রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায় গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র

শাহরিয়ার মিল্টন   |   বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায় গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র

শেরপুর : সীমান্তবর্তী শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রটি চলতি শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায় মনোরম পরিবেশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে এ বিনোদন কেন্দ্রটি দর্শনার্থীদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠে। সারাদেশ থেকে প্রতিদিন শতশত ভ্রমনপিপাষুদের আগমন ঘটে এ বিনোদন কেন্দ্রটিতে। তবে করোনাকালীন সময়ে পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় কোন পর্যটক আসেনি। এতে গত ২ বছর পর্যটন কেন্দ্রের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়েছে। চলতি বছর শীত মৌসুমে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায় আগেভাগে মনোরম পরিবেশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিনোদন কেন্দ্রটি। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নেয়া হয়েছে পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

জানা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নীলাভুমি গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলা। এ সৌন্দর্যকে ঘিরে ১৯৯৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদার উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গজনী এলাকায় গড়ে তুলেন একটি বিনোদন কেন্দ্র । মৌজার নামানুসারে কেন্দ্রটির নাম রাখা হয় গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র। ৫০ একর পাহাড়ি জমিতে এ বিনোদন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। এরপর থেকেই সারাদেশ থেকে ভ্রমন পিপাসু ও পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি। এ কেন্দ্র থেকে প্রতিবছর সরকারের ঘরে আসে বিপুল পরিমানের রাজস্ব।

এ কারনে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনাধীন গজনী অবকাশ কেন্দ্রটির প্রতি আরো মনোযোগী হয়ে উঠে জেলা প্রশাসন। শুরু হয় কেন্দ্রটির স¤প্রসারনের কাজ। নানা দিক থেকে কেন্দ্রটির স¤প্রসারন করে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে।এ বিনোদন কেন্দ্রটির চারপাশে সারি সারি শালগজারীসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজী, উচুনিচু পাহাড়, ঝর্ণা, লেক, পাহাড়ের চুরার চারপাশে ছরিয়ে ছিটিয়ে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী) স¤প্রদায়ের লোকদের আবাস। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী -পুরুষ শিশুরা তাদের নিজেদের হাতে তৈরী বাহারী রঙের পোষাক পরিধান করে থাকে । এ যেন বিনোদন কেন্দ্রের আলাদা আরো একটি আকর্ষণ।এ পাহাড়ের টিলায় দাড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালে চোখে পরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা পাহাড় ও ভারতের সীমান্তের বিএসএফ ক্যাম্প। এছাড়া এ বিনোদন কেন্দ্রে কৃত্রিম এসব কিছুর পাশাপাশি অকৃত্রিম আকর্ষণীয় আকর্ষণীয় নানা রঙের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। যা দেখলে ভ্রমন পিপাসুদের মন আনন্দে দোল খায়।

এ গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রে একবার এলে আর কিছুতেই মন ফিরে যেতে চাইবে না যে কোনো ভ্রমন পিপাসুদের। এ বিনোদন কেন্দ্রে রয়েছে, মিনি চিরিয়াখানা, মনোরম পরিবেশে নির্মাণ করা হয়েছে লেক, আর লেকে রয়েছে ভাসমান পেডেল বোর্ড, এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যেতে নির্মাণ করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু,শিশু পার্কে মিনি ট্রেনসহ নানা ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা। জিরাফ,ডাইনোসর, হাতি, বানর,বাঘ,হরিনের ভাস্কর্য, রয়েছে গারো মার ভাস্কর্য, বাঘের মুখ দিয়ে এক পাহাড়ের নিচ দিয়ে অন্য পাহাড়ে যেতে নির্মাণ করা হয়েছে পাতালপুরী রাস্তা। পানির ফোঁয়ারা, কেবলকার ওয়াচ টাওয়ার, নানা রঙ্গবেরঙ্গের ভাস্কর্য নির্মান করে মনোরম পরিবেশে সাজানো হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রটি। ঢাকা মহাখালী বাসটার্মিনাল থেকে গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রের দ‚রত্ব ২০০ কিলোমিটার বাসে আসতে সময় লাগে ৪ থেকে সাড়ে চার ঘন্টা। শেরপুর জেলা সদর থেকে বিনোদন কেন্দ্রের দ‚রত্ব ৩০ কিলোমিটার। শেরপুর থেকে বিনোদন কেন্দ্র আসতে সময় লাগে ৪০ মিনিট। ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর পারি দিয়ে নকশী বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ি পারি দেয়ার পর বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত গাড়িতে বসে মনে হবে রাস্তার দু পাশে সারিসারি শাল-গজারী বাগানের সুরঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করছেন। শেরপুর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনাধীন বিনোদন কেন্দ্রে পৌছার পর রেষ্ট হাউজে বিশ্রামের ব্যবস্থা রয়েছে ।

রেষ্ট হাউজের ভাড়া দিতে হবে ৫শ টাকা । কিন্তু নিরাপত্তা জনিত কারণে এ রেষ্ট হাউজে রাত যাপনের অনুমতি নেই দর্শনার্থীদের। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীদের রাত যাপনের সুবিধার জন্য জরুরি ভিত্তিতে রেষ্ট হাউজের ব্যবস্তা করা হবে। ইতিমধ্যেই কাজ শুরুর প্রস্তুতিও হাতে নেয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে।
বিনোদন কেন্দ্রের ইজারাদার ফরিদ আহমেদ বলেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্রটির অনেকগুলো উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানেও উন্নয়নমুলক কর্মকাÐ অব্যাহত আছে। এর পরও কিছু কাজ জরুরীভাবে করা প্রয়োজন। তন্মধ্যে কেন্দ্রের মাঝ খান দিয়ে যাতায়াতের রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী। এতে কেন্দ্রে আগত দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কেন্দ্রে প্রবেশ পথে গেইট ও টোল আদায়ের ঘর নেই। ফলে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টোল আদায়ের ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। তার দাবি কাজগুলো যেন দ্রæত করে দেন প্রশাসন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে এলজিইডির সাথে কথা হয়েছে রাস্তাটি সংস্কার করে দেয়ার জন্য। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে গেইটটি করে দেয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে। অন্যান্য সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে দ্রæতই সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, করোনাকালীন সময়ে পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় ভ্রমন পিপাসুদের আগমন ঘটেনি। এতে সরকারসহ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চলতি বছর শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়েছে। বর্তমানেও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে। আগামীতে পর্যটন কেন্দ্রটি আরো সৌন্দর্য ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হবে। এবার শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটবে বিনোদন কেন্দ্রটিতে। তারা যেন পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও আনন্দ উপভোগ করতে পারেন এটাই আমাদের ম‚ল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:৩০ | বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com