| সোমবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট
মহাজোট নিয়েই এবারের ভোটযুদ্ধে নেমেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু নতুন মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের বাইরে থেকে কারও স্থান হয়নি, মহাজোটের শরিকদের রাখা হয়নি সরকার গঠনে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চতুর্থবার গঠিত সরকারে এবারই প্রথম এ ঘটনা ঘটছে। এর আগের তিনবার তার মন্ত্রিসভায় জোটের শরিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব ছিল।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। ঘোষিত ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছে ২৫৯টি আসন, আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যদলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি ২২টি. ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, জাসদ ২টি, বিকল্প ধারা ২টি, তরীকত ফেডারেশন ১টি ও জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসনে জিতেছে।
মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি সংসদে এবার বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত পাঁচ বছরের মতো দ্বৈত ভূমিকায় তারা থাকবে না। মন্ত্রী হবেন না কেউ। কাজেই জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মশিউর রহমান রাঙ্গা এবং মুজিবুল হক চুন্নুর মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।তাদের বাদ পড়ে যাওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু ও জাতীয় পার্টি-জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বাদ পড়াটা রাজনৈতিক অঙ্গনে বিস্ময় তৈরি করেছে। কেন তারা বাদ পড়লেন, এ নিয়ে চলছে আলোচনা।
সোমবার মন্ত্রিসভার ২৪ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং তিন উপমন্ত্রী শপথ নেবেন। তবে আগের দিনই জানিয়ে দেওয়া হয় কে কোন মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন। মন্ত্রিসভায় শরিক দলগুলো থেকে কাউকে মন্ত্রিসভায় না রাখাটা অনেকেই আওয়ামী সভাপতির রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন।
শরিক দলের নেতাদের মন্ত্রিত্ব না দেওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলী একজন সদস্য বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সাতজন সদস্য শপথগ্রহণ নাও করতে পারেন। সেই হিসাবে সংসদে সরকারের বিভিন্ন কাজের গঠনমূলক সমালোচনা নাও হতে পারে। সেই বিবেচনায় এবার ১৪ দলীয় জোট থেকে কোনো সদস্যকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়নি।’
মহাজোটের অন্য শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও তার দলীয় প্রতীক বাইসাইকেলে ভোট করায় তিনি সরকারি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। তবে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরীকত ফেডারেশন আর বিকল্পধারা নৌকা নিয়ে ভোটে লড়ায় তারা সরকারি দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না সংসদে।
তাহলে এরা সরকারের সমালোচনা করলে সেটি কেমন হবে- এমন প্রশ্নে ওই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘সাংবিধানিক কারণে সরকারি দলের আনা বিলের বিরোধিতা তারা করতে পারবেন না। তবে তারা গঠনমূলক সমালোচনা অবশ্যই করতে পারবেন। তারা সরকারের অনেক ভুলও তার ধরিয়ে দিতে পারবেন। দশম সংসদের অধিবেশনে এটা ঘটেছে।’
১৯৭৫ সালের পরবর্তী ১৯৯৬ সালে ১২ জুনের নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠন করে। জোটের শরিক না হয়েও সেই মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, দেওয়া হয়েছিল যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব। পরে এরশাদ সমর্থন সরিয়ে নিলেও মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেননি তিনি। ওই মন্ত্রীসভায় নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বর্তমানে ঐক্যফ্রন্টের নেতা তৎকালীন জাসদের আ স ম আব্দুর রব।
২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভাতেও নিজ দল আওয়ামী লীগের বাইরে মহাজোটের দুই নেতাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়। এদের মধ্যে জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং সাম্যবাদী দলের দীলিপ বড়–য়াকে শিল্পমন্ত্রী করা হয়।
বিগত দশম জাতীয় সংসদে ১৪ দলীয় জোটের তিনজন সংসদ সদস্য মন্ত্রী হন। তারা হলেন সদ্য সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকেও মন্ত্রী করা হয় তখন। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী হন মুজিবুল হক চুন্নু, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী হন মসিউর রহমান রাঙ্গা।
Posted ১১:৩৯ | সোমবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৯
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain