্তিষ্ক তুলে দিতে প্রস্তুত? ভেবে দেখুন, আপনার চিন্তাভাবনার জগতে উঁকি মেরে কত সংবেদনশীল তথ্য রেকর্ড করা হতে পারে! সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৮:৩৬ | বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com