শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তত্ত্বাবধায়কের দাবি ছেড়েছে বিএনপি

  |   সোমবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট

তত্ত্বাবধায়কের দাবি ছেড়েছে বিএনপি

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর গত তিন বছরে বিএনপি কার্যত এই দাবি থেকে সরে এসেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি এখন পর্যন্ত ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন কমিশনের দাবি তুলে ধরছে। পাশাপাশি ওই কমিশনকে সহায়তা করতে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বা অন্য কোনো নেতা তত্ত্বাবধায়কের বদলে ‘সহায়ক’ সরকারের কথা বলছেন।

তবে ওই সহায়ক সরকার কেমন হবে বা হওয়া উচিত-সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপি কোনো ধারণা দেয়নি। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব দেয়ার দিন গত ১৮ নভেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এই ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন কমিশনকে সহায়তার জন্য প্রথম সহায়ক সরকারের কথা বলেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এই সহায়ক সরকার কেমন হবে তা বলেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ভবিষ্যতে যথা সময়ে জাতির সমীপে উপস্থাপন করবো।’

খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের এক মাস পর ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনায়ও বিএনপি একই কথা তুলে ধরে। সংলাপ শেষে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে সর্বাধিক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সমর্থন প্রদান প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা অসম্ভব। নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে সে উদ্দেশ্যে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রয়োজন।’

অর্থাৎ বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার একজনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার শব্দটিও উচ্চারণ করেননি। তাহলে কি বিএনপি তত্ত্বাবধায়কের দাবি থেকে সরে এসেছে?- জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়কের দাবি থেকে সরে আসা, না আসার কিছু নেই। আমরা বলছি আমাদের দরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেটা যে ফরম্যাটে হোক।’

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তো দাবি নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন যদি শক্তিশালী হয় তাহলে তো আর তত্ত্বাবধায়কের দরকার নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি যখন ব্যর্থ হয়েছে আসলে তখনই তারা এই দাবি থেকে সরে এসেছে। এই নির্বাচনটি ছিল পেশীশক্তির লড়াই। এক পক্ষ শক্তি দেখিয়ে নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছে, অন্যপক্ষ শক্তি দিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছে। সরকার সেখানে জিতেছে, আর বিএনপি হেরেছে। নির্বাচনের পরেও বিএনপি সে রকম কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, এ কারণেই তারা এখন মনে করছে নো মোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার।’

১৯৯০ সালে গণ আন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতনের পর সে সময়ের প্রধান বিচারপিত সাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হয় ষষ্ঠ পঞ্চম সংসদ নির্বাচন। সপ্তম সংসদ নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে-এ নিয়ে তৈরি হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। সে সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ দাবি তোলে বিএনপিরে অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনকারীর তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগবে। কিন্তু বিএনপি সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে।

কিন্তু তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আন্দোলনে থাকা আওয়ামী লীগ ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। আর তাদের আন্দোলনের মুখে ওই নির্বাচনের দুই সপ্তাহের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান করে পদত্যাগ করে বিএনপি।

এর পরের তিনটি সংসদ নির্বাচন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়কের বিধান যোগ করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আসে।

তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো নির্বাচন নয় – এমন ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায়। নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি তারা ডাক দেয় প্রতিহতের। কিন্তু তাদের সহিংস কর্মসূচির মধ্যেও ভোটে জিতে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

দশম সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিন ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে আবার লাগাতার অবরোধ ডাকে বিএনপি। নেতারা ঘোষণা দেন, সরকার পতনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি ঘরে ফেরে খালি হাতেই।

এই অবরোধ-হরতাল চলাকালেই ঘোষিত হয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল। আর আন্দোলন স্থগিত করে ভোটে যায় বিএনপি।

ওই বছরের জুলাইয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী এমাজউদ্দিন আহমেদ জানান, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচনে বিএনপি আপত্তি করবে না। তবে তিনি একটি জনপ্রিয় দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারেও একই কথা বলেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৬:৫৫ | সোমবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com