| সোমবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ | প্রিন্ট
বর্তমান সরকারের আমলে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে সরকারের কোনো অবদান নেই বলে দাবি করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান। তিনি মনে করেন কৃষক, পোশাক শ্রমিক ও প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ে দেশে উন্নতি হচ্ছে।
সোমবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে দলের কট্টর সমালোচক হয়ে উঠা এই মান্না।
মান্না পরে আওয়ামী লীগের আগের আমলে নাগরিক ঐক্য নামে সংগঠন গড়ে তোলেন। তখন বিএনপির সঙ্গে এই সংগঠনের মাখামাখি ছিল।
বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন চলাকালে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে মান্নার একটি টেলিফোনালাপ ফাঁস হয়। এ সময় তিনি বিএপিকে নানা পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা-দুইটা লাশ ফেলার পরামর্শ দিয়ে সমালোচিত হন।
তবে নাগরিক ঐক্য সম্প্রতি আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা এবং আ স ম আবদুর রবের জেএসডির সঙ্গে জোট গঠন করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মান্না আজকের সংবাদ সম্মেলন করেন গত ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে তার আমলে দেশে প্রবৃদ্ধির হার, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, মেগা প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পায়নসহ অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে সাফল্য তুলে ধরেন। আর মান্না এই সংবাদ সম্মেলনে সরকার প্রধানের বক্তব্য খণ্ডন করেন।
প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সামনের সারিতেই। বর্তমান সরকারের আমলে গত বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.২৮ শতাংশ। চলতি বছর এটা আরও বেড়ে ৭.৪ হবে বলে লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।
তবে মান্নান দাবি, গত নয় বছরে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় ৬.১৭%। তিনি বলেন, ‘এই গ্রোথের পেছনে কোনো সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। তাই এই বিষয়ে কোনো সরকার কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন বলে আমরা মনে করি না।’
‘আসলে এই দেশের তিনটি শ্রেণি, কৃষক, পোশাক শ্রমিক, আর প্রবাসী শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে এই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে। বরং সরকারগুলো এতো দুর্নীতিপরায়ণ না হলে এবং ন্যূনতম সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে এই গ্রোথ ডাবল ডিজিটে যেত এই ব্যাপারে অর্থনীতিবিদরা একমত।’
বিএনপি সরকারের শেষ বছরে ২০০৫-২০০৬ সালে দেশে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ ডলার। সেটা প্রায় তিন গুণ বেড়ে এখন হয়েছে এক হাজার ৬১০ ডলার।
এ বিষয়ে মান্নার যুক্তি এমন: ‘দেশের মানুষ যেহেতু প্রাণপণ খেটে দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করছে, তাই মাথাপিছু আয় বাড়ছে।’
তবে মান্না আবার বলেন, ‘শুধুমাত্র জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, কারিগরি উন্নতি, অবকাঠামো নির্মাণ মানেই উন্নয়ন নয়।’
দারিদ্র্য বিমোচনে দেশে উল্লেখযোগ্য সাফল্য থাকলেও বিভিন্ন অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেশি কেন সে প্রশ্নও রাখেন নাগরিক ঐক্যের নেতা। দারিদ্র্য বিমোচনের হার বর্তমান সরকারের আমলে কমেছে বলেও দাবি করেন তিনি। তার দাবি, বাংলাদেশে আয় বৈষম্য বেড়েই চলছে।
বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার চাহিদার চেয়ে কম বলেও মনে করেন মান্না।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মুল্যবৃদ্ধির সমালোচনাও করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। সেই সঙ্গে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ করেন মান্না।
বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ নেয়ার সমালোচনা করে মান্না। বলেন, ‘ঋণ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে লুটপাটের ফল হচ্ছে, এই দেশ ঋণের জালে আটকে যাচ্ছে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে ‘বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা’ করলেও সরকার অর্থপাচার হতে দিচ্ছে কেন, সে প্রশ্নও রাখেন মান্না।
ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায়ও সরকারের তীব্র সমালোচনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে না পারায় সমালোচনা করে মান্না বলেন, শিক্ষাখাতে প্রত্যাশিত মান অর্জন করতে পারেনি সরকার।
দেশে ব্যাপকভাবে ধর্ষণ চলার সময় নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশে সাফল্য ম্লান হয়ে যায় বলেও দাবি করেন মান্না।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মামলার রায়ের পর সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোর করে পদত্যাগ করানোর অভিযোগও আনেন নাগরিক ঐক্যের নেতা।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায়ও সরকার অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মান্না। তার দাবি, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে যে চু্ক্তি হয়েছে, সেটা অসম হয়েছে।
পদ্মাসেতুতে অতিরিক্ত ব্যয় করা হচ্ছে দাবি করে মান্না বলেন, এর ব্যয় ৫০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে।
সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে সরকার থেকে আওয়ামী লীগের পদত্যাগ এবং ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি করেন মান্না।
নাগরিক ঐক্যের প্রধান উপদেষ্টা এসএম আকরাম, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার, কেন্দ্রীয় সদস্য মমিনুল ইসলাম, জাহেদুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১১:২৭ | সোমবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain